Hazrat Muhammad (Sm.) is the last Prophet of Allah
Hazrat Muhammad (Sm.) is the last Prophet of Allah

আজ পবিত্র শব-ই-মেরাজ 

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। পরিভাষায় মেরাজ হলো, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হজরত জিবরাইল (আ.) ও হজরত মিকাইলের (আ.) সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ ও জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে ফিরে আসা।

 

মেরাজের একটা অংশ হলো ইসরা। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ রাত্রিকালে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়ে থাকে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। 

যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা-১৭ [৫০] ইসরা-বনি ইসরাইল, রুকু: ১, আয়াত: ১, পারা: ১৫, পৃষ্ঠা ২৮৩/১)।

 

মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজবে। তখন নবীজির বয়স ৫১ বছর। মেরাজ হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস। যদি আধ্যাত্মিক বা রুহানিভাবে অথবা স্বপ্নযোগে হওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। মেরাজের বিবরণ পবিত্র কোরআনের সুরা নাজমে সুরা ইসরায় বিবৃত হয়েছে। হাদিস শরিফ, বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ, সিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য কিতাবে এই ইসরা ও মেরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। 

 

আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তাঁর বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। 

 

যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে; না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’ (সুরা-৫৩ [২৩] নাজম, রুকু: ১, আয়াত: ১-১৮, পারা: ২৭, পৃষ্ঠা ৫২৭/৫)।

 

মেরাজ সফরে সকল নবীগনের সাথে সাক্ষাৎ 

প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.), সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)। প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম, কালাম ও কুশল বিনিময় হয়েছে। তিনি বায়তুল মামুর গেলেন, যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না। অতঃপর সিদরাতুল মুনতাহার কাছে গেলেন। সেখানে চারটি নদী দেখলেন; দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য দুটি নদী জান্নাতের আর প্রকাশ্য নদী দুটি হলো নীল ও ফোরাত। তারপর বায়তুল মামুরে পৌঁছালে এক পেয়ালা শরাব, এক পেয়ালা দুধ ও এক পেয়ালা মধু পেশ করা হলো। তিনি (সা.) দুধ পান করলেন, এটাই স্বভাবসুলভ (ইসলাম)। (বুখারি শরিফ: ৩৬৭৪, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ৫৪৮-৫৫০)।

 

মেরাজের সিদ্ধান্তবলি:

মেরাজের রজনীতে হাবিব ও মাহবুবের একান্ত সাক্ষাতে ১৪টি বিষয় ঘোষণা হয়েছে। যথা ১. আল্লাহকে ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ৩. নিকট স্বজনদের তাদের অধিকার দাও; ৪. মিসকিনদের ও পথসন্তানদের (তাদের অধিকার দাও); ৫. অপচয় কোরো না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই, ৬. কৃপণতা কোরো না, ৭. সন্তানদের হত্যা করবে না, ৮. ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না, ৯. মানব হত্যা কোরো না, ১০. এতিমের সম্পদের কাছেও যেয়ো না, ১১. প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কোরো, ১২. মাপে পূর্ণ দাও, ১৩. অবস্থান কোরো না যাতে তোমার জ্ঞান নেই, ১৪. পৃথিবীতে গর্বভরে চলো না। এ সবই মন্দ, তোমার রবের কাছে অপছন্দ। (সুরা-১৭ [৫০] ইসরা-বনি ইসরাইল, রুকু: ৩-৫, আয়াত: ২২-৪৪, পারা: ১৫, পৃষ্ঠা ২৮৫-২৮৭/৩-৫)। নবীজি (সা.) জান্নাত-জাহান্নামও পরিদর্শন করেছেন।

 

কী পাপে কী শাস্তি

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখানো হলো। বেনামাজির শাস্তি দেখলেন, বড় পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হচ্ছে, আঘাতে মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, পুনরায় ভালো হয়ে যাচ্ছে, আবার আঘাত করা হচ্ছে। জাকাত না দেওয়ার শাস্তি দেখলেন। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে পাওনাদারেরা থাকবে। তারা পশুবৎ চরবে এবং নোংরা আবর্জনা ময়লা ও পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত আঠালো বিষাক্ত ফল খাবে, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ভক্ষণ করবে।

 

চোগলখোরের শাস্তি দেখলেন, তাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে; আর বলা হচ্ছে, যেভাবে তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে, সেভাবে এটা ভক্ষণ করো। অনুরূপ দেখলেন গিবতকারীদের শাস্তি। তাদের অগ্নিময় লোহার নখর দিয়ে তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ বিদীর্ণ করছে। বললেন, হে জিবরাইল! (আ.) এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো সেসব লোক যারা পশ্চাতে মানুষের গোশত খেত (আড়ালে সমালোচনা করত)। দেখলেন সুদখোরদের বড় বড় পেট, যার কারণে তারা তাদের অবস্থান থেকে নড়াচড়া করতে পারছে না। তাদের সঙ্গে রয়েছে ফেরাউন সম্প্রদায়, তাদেরকে অগ্নিতে প্রবিষ্ট করানো হচ্ছে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.