These two police officers of RMP Motihar Police Station are at the top of the arrest trade
গ্রেফতার বাণিজ্যের শীর্ষে আরএমপি মতিহার থানার এই দুই পুলিশ অফিসার

গ্রেফতার বাণিজ্যের শীর্ষে আরএমপি মতিহার থানার এই দুই পুলিশ অফিসার

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

মেহেদী হাসান ওলী, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::

যে পুলিশ বাহিনীকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে, বিপদে তাদের সহায়তা চায়, সেই বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে পুলিশের অনেক প্রশংসামূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের এভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা থানায় সেবা নিতে আসা নারীদের ধর্ষণ করার মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া থানায় সেবা নিতে আসা অনেককে নির্যাতন, থানা হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশি হেফাজত থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বাহিনীতে।  আবার নিজেরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়া, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো, জমি দখলে সহায়তা করা, নিরপেক্ষ না থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পক্ষ নিয়ে মারধরের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশ সদস্যরা। সম্প্রতি এমনই দুইজন দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যর সন্ধান পাওয়া গেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানায়। এই পুলিশ সদস্যর নাম এস

These two police officers of RMP Motihar Police Station are at the top of the arrest trade
গ্রেফতার বাণিজ্যের শীর্ষে আরএমপি মতিহার থানার এই দুই পুলিশ অফিসার

আই মোস্তফা, এএসআই শাওন ইসলাম। তারা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানায় কর্মরত আছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় এসআই মোস্তফা, এএসআই শাওন মতিহার থানা এলাকায় তারা একক আধিপত্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এহেন কোন অপরাধ নাই যেটা এই পুলিশ সদস্যরা করেনা। তাদের অন্যতম সহোযোগি হচ্ছে একই থানার কর্মরত কনেস্টেবল মিজানুর রহমান। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা করে তা হচ্ছে মাদকসহ আসামি গ্রেফতার করে টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেয়া এবং উদ্ধার করা মাদক অন্যত্রে বিক্রি করা। এছাড়াও তাদের কথার বাইরে কেও গেলে তাদের উপর চালায় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে এএসআই শাওন ও তার বিশ্বস্ত সহোযোগী কনেস্টেবল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ যে সকল তথ্য পাওয়া যায়, তা রীতিমত যে কোন মানুষের চোখ কপালে উঠতে বাধ্য হবে। একজন পুলিশ সদস্য কতটা দূর্নীতিবাজ ও অমানবিক হলে এই সকল কাজ করতে পারে তা বলায় বাহুল্য।

 

নিম্নে এই  পুলিশ সদস্যর কিছু অমানবিক ও দূর্নীতির ঘটদূর্নীতিবাজনা বর্ননা করা হলোঃ- 

ঘটনা -১.  স্বামীকে না পেয়ে গর্ভবতী স্ত্রীকে শারিরিক নির্যাতনঃ- কিছুদিন আগে এমনই একটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে একজন গর্ভবতী নারীর সঙ্গে। তাকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন ও লাঞ্চিত করেছে এসআই মোস্তফা, এএসআই শাওন। ওই নারীর নাম – লতিফা খাতুন (২৬), তিনি মতিহার থানার মোহাব্বতের মোড় এলাকার মৃত সাধুর ছেলে ফল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীরের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২০/০৯/২২ ইং তারিখে রোজ মঙ্গলবার রাত ৮ ঘটিকার সময় আমাদের বাসায় অনাধিকার প্রবেশ করে এসআই মোস্তফা, এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান। বাসায় প্রবেশ করেই বাসার বিভিন্ন যায়গা তল্লাশি করতে থাকে। আমি গর্ভবতী হওয়ায় ঘরে শুয়ে ছিলাম,তখন ঘর থেকে বের হয়ে আমি তাদের বলি আপনারা কারা আর কি খোঁজাখুঁজি করছেন? তখন এএসআই শাওন বলেন আমি তোর বাপ! মতিহার থানা থেকে এসেছি তোর স্বামী কোথায় তোর স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে উল্টো করে টাংগিয়ে পিটাবো। আমি তাকে আবারও বলি আমার স্বামীকে কেন নিয়ে যাবেন কি অপরাধ তার? আমার এই কথা শুনে এএসআই শাওন আমার উপর চড়াও হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে বলে তোর স্বামীকে বের করে দে, নাহলে তোর কপালেও দুঃখ আছে। আমি বলি আমার স্বামী বাসায় নাই আর আপনি আমার সাথে এই রকম দুর্ব্যবহার করতে পারেন না। তখন এএসআই শাওন আমার উপর আরো বেশি চড়াও হয়ে আমাকে চড় থাপ্পর সহ এবং তার হাতে থাকা স্টীক লাঠি দিয়ে তার ঘাড়ের ওপর আঘাত করে, এবং এটাও বলে তুই গর্ভবতী তাইনা, তোর পেটে এমন লাথি মারবো যে এখনি ডেলিভারি হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী লোক জন জড় হয়ে গেলে, জনগণের তোপের মুখে স্থান ত্যাগ করে  এসআই মোস্তফা,এএসআই শাওনআপনার স্বামীকে কেন তুলে নিয়ে যেতে চায় এএসআই শাওন, এই প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী জানান, আমি তাকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি আমার স্বামীর অপরাধ কি, কেন তুলে নিয়ে যাবেন? সে কোন কারণ না জানিয়ে শুধু বলে ধরতে পারলেই বুঝতে কেন তুলে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি কোথাও কোন অভিযোগ করেছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বলেন, আমি অভিযোগ করবো বলে মনে করেছিলাম কিন্তু সেইদিন রাত ১১ তার সময় আবারও এএসআই শাওন আমাদের বাসায় আসে এবং আমাকে বিভিন্নরকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে তুই যদি এই কথা কাওকে বলিস তাহলে তোর স্বামীকে হারাবি। এই কথা শোনার পর আমি ভয় পেয়ে যায়, তখন সে আমাকে বলে এখন আমি ভিডিও করবো আর তুই বলবি আমার সাথে এই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি ভয়ে তার কথায় সম্মতি দিলে সে আমার একটা ভিডিও করে নেয়, এই কারণে আর অভিযোগ করতে পারিনি। 

