Tablighi-Jamaat-Bisso-ijtema
বিশ্ব ইজতেমা

বিশ্ব ইজতেমা কি ও কেন ?

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

ষ্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::   ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের চরম ক্রান্তিলগ্নে তাবলিগ জামাতের কাজ শুরু করেন মাওলানা ইলিয়াস (১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি.)। ব্রিটিশ শাসনের ফলে চারিত্রিকভাবে বিপর্যস্ত ধর্মকর্মহীন, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন নামেমাত্র মুসলমানদেরকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন ও কালেমার মর্ম শিক্ষাদান এবং বিভ্রান্তির কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি এ কাজ শুরু করেন। 

 

 

তাবলিগ যে ৬টি মূলনীতিকে সামনে রেখে কাজ করে সেগুলো হলো- ১. কালেমা ২. নামাজ ৩. ইলম ও জিকির ৪.ইকরামুল মুসলিমিন ৫. সহিহ নিয়ত ৬. দাওয়াত ও তাবলিগ।

 

শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী, 

‘তোমার কাছে যদি কোনো বাণী থাকে, তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।

 

এ কথাকে কেন্দ্র করে পর্যায়ক্রমে তাবলিগের কাজ গোটা বিশ্বে প্রসার ঘটতে থাকে। তবে শুরুতে তাবলিগি কাজ ব্যাপক সমর্থন পায়নি। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর ন্যায়নিষ্ঠা, ধৈর্য, পরিশ্রম, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অপরিসীম ভূমিকা রাখে। তিনি পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে ১৯৪৪ সালের ১৩ জুলাই ৫৯ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এরপর তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় আমির মাওলানা ইউসুফ (রহ.)-এর যুগে তাবলিগের কাজ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রসিদ্ধি পায় ও মানুষ দলে দলে এ কাজের প্রতি আত্মনিয়োগ করতে থাকে। 

 

বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কিছু মানুষের কাছে দ্বীনের কথা প্রচারের মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের চলতে চলতে থাকে পথে-প্রান্তরে। যে যাত্রা এখনও চলমান।বছরান্তে দ্বীনের দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত তাবলিগ জামাতের লোকদের একত্র করে কিছু দিক-নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে বার্ষিক ইজতেমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইজতেমা আরবি শব্দ। অর্থ সমবেত হওয়া। সাধারণত তাবলিগের অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন তিন দিন আল্লাহর রাস্তায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজের কাটানোর নিয়ত করেন। সে হিসেবে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ৩ দিন ব্যাপী। 

 

বাংলাদেশে ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজিক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আশাতীতভাবে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে ইজতেমা টঙ্গির পাগার গ্রামের খোলা মাঠে আয়োজন করা হয়। ওই বছর বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেওয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৭ সাল থেকে বর্তমান অবধি ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

বিশ্ব ইজতেমার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিন দিন দেশ-বিদেশের ঈমানদার ত্যাগী আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে বয়ান শুনে আখেরি মোনাজাত করে ইমান-আমলের দাওয়াত সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া। শুধু ইসলামি বয়ান শোনা কিংবা আখেরি মোনাজাতে প্রচুর লোকজনের অংশগ্রহণ করা ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য হলো, যাতে বেশি তাবলিগ জামাত বের হয়। প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা থেকে দেশে-বিদেশে এক চিল্লা (৪০ দিন), তিন চিল্লা (চার মাস), ছয় মাস ও এক বছরের জন্য কয়েক হাজার জামাত তাবলিগের কাজের জন্য বের হয়। এর প্রতিটি জামাতে থাকে ১৪ থেকে ১৫ জন করে মুসল্লি। 

 

জামাত বের হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত, জামাতের সাথিদের ইমান-আমল ও ইলম অর্জন করা এবং আত্মশুদ্ধি হওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি মসজিদ থেকে জামাত বের করা। তৃতীয়ত, প্রতিটি মসজিদে পাঁচ আমল পরিপূর্ণ চালু করা (সপ্তাহে দুই দিন গাশত (মানুষকে নামাজের দিকে ডাকা, সৎকাজ করতে বলা, তাবলিগে যেত উদ্ধুদ্ধ করা), প্রতিদিন মাশওয়ারা (পরামর্শ) করা, প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, প্রতিদিন মসজিদ ও বাড়িতে তালিম করা এবং মাসে তিন দিন তাবলিগে যাওয়া)। প্রতিটি জামাত নির্ধারিত এলাকার প্রতি মসজিদে দুই-তিন দিন করে থেকে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, ইমান ও আমলের দাওয়াতের কাজে ব্যস্ত থাকে। 

 

প্রতিবারের ইজতেমা সফল ও সুন্দর হোক। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আমাদের পরস্পরে সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক। শান্তি ফিরে আসুক সমাজে।

 

News Source & Ref : BSS UP।   PNS BNA UNB dbcnews Google News।  Yahoo news ।  Bing newwiki।  

উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.