জানেন কি রাজশাহী ভদ্রার অতিথি হোটেল আমাদের কি খাওয়াচ্ছে? 

জানেন কি রাজশাহী ভদ্রার অতিথি হোটেল আমাদের কি খাওয়াচ্ছে? 

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

রমজান আলী, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: শিক্ষা ও রেশম নগরী নামে পরিচিত বিভাগীয় শহর রাজশাহী । অনেকেই রাজশাহীর পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দেন ক্লিন সিটি। রাজশাহীর এই সুনাম অর্জনের প্রশংসার দাবিদার খোদ এখানকার মানুষ। দিনে দিনে সভ্যতা বাড়তে থাকায় রাজশাহী মহানগরীতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান, হোটেল এবং ফাষ্টফুডের দোকান। অধিকাংশ খাবার হোটেলে খোলা এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সব প্রকার খাবার। এছাড়া খোলা জায়গায় ধুলাবালিতে রাখা হচ্ছে পরোটা, কাবাব, চিকেনচাপসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সমগ্রী। রাজশাহী মহানগরীসহ গুরুত্বপূর্ণস্থানে বেশিরভাগ খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্টগুলোর বাইরের দৃশ্য চকচকে থাকলেও খাবার তৈরির জায়গা দেখলে সচেতন মানুষ আঁতকে উঠবেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে চাকচিক্য পরিবেশে। এদিকে ছোট হোটেলগুলোর চেয়ে অনিয়ম চলছে বেশি বড় বড়  রেস্টুরেন্টগুলোতে।

 

নামীদামী রেস্টুরেন্টগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও ভেতরে রান্না ঘরের অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া খাবারে মেশানো হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক নানা রাসায়নিক। খাবারের মান ও পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ছোট ছোট হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হলেও বড় হোটেলগুলো এর আওতায় আসছে না বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই।

 

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভদ্রায় অবস্থিত অথিথি হোটেলে  নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরী হচ্ছে। বাবুর্চি ও রান্নার কাজে সহযোগীদের গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে খাবারে, কাটাকুটি চলছে স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে। মহানগরীর এই অতিথি হোটেলের রান্নাঘরে এরকম ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। রান্না করার অংশে সাধারণত গ্রাহকদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও অতিথি হোটেলের ম্যানেজার ও হোটেল ওয়েটারদের দূর্ব্যব্যবহারে অতিষ্ঠ সাধারন গ্রাহকরা। 

 

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের  অধ্যাপক ডাঃ হাফিজুর রহমান বলছেন, শুধু রাজশাহীর অতিথি হোটেল নয় আরোও কিছু হোটেলে এই অবস্থা বিরাজমান। বরং এতে করে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-বালাই। তারপরেও থেমে নেই হোটেলগুলোতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরীসহ পরিবেশনের কার্যক্রম। বর্তমানে 

রাজশাহী মহানগরীতে ফুড পয়জনিং (food poisoning) এ রূগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। 

 

রাজশাহী ভদ্রায় অতিথি হোটেলে গেলে কথা হয় উক্ত হোটেলের একজন নিয়মিত গ্রাহক রিপা চৌধুরীর সাথে।তিনি একটি এনজিওতে  কর্মরত। তিনি জানান – রাজশাহী ভদ্রার অতিথি হোটেলটি খুব স্বল্প সময়ে সুনাম অর্জন করলেও হোটেলটি বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকটা বাধ্য হয়েই এই হোটেলে খাবার খাচ্ছি। সামনে মাস থেকে অন্য হোটেলে খাব।

 

 

Do you know what Rajshahi Bhadra guest hotel is feeding us?
জানেন কি রাজশাহী ভদ্রার অতিথি হোটেল আমাদের কি খাওয়াচ্ছে?

আরএস ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ফরহাদ বলেন – আগে প্রায়ই অতিথি হোটেলে খেতাম কিন্তু এখনকার পরিবেশ এতই খারাপ যা দেখতেই পাচ্ছেন চোখের সামনে।বলার কিছুই নেই।

 

এ সময় অতিথি হোটেলের বাহিরের পরিবেশে সুস্বাদু খিচুড়ি ও সিঙ্গাড়া তৈরির দৃশ্য চোখে পড়ে। এসময় দেখা যায় হোটেলের কর্মচারীরা  হোটেলের বাহিরে সরকারী রাস্তা দখল করে ড্রেনের পাশে রান্নাবান্নার কাজ চালাচ্ছেন।যা রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর ও অরুচিকর। 

 

এবার এই অতিথি হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় এসি চলছেনা তবুও এসির পানি টেবিলের উপরে পড়ছে। ফ্রিজের উপরে দেখা যায় বিভিন্ন ময়লার স্তূপ। এছাড়াও খাবার টেবিলের নিচে দেখা যায় আটার বস্তা, ময়দার বস্তাসহ ডাস্টবিন একত্রেই রাখা আছে। প্লাস্টিকের পানির বোতলগুলোতে এতটাই আয়রন পড়ে আছে যে, লাল প্লাস্টিকের পানির বোতল কালো রঙ ধারন করেছে। অর্থাৎ স্পস্ট বোঝাই যাচ্ছে অনেকদিন যাবৎ এই পানির বোতলগুলো পরিস্কার করা হয়না।

 

 

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে এই হোটেলের বিরুদ্ধে গলাকাটা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে ভোক্তাদের কাছ থেকে । ভোক্তারা জানান, অন্য হোটেলের তুলনায় চড়া দামে খাবার বিক্রি করছে অতিথি হোটেল কর্তৃপক্ষ। দামের তুলনায় খাবারের গুণগত মান অনেকটাই নিম্ন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই। হোটেলটি মানছে না সরকারি বিধিমালা। বিএসটিআই অধ্যাদেশ-১৯৮৫ (সংশোধনী ২০০৩) এখন তাদের কাছে একেবারেই উপেক্ষিত। অধিকাংশ মালিকই জানে না বাংলাদেশ পিউর ফুড অধ্যাদেশ-১৯৫৯ (সংশোধনী ২০০৫) সম্পর্কে। অথচ এ আইনের ১৪ (বি) ধারায় বলা আছে, উৎপাদিত খাবার মান সম্মত না হলে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ম ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১ বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। 

 

এ আইনে আরও বলা আছে হোটেলগুলোর রান্নাঘর হবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, খাবার থাকবে ডাকা, বাবুর্চিদের নিদিষ্ট ইউনিফর্ম থাকবে, হাতের নখ থাকবে ছোট ইত্যাদি। কিন্তু তার কয়েকটি নিয়ম ছাড়াই বাকিগুলো কোন হোটেলই মানছে না।যেন সবই তাদের কাছে অধরা।

 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী  বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ  উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে বলেন – মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে সচেতন ও সরকারি নিয়ম মানার জন্য তাগিদ দিয়েছি। তবে যারা অমান্য করছে তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করছি। বর্তমানেও অতিথি হোটেলে এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.