Abul_Bashar_Suzjon_
রাজশাহী তানোর উপজেলা যুবলীগের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নেতা আবুল বাশার সুজন

রাজশাহী তানোর উপজেলার মাল্টি ট্যালেন্টেড পৌর যুবলীগ নেতা সুজনের উত্থান যেভাবে

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন


নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনির হাত ধরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সারাদেশে যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। 

 

 

তিল তিল করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগকে গড়ে তুলেছিলেন এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ সময় পরে তারই সুযোগ্য সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ বিন্দু বিন্দু প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংগঠনের হাল ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর তাই তো হাইব্রিড আওয়ামী লীগের কিছু পথভ্রষ্ট নেতার চক্ষুশূল হয়ে যাচ্ছেন সর্বকালের  সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ। 

 

 

 

তবে গুগলে সার্চ দিলেই চোখে যা পড়ে এতে সাধারন মানুষ তো বটেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত বাকরুদ্ধ হয়ে যান। নিম্নে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের আমলানামার সার্চ রেজাল্ট তুলে ধরা হল – 

সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাকে মারধর – দৈনিক প্রথম আলো 

রাজশাহীতে সম্মেলনের আগে প্রকাশ্যে যুবলীগের কোন্দল -দৈনিক প্রথম আলো

রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও সেতুমন্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহী যুবলীগ নেতা হুদার কুরূচিপূর্ন স্ট্যাটাস : যমুনা টেলিভিশন 

রাজশাহীর পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এমদাদুলের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা – দৈনিক সমকাল

জামায়াতকর্মীর পক্ষ নিয়ে যুবলীগ নেতা হুদার গুলি ছড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মীর উপর – দৈনিক যুগান্তর 

রাজশাহীতে ফেইসবুকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর আপত্তিকর ছবি – দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনউজ্জামান সুমন পর্ণোগ্রাফি মামলায় কারাগারে- দৈনিক মানবজমিন

টিনশেডের ভাড়া বাড়ি থেকে কোটিপতি যুবলীগ নেতা আশরাফ – দৈনিক যুগান্তর 

রাজশাহীত মোহনপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগ – দৈনিক কালবেলা

২০১৮ সালের গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগেই নৌকা ‘দখল’ করেছেন এক যুবলীগ নেতা – দৈনিক যুগান্তর 

রাজশাহীতে যুবলীগ নেতার ওপর বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতার হামলা – সিল্কসিটি নিউজ 

সাবেক ইউপি সদস্য ও  মুক্তিযোদ্ধার ভাইকে জিম্মি করে ফসলি জমি দখলে নিয়ে অবৈধভাবে পুকুর খনন করলেন জেলা যুবলীগের এমদাদ 

যুবলীগ নেতা অস্ত্রের মুখে দখল করলেন মার্কেটের জমি

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড (পশ্চিম) সভাপতি মিলন শেখের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা

রাজশাহীতে আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত- দৈনিক মানবজমিন

রাজশাহীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবলীগ নেতা নিহত – দৈনিক জনকণ্ঠ 

 

কিন্তু রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের কালিমায় বিব্রত সাবেক নেতৃবৃন্দসহ বর্তমান আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। 

 

সেরামই একজন রাজশাহী জেলা যুবলীগের নেতার নাম আবুল বাশার সুজন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। কখনো সমাজসেবী তো কখনো এমপির ক্যাডার আবার কখনো হোটেল ব্যবসায়ী আবার কখনো দেহ ব্যবসায়ী। ফেসবুকে ভক্তদের দিয়ে ষ্টেটাস দেয়ান। তবে আজকাল বিতর্কিত সুজনের মত রাজনৈতিক নেতারা ফেসবুক ভেরিফাইডও করে ফেলেছেন রাতারাতি। ভাবটা যেন এমন ফেসবুক ভেরিফাই করলেই মার্ক জাকারবার্গ তার স্বভাব চরিত্ত্রের সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। এক কথায় ধোয়া তুলসি পাতা। 

 

Abul_Bashar_Suzjon_
রাজশাহী তানোর উপজেলা পৌর যুবলীগের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নেতা আবুল বাশার সুজন

 

জানা দরকার, কে এই যুবলীগ নেতা আবুল বাশার সুজন? 