ঘটনা – ২. মাদক উদ্ধার করে অন্যত্রে বিক্রিঃ- গত ১৩/১১/২২ ইং রোজ রবিবার দিনগত রাত ৩ ঘঠিকায় অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশের মতিহার থানার এসআই মোস্তফা, এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান তদের থানা এলাকার বাহিরে কাটাখালী থানার অন্তর্ভুক্ত শ্যামপুর বালুর মাঠে অভিযান করে ৫০ পিচ ফেন্সিডিল আটক করে তবে  আসামি গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হয় তারা। পরবর্তীতে উদ্ধার করা ফেন্সিডিল থানায় জমা না করে রাজিব নামের এক সোর্সের মাধ্যমে তা অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। উল্লেখ্য যে উদ্ধার করা ফেন্সিডিলের মালিক ছিলেন, রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানার অন্তর্ভুক্ত মিজানের মোড় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও তারিক।

ঘটনা – ৩. ১২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ দুইজন কে আটক করে মাত্র ২০ পিচ দিয়ে মামলাঃ- গত ১৭/১২/২২ ইং তারিখ রোজ শনিবার সকাল ৫ ঘটিকার সময় মতিহার থানাধীন মিজানের মোড় সাতবাড়িয়া ওয়াব্দা বট তলায়, একই এলাকার সোর্স রাজিব ও নাসিরের দেয়া তথ্যে মতিহার থানাধীন চর খিদিরপুরের বিখ্যাত দুইজন মাদক ব্যবসায়ী কাবিল ও জিয়াকে ১২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ আটক করে এসআই মোস্তফা, এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান। তখনি খুব চতুরতার সাথে তাড়াতাড়ি করে সোর্স রাজিব ও নাসিরের মাধ্যমে ১০০ পিচ ফেন্সিডিল সরিয়ে দেয় এএসআই শাওন এবং পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আসামিদের নিতে ডিউটিরত ফোর্স সহ গাড়ি গেলে তাদেরকে জানানো হয়, ২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ এই দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। যেহেতু ১২০ পিচের তুলনায় ২০ পিচের মামলা অনেক নরমাল বা সহজ তাই আসামিরাও সেচ্ছায় স্বীকার করে করে যে তাদের কাছে ২০ পিচ ফেন্সিডিল ছিলো। এবং পরবর্তী সময়ে সরিয়ে রাখা ১০০ পিচ ফেন্সিডিল তার সোর্সের মাধ্যমে অন্যত্রে বিক্রি করে দেয়  এসআই  মোস্তফা, এএসআই শাওন ও তার বিশ্বস্ত সহোযোগি কনস্টেবল মিজান।

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন – পুলিশ সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অনেক সময় পুলিশ সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদবির চালায়, এতে একদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক লাভবানের বিষয় থাকে, অন্যদিকে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় অসাধু পুলিশ সদস্যরা। তবে দু-একজন পুলিশ সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায় পুরো বাহিনীর ওপর দেওয়া ঠিক নয়। অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেকেই অপরাধ মনে কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.