ষ্টাফ রিপোর্টার || উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন একের পর এক লাশ পড়ছিল ঠিক তখনই রাজশাহী মহানগরীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিজন পল্লীর সাধারণ সম্পাদক শ্রী জনি কুমার কোন ভূমিকা পালন করেছিলেন ?
কে এই শ্রী জনি কুমার ? সরকারী চাকরি বাদ দিয়ে কার সাথে ২৪ ঘন্টা থাকতেন ? রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় কত কোটি টাকার সম্পদ করেছেন সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ?
আরোও একটি বিষয় উল্লেক্ষ্য যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিওনের যদি ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ থাকে তবে রাসিক মেয়রের আস্থা ভাজন সুইপার কলোনির নেতা শ্রী জনি কুমারের কত সম্পদ থাকতে পারে তা সহজে অনুমান করে নিতে পারেন।
দীর্ঘ ৯ দিন যাবৎ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় প্রমান সাপেক্ষে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আরো চঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মীরাও। আসুন উপরের সকল প্রশ্নের উত্তর এবার দেখে নেওয়া যাক এক নজরে - প্রকৃত অর্থে সুইপার কলোনির নেতা শ্রী জনি কুমারের আদি থেকে অন্ত।
▶ যেভাবে শ্রী জনি কুমারের উত্থান
২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণীর পদে যোগদান করেন শ্রী জনি কুমার। ঐ সময় জনি কুমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযয়ে বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকজন নিয়ে হাজির হতেন। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন এরপর কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দেন শ্রী জনি কুমার। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন শ্রী জনী কুমার। তৎকালীন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে যান ফুলের তোড়া নিয়ে দেখা করতে। এরপর থেকে রাশেদ মিয়ার লিটনের আস্থাভাজন হয়ে যান শ্রী জনি কুমার।
এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হরিজন পল্লীর এই নেতাকে। সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বাসায় প্রতিদিন বাজার দিয়ে যেতেন শ্রী জনি কুমার। এছাড়াও এভাবে আস্তে আস্তে সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের এতটাই আস্থাভাজন হন যে সাবেক মেয়র লিটন প্রতিটি তাকেই সাথে রাখতেন। এই সুবাদে হরিজন পল্লীর এই নেতার স্ত্রী শ্রীমতি রাখিও আওয়ামী লীগে যোগদান করে সাবেক মেয়র পত্নী রেনির আস্থাভাজন হয়ে যান।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জনি জামাত-বিএনপি কর্মীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে একান্তই গোপনে দিয়ে আসতেন তৎকালীন সময়ের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানার ওসি ও ডিসিদের কাছে। পরবর্তীতে ওই তালিকা অনুযায়ী পুলিশ মামলা দিতো বিএনপি, জামাত ও শিবিরের কর্মীদের।
শ্রী জনি কুমারের রাজনৈতিক তালিকার মামলার শিকার বিএনপির সাত্তার নামের এক কর্মী জানান - আমি বিএনপি সমর্থন করতাম কিন্তু আমার নামে কোন মামলা ছিলোনা কিন্তু তারপরেও মতিহার থানা পুলিশ আমাকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে রাজনৈতিক মামলা দেয়। ঐ দিন রাতে থানার একজন কন্সটেবল জানায় - মেয়রের খাশ লোক ও হরিজন পল্লির সাধারন সম্পাদক শ্রী জনি কুমার গতকাল যে লিস্ট দিয়ে গেছে সেই অনুযায়ী আসামীদের ধরা হচ্ছে।
▶যে পরিমান সম্পদ সুইপার নেতা জনির
এদিকে অনুসন্ধানে আরোও জানা যায় শ্রী জনি কুমার এতটাই চালাক যে, সে নিজের নাম বাদ দিয়ে মা, শ্যালক ও ভাইদের নাম দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। অনুসন্ধান অনুযায়ী - রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজারে ২ টা ফ্লাট, মুরারিপুরে আনু ৩ কাঠা জমি, কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ৬ কাঠা, মতিহার চৌদ্দপাই বিহাসের পশ্চিমে মসজিদের সাথে দেড় কাঠা, ৩০ নং ওয়ার্ড মোহনপুরে আড়াই কাঠা, মায়ের নামে ৯ কাঠা ও নিজের নামে ২ কাঠা সম্পদ রয়েছে। এছাড়াও তার আনুমানিক ৪ টি ব্যাংকের যে লেনদেন রয়েছে তা আয় সঙ্গত নয়। তবে স্থানীয়দের দাবি বাংলাদেশ দূর্নীতি দমন কমিশন যদি তার অনুসন্ধান চালায় তবে তার প্রকৃতপক্ষে কত অর্থ ব্যাংকে রয়েছে এবং আরোও কি পরিমান সম্পদের মালিক সে তা অচিরেই বের হয়ে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী জানায়, রাসিক মেয়রের স্নেহভাজন হওয়ার সুবাধে জনি যে চাকরি বানিজ্য করেছেন এবং সেখান থেকেই তিনি ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় রাবির সাবেক ভিসির অফিসে ঢুকতে তার কোন অনুমতি নেয়া লাগতোনা। এমনকি অনেক সময় রাবির সাবেক ভিসিও তার দেয়া মতামতের বাইরে যেতেননা।
▶ ছাত্র আন্দোলনে জনির ভূমিকা
সুইপার পল্লীর এই নেতার চরিত্র প্রকাশ পায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। সুইপার নেতা হওয়ার সুবাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে বিচরণ করতেন জনি। সেই সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের তথ্য ও নাম গোপনে সরবরাহ করতেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে এবং পুলিশের কাছে । সেই অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতারা হামলা চালাত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের উপর।
[caption id="attachment_117478" align="alignright" width="1200"] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হরিজন পল্লীর কে এই জনি কুমার?[/caption]
তবে অনুসন্ধানে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর সরাসরি হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে সাংবাদিকদের হাতে। ওই ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়, হরিজন পল্লীর সাধারণ সম্পাদক জনি প্রকাশ্যে দিবালোকে দলবল এবং অস্ত্রশস্ত্র সহ হামলা চালাচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর। তবে ঐ হামলায় আহত ভুক্তভোগী এক আন্দোলনকারী জানান - ঘটনাটি আনুমানিক ২০২৪ সালের ১১ জুলাই দুপুরের। তবে ঐ হামলার সময় জনিও আহত হয়েছিলেন। তার আহত হওয়ার ছবিও সংরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়াও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট হরিজন পল্লীর সকলকে নিয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে সংযুক্ত হয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের হামলা চালান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজার এলাকায়।
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজার এলাকার শাকিব নামের সবজি ব্যবসায়ী জানান - ১১ জুলাই যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালানোর পর জনি নিজেও ঐ সংঘর্ষে আহত হয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেয় কিন্তু এখন দেখছি সে তার ফেসবুক থেকে তার নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি, সাবেক মেয়র লিটনের ছবিসহ সব কিছুই ডিলিট করে দিয়েছেন। তবে বর্তমানে জনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিএনপি ও জামাতের বিভিন্ন ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করছেন।
তবে রাজশাহীর সুশীল সমাজসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবৃন্দ বলছেন - যে সকল ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছিল তাদের এখনই আইনের আওতায় আনা উচিৎ এবং সুইপার কলোনির একজন নেতা রাতারাতি কিভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন তা তদন্ত করা উচিৎ।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com