editorial-uttorbongo-protidin2023
আত্মহত্যা কিন্তু পাপ নয়!

আত্মহত্যা কিন্তু পাপ নয়!

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

আত্মহত্যা নি:সন্দেহে একটি সামাজিক ব্যাধি এবং মানষিক রোগ। আত্মহত্যা হচ্ছে কোন ব্যাক্তির দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাননাশের প্রক্রিয়া বিশেষ। মূলত ল্যাটিন ভাষা (Sui Sediur) থেকে Suicide শব্দের উৎপত্তি। Suicide এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা বা নিজেকে হত্যা করা। মনোবিজ্ঞান চিকিৎসকদের মতে আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে “মানসিক অবসাদগ্রস্থ” গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেয় আত্মহত্যার চেষ্টাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেক ধর্মমতে আত্মহত্যা বা নিজের উপর যেকোন ধরনের আত্মঘাতী হয়ে উঠাকে মহাপাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

 

 

এখন আশা যাক যারা আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যেই বলছি – আপনি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন ভালো কথা। আপনার জীবন আপনি নিতেই পারেন। এক্ষেত্রে আমার বা কারোও বলার কিছু নাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কেন আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন ? কার জন্যে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন ? সুনির্দিষ্ট কি কারনে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন ? এই প্রশ্নের  উত্তরগুলো বের করুন এবং সাদা কাগজে লিখুন। যদি দেখেন সমাধানের রাস্তা নেই তবে আপনার আশের পাশে থাকা কোন শুভাকাঙ্ক্ষীকে বলুন সমাধান করতে পারে কিনা। কারন আমরা গাড়ি কিনি সমস্যায় পড়ি বলেই গাড়ির মেকারের কাছে যাই। বিধায় প্রত্যেকটি সমাধানের জন্য পেশা ভেদে সমাধান রয়েছে। তাই তো কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ সাইকিট্রিক আবার কেউবা ফিজিউ থেরাপিস্ট। এরপরেও যদি দেখেন সমাধান হচ্ছেনা তবে আত্মহত্যা করে ফেলুন। এতে কারোও কোন অভিযোগ থাকবেনা। কিন্তু মনে রাখবেন আত্মহত্যা মহাপাপ। বিষয়টা অনেকটা এইরকম মরে গিয়েও মরবেননা আবার বাঁচতে ইচ্ছে করবে কিন্তু পারবেননা।

 

অনেক সময় দেখবেন পাড়া মহল্লায় অনেক মহিলা বা পুরুষ চিৎকার দিয়ে নিজের অভিযোগ জানাচ্ছে সকলকে। এতে পাড়া মহল্লার যারা সমাজ প্রধান কিংবা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তারা সমস্যাটা সমাধানের চেস্টা করেন। এবিষয়ে  আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশনের মতামত এই  যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ বিষয়গুলোর সামাজিকভাবে সমাধান ঘটে। এরপরেও যদি দেখেন সমাধান হচ্ছেনা তবে আত্মহত্যা করতেই পারেন। এতে কারোও কোন অভিযোগ থহাকবেনা। তবে।মনে রাখবেন আত্মহত্যা যিনি করেন  আত্মহত্যার সাথে সাথে তার অস্তিত্ব বিলীন হয় অর্থাৎ তার জন্য মানুষ শোকাহত হলেও তাকে ঘৃনাই করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে।

 

এদিকে সারাদেশে ২০২২ সালের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এই সমীক্ষার তথ্য বলছে, আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪০ জন বা ৬৪ শতাংশই স্কুল পর্যায়ের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে প্রতি মাসে আত্মহত্যা করছে ৩৭ জন শিক্ষার্থী। এখানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সকলেই শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আত্মহত্যা বিষয়ে জ্ঞান না থাকার জন্যেই শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশী আত্মহত্যায় ঝুঁকে।

 

 

এক্ষেত্রে যারা সমাজের সঙ্গে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত তারা যেমন আত্মহত্যা করতে পারে, তেমনিই  যারা সমাজ থেকে অতিমাত্রায় বিচ্ছিন্ন তারাও আত্মহত্যা করতে পারে। নিজের একান্তই ব্যক্তিগত, সমাজ, রাজনীতি ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণেই হয়তো তাদের এই আত্মহত্যার বেছে নেওয়া। ব্যক্তিগত কারণে কিংবা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানাবিধ সমস্যা নিয়েই হয়তো মূল সমস্যাটা শুরু হয়, কিন্তু এসব সমস্যা তো ছিল, আছে এবং থাকবে। পরিবার কেবল একটি প্রতিষ্ঠান, তাই তা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভেঙে যেতেই পারে,  সমাজ ও রাষ্ট্র সবার সমস্যার সমাধান নাও দিতে পারে। তাই বলে আত্মহত্যাই কি এসব সমস্যা থেকে মুক্তির পথ হতে পারে ?

