women-suicide-increase-in-abroad
প্রবাসে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের আত্মহত্যা বাড়ছে

প্রবাসে বাংলাদেশ নারী শ্রমিকের আত্মহত্যা বাড়ছে

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::- মৌসুমী আক্তার পরিবারে সুখ ফেরাতে জর্ডানে পাড়ি জমান ২০১৭ সালে। কাজ নেন গৃহকর্মীর। দেশে অভাবের মুখে পড়া তার পরিবারকে ভালো রাখাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরেছে তার লাশ। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল স্ট্রোক করে মারা গেছেন মৌসুমী। পরিবার বলছে, ২০ বছরের কোনো তরুণী আত্মহত্যা করতে পারেন না। নির্যাতিত হয়ে বা অন্য যেকোন কারণে মারা গেছেন মৌসুমী।

 

 

 

এনিয়ে গেল বছর আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে সংবাদটি প্রকাশ হলে বেশ হইচই হয়।এরপর বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি। মৌসুমীর মতো অনেক তরুণীর লাশ বিদেশ থেকে দেশে আসছে। বেশির ভাগ তরুণীর লাশের সঙ্গে দেয়া কাগজে লেখা থাকে স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু আদতে ওই মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে থাকছে নানা কাহিনী। ব্র্যাকের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রবাসে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের আত্মহত্যার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। গেল তিন বছরে ৪৪ জন নারী শ্রমিক বিদেশে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া দূর্ঘটনায় ৫০ জন, স্ট্রোকে ১১০ জন, স্বাভাবিক মৃত্যু ৫৯ জনের এবং অন্যান্য কারনে ৩১ জন মারা গেছেন। আত্মহত্যা করা নারী শ্রমিকদের মধ্যে ২০১৬ সালে এক জন, ২০১৭ সালে ১২ জনের, ২০১৮ সালে ২৩ জনের এবং ২০১৯ সালে বর্তমান সময় পর্যন্ত আট জনের লাশ দেশে এসেছে। সব মিলিয়ে গেল তিন বছরে ২৯৪ জন নারী শ্রমিকের লাশ বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছে। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৭৯৩ জন নারী শ্রমিক প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেছেন।

 

 

সম্প্রতি সরকার থেকে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। ব্র্যাকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৫৭ জন, ২০১৭ সালে ১০২ জন, ২০১৮ সালে ১১২ জন এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ জন নারী শ্রমিকের লাশ বিদেশ থেকে দেশে এসেছে। এর মধ্যে গেল তিন বছরে সৌদি আরব থেকে ১১২ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৬ জন, ওমান থেকে ৩৪ জন, লেবানন থেকে ৪২ জন ও জর্ডান থেকে ৬২ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। এদিকে প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে প্রবাসী মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। যদিও এটি  দেশে ফেরত আসা বৈধ শ্রমিকের মরদেহের হিসাব।

 

 

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। এদের অধিকাংশেরই বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। অভিবাসন ব্যয়ের তুলনায় কম আয়ের কারণে মানসিক চাপ ও দীর্ঘদিন স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে একাকিত্বই প্রবাসী শ্রমিকদের স্ট্রোক ও হৃদরোগের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি দৈনিক ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম, অপর্যাপ্ত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকার কারণেও রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে বিদেশ থেকে তিন হাজার ৩৩৫ ব্যক্তির লাশ দেশে আসে। এর মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুই হাজার ৮৭২ জন, চট্টগ্রাম শাহ আমানতে ৪১১ জন এবং সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে ৫২টি লাশ আসে। একইভাবে ২০১৫ সালে তিন হাজার ৩০৭ জনের লাশ আসে।

 

 

এর মধ্যে শাহজালালে দুই হাজার ৮৩১, শাহ আমানতে ৪০৭ এবং ওসমানী বিমানবন্দরে ৬৯ জনের লাশ আসে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৪৮১ জনে। এর মধ্যে শাহজালালে লাশ আসে দুই হাজার ৯৮৫ জনের। শাহ আমানতে আসে ৪২১ জন আর ওসমানী বিমানবন্দরে আসে ৭৫ হতভাগ্যের লাশ। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৮৭। ২০১৮ সালে মোট ৩ হাজার ৭৯৩ বাংলাদেশী কর্মীর মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে স্ট্রোক ও হৃদরোগ।

 

 

 

বেশির ভাগ মরদেহই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে সৌদি আরব থেকে। সৌদি আরবের পর বেশি মরদেহ এসেছে মালয়েশিয়া থেকে।




 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.