এরপরে এক সময় পল্লী বিদ্যুতে ২৫০০ টাকা বেতনে লাইনম্যান পদে চাকরি পান। ছিল না কোনো পৈত্রিক সম্পত্তি। বর্তমানে ধানমন্ডিতে ৫ কোটি টাকার বাড়িতে বসবাস করেন।
শুধু তাই নয়, সেই সেলিম মিয়া ১১টি ফ্লাট সহ এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। যার প্রমান পেয়েছে দূদক। তাই চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ওই লাইনম্যানের বিরুদ্ধে দুদক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে । তবে সারা দেশে এই সেলিমদের মত লাইনম্যানের সংখ্যা ঠিক কতটা তা আমাদের অজানা। তবে যাই হোক, এ তো গেলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের সেলিমের ঘটনা । অবশ্য এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবার রাজশাহী অঞ্চলে।
কিন্তু সম্প্রতি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকায় এমনই একজন লাইনম্যানের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২৫ বছর আগে চাকরী পাওয়া রাজশাহী গোদাগাড়ী এলাকার আনারুল ইসলাম এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। অত্র এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, পান দোকানদার থেকে শুরু করে সবারই উপরে রাজত্ব কায়েম করছেন লাইনম্যান আনারুল ইসলাম। অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে রাজশাহী গোদাগাড়ী এলাকায় বিপুল পরিমান জমি জায়গা ফ্লাট বাড়ী গড়ে তুলেছেন। তবে বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলার আত্রাই জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত আছেন।
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সরেজমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে বিষয়টি উঠে আসে তা হচ্ছে - একজন সরকারী ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী হয়ে তিনি বিভিন্ন পেশাজীবিদের রীতিমত মোবাইলে হুমকি দিয়ে কাজ এবং অর্থ দুটোই আদায় করে থাকেন । সম্প্রতি এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া লাইনম্যান আনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এদিকে রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলের এলাকাবাসীদের মধ্যে স্কুল শিক্ষক আব্দুল লতীফ উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদককে জানান- চাকুরী পাওয়ার আগে লাইনম্যান আনারুল ইসলামের পারিবারিকভাবে কোন পৈত্রিক সম্পত্তি ছিলনা। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে জামাত- শিবির মতাদর্শের হওয়ায় চাকুরী পেয়ে যান আনারুল ইসলাম আনারুল। উক্ত চাকুরি পাওয়ার বিগত ২৫ বছরে অন্তত ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন জামাত-শিবির পন্থি এই লাইনম্যান।
অত্র এলাকার দিনমজুর মিনারুল ইসলাম জানান- ভাই লাইনম্যান আনারুলের বাড়িতে দিন ভিত্তিক মজুরীতে তার ফ্লাট বাড়ি নির্মানের সময় কাজ করি কিন্তু কাজের মজুরী পাই ঐ ফ্লাট নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়ার ৩ মাস পরে। তবে উনি যে চাকরি করেন ঐ টাকায় ফ্লাট বাড়ি নির্মান করা অসম্ভব। কারন ঐ বাড়ি নির্মান করতে ১কোটি ৩২ লক্ষ টাকা মত খরচ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র এলাকার ৭০ বছরের প্রবীন একজন বৃদ্ধ বলেন - বাবা, আমার ছেলেও ২০ বছর ধরে নাটোরে লাইনম্যানের চাকুরী করে কিন্তু সে এখন পর্যন্ত তার জন্য ১টি দালান ঘর ব্যাতীত ২য় দালান ঘর নির্মান করতে পারেনি। অথচ লাইনম্যান আনারুল ইসলাম যে সম্পত্তি এলাকায় গড়ে তুলেছেন তা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বড় বড় কর্তা ব্যাক্তিরাও গড়ে তুলতে পারেননি।
[caption id="attachment_95354" align="alignleft" width="600"] রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকার আনারুলের বাড়ি[/caption]
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানা এলাকার মৃত হাসানুজ্জামান পুত্র রতন একজন বহুমূখী ব্যবসায়ী। তিনি সিজিনাল ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। আমের সময়ে আম এবং লিচুর সময় লিচু, শীতের সময় শীতকালীন সবজি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। চলতি বছরে ১টি আম বাগান লিজে নিলেও ঝড়ে আম নস্ট হয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন ইট ভাটার ব্যবসায় যাবেন। সে অনুযায়ী রাজশাহী গোদাগাড়ীতে অবস্থিত এমবিএম ইট ভাটায় ছোট একটি অংশ কেনেন। কিন্তু এখানে তিনি রেহাই পাননি লাইনম্যান আনারুল ইসলামের হাত থেকে।
লাইনম্যান আনারুল ইসলাম রীতিমত ফোন করে ইট চান বাকীতে তাও আবার ৫০ হাজার । এদিকে বাকীতে ইট দিতে রতন অস্বীকৃতি জানালে লাইনম্যান আনারুল ইসলাম গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়ে জোর পূর্বক ৫০ হাজার ইট নিয়ে আসেন ঐ ভাটা থেকে। যা রীতিমতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শামিল। এ সময় ভয়ে নিশ্চুপ থাকেন নতুন উদ্যোক্তা রতন। শুধু তাই নয়, এই ইট ভাটারই আরেকজন অংশীদার মাইনুল ইসলাম বাবুকে আটকিয়ে রেখে ২ লাখ ৫০ হাজার ইটের মেমো করে ষ্ট্যম্প এ জোরপূর্বক লিখিয়ে নেন।
তবে অত্র এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লাইনম্যান আনারুল ইসলাম নিজ এলাকায় তার ভাইদের দিয়ে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছেন। জমি জবরদখল, সরকারী ভূমি জোর পূর্বক অধিগ্রহণ,বেসরকারি - সরকারী বিভিন্ন কাজে বাধা প্রদান, হুমকী, চাদাঁবাজী সহ ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে লাইনম্যান আনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুঠোফোন উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদককে জানান - :বিষয়টি আমরা এর আগেও শুনেছি তবে প্রমান সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করব হবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com