 

 

আত্মহত্যার গল্প

একটা গল্প বলি শুনুন – আমার পেশা সাংবাদিকতা।সেই সাথে ক্রাইম বিট করি প্রায় সময় পুলিশ, আর্মি, র‍্যাবের সাথে কাজ করতে হয়। এক সময় একজন রেঞ্জ ডিআইজির সাথে পরিচয় হয়। এর কিছুদিনের মাথায় সম্পর্কটা পেশাগত কারনে বড় ভাই ছোট ভাইয়ে  রুপ নেয়। এর প্রায় মাস খানেক পর তিনি হঠাৎ আমাকে মোবাইল করে বলেন – আমার এসিস্ট্যান্টের কাছে একটি খামে কিছু কাগজ রেখেছি আমার কোন কারনে মৃত্যু হলে এগুলো অবশ্যই পত্রিকায় প্রকাশ করবি।আমি তো রীতিমতো  ঘাবড়ে গেলাম কোন সন্ত্রাসী তাকে মেরে ফেলবে নাকি তাহলে। এরপর আমি শান্ত গলায় বললাম বড় ভাই আমি আপনাকে ফোন দিতেই যাচ্ছিলাম আর আপনি ফোন দিলেন। জরুরী কথা ছিল সাক্ষাতে বলা প্রয়োজন। উনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন ঠিক আছে তুই আমার বাস ভবনের সামনে আয়। এরপর সাক্ষাৎ করলাম বড় ভাইয়ের সাথে এবং বললাম কি সমস্যা আপনার বলেন তো। উনি বললেন তোর প্রবলেম বল। আমি বললাম আপনারটা আগে বলুন। এরপর বললেন আমি কার জন্যে বাঁচব নলতে পারিস ? প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম তোর ভাবিকে ৩০ বছর হলো এখন শুনছি এক জুনিয়র অফিসারের সাথে তার সম্পর্ক।  আমার তো সব শেষ। বুঝতে বাকী রইলনা গন্ডগোলটা কোন জায়গায়। এরপর বললাম আচ্ছা এইটার কোন সমাধান নেই। উনি বললেন কি সমাধান? আমি বললাম এক কাজ করুন ভাবিকে নিয়ে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন।সেটা দেশ হোক কিংবা বিদেশ। উনি বললেন ও কাশ্মীর যেতে ভালবাসে। বললাম সেখানেই নিয়ে যান।  তারপর সুযোগ বুঝে আপনি যা জেনেছেন তা খুলে বলুন দেখবেন একটা সমাধান আসবে। এরপর বড় ভাই ভাবিকে নিয়ে কাস্মীর গেলেন এবং ৩য় দিন ফোন করে বললেন তোর ভাবিকে আমি ভূল বুঝেছিলাম। আসলে ঐ জুনিয়র অফিসার তোর ভাবির ক্লাসমেট ছিল। সেই সুবাধে মাঝে মধ্যে কথা বলত। কিন্তু আমাকে ভয়ে জানাতে চায়নি। এই ছিল আত্মহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা একজন মানুষের গল্প। তাহলে কি বুঝলেন আপনিও এমন কোন ভূল কারন থেকে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন না তো ? তাই আত্মহত্যা করার আগে ভেবে নিন একবার। কারন আত্মহত্যা যে কোন সময় করতে পারবেন কিন্তু ভুল করে আত্মহত্যা করলে ফিরে আসার সময় পাবেননা।

 

editorial-uttorbongo-protidin2023
আত্মহত্যা কিন্তু পাপ নয়!

🔺বিশ্বাস করুন আত্মহত্যা থেকে মুক্তির পথ আছেই

বিশ্বাস করুন বা নাই করুন মুক্তির পথ কিন্তু আছেই। সেই সাথে এটাও ভাবার কারন নেই যে, পৃথিবীতে আপনি প্রথম মানব যিনি এ সমস্যায় পড়েছেন। মনে রাখবেন হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ সমস্যা সমাধান করেই বেঁচে আছে। কিন্তু ৪র্থ প্রজন্মে এসে কিভাবে সমাধান করব ?  তাহলে ধরেই নিন আপনি ‘আত্মহত্যার জন্য উপযোগী নন ’। আত্মহত্যা করার জন্য আপনার আরোও সময় নেয়া প্রয়োজন। আপনি তো সারাদিন কম বেশী ইন্টারনেটে যাতায়াত করেই থাকেন । তাই এবার ইন্টারনেটে হট ওয়েবসাইটে না ঘুরে এক কাজ করুন আপনার সমস্যাটি গুগল সার্চ, বিং সার্চ কিংবা ইয়াহু সার্চে গিয়ে খোঁজার চেস্টা করুন। দেখবেন কারোও না কারোও সাথে আপনার সমস্যার মিল রয়েছে এবং সমাধানও রয়েছে সেখানে। এরপরেও সমাধান না পেলে জীবনমুখী বই পড়ুন। যেমন ডেল কার্নেগী, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, ইবনে বতুতা, ঈমাম বোখারী, টলস্টয় কিংবা হূমায়ন আহমেদের মত লেখকদের লেখা বইগুলো পড়তে পারেন। এরপরেও সমাধান না পেলে শিক্ষনীয় বাংলা কিংবা হিন্দি সিনেমা দেখুন। এরপরেও সমাধান না পেলে সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে বলুন আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন।  এরপরেও বন্ধু সমাধান না দিতে পারলে একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে পারেন। আমি ১০০% গ্যারেন্টি দিয়ে বলতে পারি আপনি সমাধান পেয়ে যাবেন। কারন আত্মহত্যা করার আগে এটাও ভেবে নেবেন – সৃষ্টিকর্তা আপনাকে অহেতুক সৃষ্টি করেননি। হ্যাঁ আপনি আইজ্যাক নিউটন না হতে পারেন কিংবা বঙ্গবন্ধু না হতে পারেন কিন্তু একজন মানুষের মত মানুষ তো হতেই পারেন। তাই নিজেকে ছোট ভাববেননা নিজে নিজেকে শ্রদ্ধা করুন, ভালবাসুন, আত্মত্যাগ দিয়ে তৃপ্ত হোন আত্মহনন করে নয়। শুধু মনে রাখবেন ‘ আত্মহত্যা পাপ নয় মহাপাপ’।  

 

 

এম.এ.হাবীব জুয়েল

প্রধান সম্পাদক : উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন

সভাপতি : রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাব

ব্যুরো প্রধান : দৈনিক আমার বার্তা 

এক্টিভিস্ট : Amnesty International 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.