 

রাজশাহী তানোর উপজেলা পৌর যুবলীগের বিতর্কিত কমিটির বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুজন । রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের পদে থাকা এই নেতা স্থানীয় সাংসদ ফারুক চৌধুরীর মন জয় করে তানোর পৌর নির্বাচনেও মেয়র পদে দলের মনোনয়নও চেয়েছিলেন। তানোরে পৌর মেয়র হতে তিনি সেখানকার ভোটারও হয়েছেন।

 

সত্যিকার অর্থে  যুবলীগ কর্মী সুজন কি দেহ ব্যবসায়ী ?

রাজনীতি, ব্যবসা, হাট-ঘাট সকল ব্যবসার পর আবুল বাশার সুজন খুলেছেন  আবাসিক হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল। হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন গনকপাড়া এলাকায় অবস্থিত। সেখানেও রাত দিন সমানে চালাচ্ছেন মাদক ও দেহ ব্যবসার কারবার। এরপর পেশাদার যৌনকর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নেটওয়ার্ক। এ যৌনকর্মীদের অনেকেই জিম্মি হয়ে রয়েছেন সুজনের কাছে। অনৈতিক এ কাজ থেকে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করেও পারেননি অনেকে।

 

তবে সকাল ১১ টার পর থেকে স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরা হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনালে ঘন্টা চুক্তিতে উঠে থাকেন বলে জানিয়াছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খদ্দের। ( তথ্য চিত্র সংরক্ষিত)

 

অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা বাসা ভাড়া নিয়েও দেহব্যবসা ও মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন এই সুজন। নির্বিঘ্নে কাজ করতে গড়ে তুলেছেন পোষা গুণ্ডা বাহিনী। আগন্তুক না বুঝে হোটেলে কিংবা এদের বাসায় উঠলেই জিম্মি করে আদায়ও করা হয় অর্থ। তবে মানসম্মানের ভয়ে ঘটনার শিকার কেউই অভিযোগ দেননি থানায়। তবে আরেক ভাষায় বলতে গেলে যুবলীগের এই নেতার কারনে অন্যান্য নেতারাও আনোগোনা শুরু করে দিয়েছন। 

 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগের সৎ ও  আদর্শিক নেতা ও কর্মী জানিয়েছেন – যারা চরিত্র বিলীন করতে চায়, তারা যেন রাজশাহী হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনালে যায়। তাছাড়া অনেক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী এই হোটেলে যেয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে ছবি তুলে দাম্ভিকতার সাথে পোস্টও করেছেন। বিষয়টা বলতে পারেন – মহাপূন্য স্থানে ছবি তুলে তিনি ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন। আপনারা ফেসবুকে খুঁজতে থাকুন কোন কোন নেতা কর্মী এই হোটেলের ছবি পোস্ট করেছেন তবেই সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।

 

এদিকে রাজশাহী হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনালের নামে শেয়ার হোল্ডার করার কথা হলে রাজশাহী মহানগরীর অনেক নীরিহ ব্যবসায়ী, পেশাজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ তুলে নিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন পত্রিকার হাতে তার তথ্য প্রমানও রয়েছে। আর এই হোটেল শুরু করার জন্য যারা অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের অনেককেই আবুল বাশার সুজন এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।

 

 

Hotel_Grand_International_Rajshahi
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন গনকপাড়া এলাকায় অবস্থিত হোটেল গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল

সুজনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড 

রাজশাহী তানোর এলাকার একাধিক সাধারন মানুষ জানিয়েছেন ২ দশক পূর্বেও যুবলীগ নেতা আবুল বাশার সুজনদের পরিবারের এত সম্পত্তি ছিলোনা। তার বাবা আব্দুস সামাদ একজন কৃষক ছিলেন মাত্র। কিন্তু গত ১২ বছরে কৃষক সামাদ হয়ে গেছেন হাজ্বী সামাদ বা ‘আলহাজ্ব সামাদ’। হাজ্বী সামাদ জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সাথে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তবে এখন পুরো দস্তুর আওয়ামীগার।

