সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি জঙ্গিদের নিয়ে এখন বড় দুশ্চিন্তা:উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন::সিরিয়ায় আইএসের চূড়ান্ত পরাজয়ের পর বিদেশি যোদ্ধা (ফরেন টেররিস্ট ফাইটার—এফটিএফ) বা জঙ্গিদের নিয়ে অনেক দেশই উদ্বেগে রয়েছে। একইভাবে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া বাংলাদেশি জঙ্গিরাও এখানে দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব জঙ্গি প্রচলিত বা অপ্রচলিত যেকোনো পথে দেশে ফেরার চেষ্টা করবে। তারা ফিরতে পারলে দেশে আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকা জঙ্গি তৎপরতাকে বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া জঙ্গির সংখ্যা ৪০ জনের মতো। এর বাইরে নানা দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শতাধিক পুরুষ ও নারী সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এসব বাংলাদেশির মধ্যে অনেকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম সুজন আইএসের শীর্ষস্থানীয় ১০ জনের একজন ছিলেন। আর এই সাইফুলের পরামর্শেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী ঢাকায় আসেন। তিনি এ দেশের উগ্রপন্থীদের একটা অংশকে সংগঠিত করে আইএসপন্থী নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। এরপর হোলি আর্টিজানের মতো ভয়ংকর জঙ্গি হামলা ছাড়াও দেশে বেশ কিছু হত্যাযজ্ঞ চালান।

জঙ্গি দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, সরাসরি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গিদের নাম-পরিচয় ও সংখ্যা মোটামুটি জানা আছে। তবে তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকে আইএসের হয়ে লড়তে গিয়েছিলেন সিরিয়ায়। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিরিয়ায় গেছেন যুক্তরাজ্য থেকে। তাঁদের সম্পর্কে এখানকার গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে তাঁদের নিয়েও ঝুঁকি আছে, তাঁরা এ দেশে প্রবেশ বা যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করতে পারেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার মতো দেশ থেকেও কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ইরাক ও সিরিয়া গেছেন কি না, এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। অন্যান্য দেশ বা প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ যদি গিয়ে থাকেন, তাঁরা যদি প্রবাসী শ্রমিক পরিচয়ে ফিরে আসেন, তবে তাঁদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ইরাক থেকে এক বাংলাদেশি শ্রমিক আইএসেযোগ দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়ে ইরাকের কারাগারে ছিলেন। সেখানে তাঁকে অন্য জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ করে। পরে ওই বাংলাদেশি শ্রমিক মুক্তি পেয়ে আইএসে যোগ দেন। গত মে মাসে ঢাকায় মুতাজ আবদুল মজিদ কফিলুদ্দিন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সৌদি আরবে জন্ম নেওয়া এই যুবক সিরিয়ায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মুতাজকে মূলত তুরস্কের পুলিশ আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তবে মুতাজের বাইরে এমন আর কেউ দেশে ফিরেছেন কি না, সেটা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় আইএস জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে সে দেশের পুলিশ মালয় ও ইন্দোনেশীয়দের সঙ্গে এক বাংলাদেশিকেও গ্রেপ্তার করে। ওই দেশের পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বাংলাদেশি ওই যুবক জাহাজের টেকনিশিয়ান ছিলেন।

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বাংলাদেশে এখনো জঙ্গি হামলার ঝুঁকি রয়ে গেছে। ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করলেও এখনো দেশটি জঙ্গিদের কোনো নজরদারির তালিকা তৈরি করেনি।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার দাবি, এটা মোটেই ঠিক নয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরেন ফাইটার যারা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে, তাদের অলমোস্ট হিসাব-নিকাশ আমাদের কাছে আছে। কিন্তু লন্ডন থেকে যারা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে যারা গিয়েছে, সৌদি আরব থেকে যারা গিয়েছে; এদের অনেকের তালিকা আমাদের কাছে না-ও থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নজরদারি আছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যথেষ্ট সজাগ আছে।’


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.