the-third-lover-is-still-absconding-in-connection-with-the-murder-of-the-schoolgirl-in-rangpur
প্রতারিত ৩ প্রেমিক মিলে স্কুলছাত্রীকে খুন

রংপুরে স্কুলছাত্রীর খুনের ঘটনায় তৃতীয় প্রেমিক এখনও পলাতক

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

থানা প্রতিনিধি, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রংপুরের কাউনিয়ায় স্কুলছাত্রীর কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তৃতীয় প্রেমিককে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এমনসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে পদে পদে বিস্মিত হচ্ছে পুলিশ। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে এবং নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত করতে কীভাবে সহায়তা করছে–এই ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে চলা একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ হলে বছরখানেক আগেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সংশ্লিষ্ট দুই পরিবারের সদস্যরা। কারণ, এই দুজনের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্কই তাদের মধ্যে ছিল বড় অন্তরায়।

 

 

ছেলের কর্মকাণ্ডে বিব্রত সাবেক সেনাসদস্য জানান, বছরখানেক আগে একজন পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় নিজেদের সন্তানদের সামলানোর মৌখিক সমঝোতা করেছিলেন দুই পরিবারের অভিভাবকরা। কিন্তু শেষের দিকে মেয়ে তার বাবা-মায়ের ফোন থেকে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

 

ছেলেটির বাবা জানান, বড় ভাইয়ের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের সূত্রে তাকে ভাইয়া বলেই ডাকত মেয়েটি। আত্মীয়তার সূত্রে ছেলের সঙ্গে মামা-ভাগনির সম্পর্ক। পাশেই বড় ভাইয়ের বাড়ি ওই সাবেক সেনাসদস্যের। প্রায়ই ওই বাড়িতে বেড়াতে আসত মেয়েটি। ওই বাড়ির বাথরুম ভালো নয়, সে জন্য তার বাড়িতে এসে গোসল করত।

 

ছেলের মা বলেন, ‘মেয়েটাকে আদর করতাম, খাওয়াতাম। একবারের জন্যও এই পরিণতি হবে বুঝতে পারলে সাবধান হতাম। নিজের ছেলের সঙ্গে এভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে খুন হবে, নিজের সন্তানই তাকে খুন করবে, বিশ্বাস করতে পারছি না।’ছেলের মা জানান, মোবাইল ফোন নিয়েই সময় কাটত ছেলের। বাবা জানান, তার ছেলেটি মেধাবী। প্রতিটি পরীক্ষায় তার ভালো ফল। প্রতিবেশীরা জানান, মেয়েটি ভালো আচরণ করত সবার সঙ্গে। বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকত। বড়জোর রাস্তায় যেত। কখনো কেউ খারাপ কিছু দেখেনি।

 

 

রংপুর শহরের নাম করা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার পরদিন বুধবার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিনই ঘটে নৃশংস এ ঘটনা। বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের বাবা বলেন, পরদিন বুধবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যে চার বন্ধু চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে বেড়াতে যাবে বলে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তার সন্তান।

 

 

তিনি বলেন, ওই দিন রাতে ছেলে ডান হাতের তিনটি আঙুল অনেকখানি কাটা অবস্থায় বাসায় আসে। টিনে লেগে হাত কেটেছে বলে জানিয়েছিল সে। কিন্তু সন্দেহ হয়েছিল বাবার। বাড়িতে ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশ তার বাড়িতে গেলে ছেলেকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় তার ছেলে হয়তো পরিস্থিতির শিকার। মেয়েটিকে খুন করতে তার ছেলেকে কেউ বাধ্য করেছে বলে দাবি করেন সাবেক এ সেনাসদস্য।

 

 

ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ডাঁট ধরে মানুষ চাকু ব্যবহার করে। ছেলের কথার সূত্র ধরে তিনি জানান, ধারালো অংশ ছেলের হাতে চেপে ধরে অন্য দুজন তাকে খুন করতে বাধ্য করে। না হলে তাকেই খুন করার হুমকি দিয়েছিল। ছেলের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথা জানান তার বাবা। তবে পুলিশের কাছে নিজ হাতে প্রথমে স্কুলছাত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কথা স্বীকার করেছে প্রধান অভিযুক্ত স্কুলছাত্রীর সাবেক এই প্রেমিক। পুলিশকে সে জানায়, তিনজন মিলে মেয়েটিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের সময় তার হাতে থাকা ছুরিটি ভেঙে যায়। মূলত এ সময় তার হাত কেটে যায়। পুলিশ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আরও দুজনের নাম পায় সাবেক সেনাসদস্যের ছেলের কাছ থেকে। বাকি দুজনকে মেয়েটির কথিত প্রেমিক উল্লেখ করছে পুলিশ। প্রেমে প্রতারিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তিনজন মিলে মেয়েটিকে খুনের কথা সে স্বীকার করলে বুধবার আরও একজন চিকিৎসকের ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

 

প্রথমে গ্রেফতার হওয়া সাবেক সেনাসদস্যের ছেলেটি ঘটনার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকের ছেলে অপরাধের কথা স্বীকার করে কোনো জবানবন্দি দেয়নি। ফলে তিনজনই প্রেমে প্রতারিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশ যে দাবি করেছিল, তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে দুই আসামিকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। দুই আসামিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলে ধারণা অনেকের। তবে পুরো ঘটনা উন্মোচন করতে হলে ঘটনায় জড়িত তৃতীয়জনকে দরকার। তাকে খুঁজে পেতে মরিয়া অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। যদিও এরই মধ্যে পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়েছে, তাকে ধরতে পারছে না পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত স্কুলছাত্রীর ডায়েরির ক্লু ধরেই প্রকৃত হত্যাকারীর কাছে তারা পৌঁছাতে পারে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বারবার তারা বিস্মিত হয়েছেন।

 

 

রংপুর জেলা পুলিশের সার্কেল সি-কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম পলাশ  উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের যে কথাবার্তার আদান-প্রদান হয়েছে, সেসব প্রকাশযোগ্য নয়। মামলাটি নানা কারণে স্পর্শকাতর। উপরন্তু মামলার ভিকটিম ও আসামিদের বয়সসহ নানা বাধ্যবাধকতায় ঘটনার অনেক কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

 

ঘটনার দিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর শাপলা সিনেমা হলে ছবি দেখার পর পীরগাছার আলীবাবা থিম পার্কে দুজন সময় কাটায়। বেশ খানিকটা রাত হলে বাড়িতে ফেরার তাগিদ দেয় স্কুলছাত্রী মেয়েটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী পথিমধ্যে একটি নির্জন স্থানে চারজন মুখোমুখি হয়। ওদের সঙ্গে প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে তিন প্রেমিক মিলে এই খুনের ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও এ কথা উল্লেখ করেছে প্রথম প্রেমিক।

 

 

ঘটনার দিন ওই স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুজনের অবদমিত সম্পর্ক ভিন্নপথে মোড় নিয়ে এ রকম একটি লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকতে পারে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.