নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজধানীর মিরপুরে ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা (২৭) নামে এক তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ওই তরুণীর বন্ধু ও সহকর্মী জিসান (২৩) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা দুজনেই একটি অ্যানিমেল সেন্টারে কাজ করেন। জিসানের দাবি, তারা একসঙ্গে ‘কুকুরের ভ্যাকসিন পান’ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্বর্ণাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরডুবাই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত শহিদুল ইসলামের মেয়ে স্বর্ণা। তিনি বিবাহিত। তবে থাকতেন মা শেলি সুলতানের সঙ্গে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের একটি ভাড়া বাসায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিসান জানিয়েছেন, স্বর্ণা ও তিনি রাজধানীর একটি অ্যানিমেল শেল্টারে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটি বেওয়ারিশ কুকুর আশ্রয়, চিকিৎসা ও সেবা দেয়। কাজের সুবাদে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জিসান চেয়েছিলেন স্বর্ণা স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁর কাছে চলে আসুন। স্বর্ণা তাতে রাজী ছিলেন না। স্বামী ও জিসানের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়।
জিসানের দাবি, তিনিই প্রথমে কুকুরের ভ্যাকসিন পান করেন। গত রোববার রাতে ভ্যাকসিন পানের পর থেকে গতকাল সোমবার সারা দিন অসুস্থ ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর আত্মহত্যা চেষ্টার বিষয়টি স্বর্ণাকে জানান। স্বর্ণা সন্ধ্যার দিকে জিসানের শাহআলীর বাসায় যান। সেখানে গিয়ে তিনিও ভ্যাকসিন পান করেন। অসুস্থ অবস্থায় স্বর্ণাকে মিরপুরের ১২ নম্বরে তাঁদের বাসার নিচে গ্যারেজে রেখে চলে যান জিসান।
ঢামেক হাসপাতালে স্বর্ণার চাচা মো. আবু জাফর বলেন, ‘বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে স্বর্ণা। সোমবার সন্ধ্যায় জিসান স্বর্ণাকে ফোন করে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনে শাহআলী থানার পেছনে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। এরপর রাত ১০টার দিকে অসুস্থ স্বর্ণাকে নিজেই মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে বাসার গ্যারেজে রেখে চলে যান। পরে স্বর্ণার মা স্বজনদের সহযোগিতায় তাঁকে প্রথমে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আজ ভোরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
আবু জাফর অভিযোগ করেন, স্বর্ণার মুখমণ্ডলসহ শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। জিসানই তাঁকে মারধর করেছেন। মারধরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে মারধরের কারণ জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেজবা উদ্দিন বলেন, ‘মরদেহটি ঢাকা মেডিকেলে কলেজ মর্গে রয়েছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিসান নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনাটি জানার চেষ্টা চলছে। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।’
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বর্ণা ও জিসানের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হওয়ায়, দুজনেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, তবে তরুণ বেঁচে যান, ওই তরুণী মারা গেছেন। জিসান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
এ ঘটনায় শাহ আলীতে অপমৃত্যু মামলা হবে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। তবে স্বর্ণার মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, তরুণীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.