 

অনুসন্ধানে এলাকাবাসীর একাংশ জানায় – রাজশাহী তানোর – গোদাগাড়ীর সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এমপির  বাড়িতে স্থান করে নেন কৃষক সামাদ। সাংসদের বাড়ির বাজার হাট করে দিতেন নিয়মিত। সেই সুবাধেই কৃষক সামাদ এখন হাজ্বী সামাদ। এক কথায় বলতে গেলে ঘুরে গেছে ভাগ্যের চাকা। হাজ্বী সামাদ এখন প্রায় ৪ থেকে ৫টি হাট ঘাট পরিচালনা করছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের অভিমত প্রায় ২০ টি হাটের মধ্যে হাজ্বী সামাদ পরিবার সবগুলোরই নিয়ন্ত্রণ পেতে মরিয়া। 

 

 

তবে কি সুজনের হাতে রাজশাহী জেলা যুবলীগের ভবিষ্যত? 

 

ধরা পড়লেই বহিষ্কার’ ও ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’- এ দু’টি বাক্য এখন সরকারের উচ্চ মহল থেকে জানিয়ে দিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ । কথা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বৈকি। তবে ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ❝  Prevention is better then cure ❞ । প্রবাদের মর্ম মতে দুর্ঘটনা-অঘটন ঘটলেই মুখ রক্ষার জন্য ‘বহিষ্কার’ বা ‘ছাড় না দেয়ার’ হুমকি দেয়ার চেয়ে ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটতে না দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই বেশি শ্রেয়। অর্থাৎ এমন কাউকে ক্ষমতায় কিংবা উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করা উচিৎ নয় যার দ্বারা সমাজের আপামর জনসাধারণের জান,মাল কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের হানি ঘটে। এই ধরনের ব্যাক্তি সমাজের প্রতিটি স্থানে থাকলেও এদের মেয়াদকাল ২/৪ বছরের বেশী হয়না। 

 

এদিকে আদর্শিক নেতা কর্মীরা বলেছেন এসকল পথভ্রস্ট নেতা কর্মীদের বিচারের আওতা আনা উচিত। কিন্তু প্রমান সাপেক্ষে কোন দলীয় কর্মীর বিচার প্রক্রিয়া সময় ও শর্ত সাপেক্ষ বিষয়।  তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের মত দলে যখন আবুল বাশার সুজনের মত দলীয় কর্মীর আবির্ভাব ঘটে তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় রাজনীতির রনাঙ্গন।

 

যা বলছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ 

Sheikh_Fazle_Shams_Parash
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান –  শুধু রাজশাহী নয় সারা দেশে  যুবলীগের নেতা কর্মীদের অনেক  পরিবর্তন এসেছে । তবে আমি তাদের বলেছি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, রংবাজি,  বন্ধ করতে হবে। মানুষকে নিপীড়ন করা যাবে না। আর যারা রাস্ট্র বিরোধী কিংবা সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে থাকবে তাঁদের যুবলীগে ঠাঁই নাই।

 

আপনারা সংবাদকর্মী ও দেশের দর্পন। আপনারাই তো আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে যুবলীগের মান উন্নয়ন, সাংগাঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি নিয়ে লেখবেন। তবে যুবলীগের কোন কর্মী যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তবে সেটিও লেখবেন। ধন্যবাদ।

 

 

অন্যদিকে,  সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য আবুল বাশার সুজনকে 01775936564 ও 01645417600  নাম্বারে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

 

 

পরিশেষে এতটুকুই বলা যায় রাজশাহী তানোর উপজেলা যুবলীগের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নেতা আবুল বাশার সুজনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থামাবে কে এটাই এখন রাজশাহীবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন?

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.