stay-healthy-in-summer
গরমে সুস্থ থাকতে যা করবেন

গরমে সুস্থ থাকতে যা করবেন

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: সারা দেশে এখন চলছে প্রচন্ড গরম আবহাওয়া। এই গরমে সুস্থ থাকা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। এ সময়ে তাই মানুষ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক, ড্রিহাইড্রেশন, অবসাদ ছাড়াও জ্বর, ঠান্ডা, কাশি হয়ে থাকে। সূর্যের অতিরিক্ত তাপের কারণে এই অসুখগুলো দেখা দেয়। তাই সুস্থ থাকার জন্য এইসময় একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। একটু সর্তক থাকলে আর কিছু নিয়ম মেনে চলে সুস্থ থাকা সম্ভব এই গরমেও।

 

 

 

এই গরমে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম

 

 

❒ প্রচুর পরিমানে পানি পান করা

গরমের দিনে এমনিতেই একটু বেশি পানি পান করা উচিত। কারণ গরমে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়ে থাকে, তা হল ড্রিহাইড্রেশন বা পানিশূনতা। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে গিয়ে ড্রিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই এইসময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বেশি গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে হিট স্ট্রোক।

 

 

 

❒ পানির বোতল সাথে রাখুন

যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন এবং অনেকক্ষণ রোদে অবস্থান করেন তাদের ক্ষেত্রে বেশি পানি পানের ব্যাপারে বাড়তি সচেতন হতে হবে। যারা ঘরের বাইরে রোদে কাজ করেন, তারা সবসময় পানির বোতল সাথে রাখবেন। প্রখর রোদে অনেক সময় হিট স্ট্রোক হতে পারে। সাথে পানি থাকলে তা অনেক হেল্প করবে।

 

 

 

❒ ডাবের পানি

গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে যে লবণ আর পানি বেরিয়ে যায়, সে লবণ ও পানির অভাবও পূরণ করতে হবে বিভিন্ন ভাবে। ডাবের পানি ঘামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এজন্য এ সময় ডাবের পানি পান করা অনেক উপকারী।

 

 

 

❒ ওরস্যালাইন

এছাড়া শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি মেটানোর জন্য ওরস্যালাইন খাওয়া উচিত। ওরস্যালাইন খেতে হবে প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানি দিয়ে। পরিমাণের চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বাইরে রোদে কাজ করলে ওরস্যালাইন ও সাথে রাখতে পারেন। যখনই দূর্বলতা অনুভব করবেন খেয়ে নিতে পারবেন।

 

 

 

❒ গোসল

পরিচ্ছন্নতার জন্য ও শরীর কিছুটা শীতল হওয়ার জন্য গরমকালে দু’বার গোসল করে নেয়া ভালো। সকালে ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে গোসল করলে ভালো ঘুম হবে। গোসলে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করা অনেক ক্ষেত্রে উপকারী।

 

 

❒ ডিওডোরেন্ট

শরীরে ঘামজনিত দুর্গন্ধ দূর করার জন্যই ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর অ্যান্টিপারসপিরেন্ট ঘাম তৈরিতে বাধা দেয়। ডিওডোরেন্ট ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং ঘামকে বিশ্লেষণ করে। ডিওডোরেন্ট গোসলের পরপরই ব্যবহার না করে গোসলের কিছু সময় পর শরীর শুকনো ও ঠাণ্ডা করে তারপর ব্যবহার করুন। এতে ডিওডোরেন্ট দীর্ঘসময় কার্যকারিতা পাবে।

 

 

 

❒ চোখে পানির ঝাপটা

চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এই পরিস্থিতিতে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলে আরাম লাগবে। বিশেষ করে বাইরে যারা কাজ করেন বা গৃহিণীরা রান্নার কাজের মাঝে এসে চোখে ঠান্ডা পানির পরশ নিতে পারেন।এছাড়া সম্ভব হলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে পারেন।

 

 

 

❒ হালকা রঙের ড্রেস

গরমে হালকা রঙের আরামদায়ক ড্রেস পরুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের ড্রেস বাছাই করুন। খুব গরমে কালো রঙের ড্রেস না পরাই ভালো। কারণ কালো রঙ সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করে।

 

 

 

❒ সানগ্লাস ব্যবহার

প্রখর রোদের তীক্ষ্ণতা ও আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।

গরমের শাণিত রোদে চোখে অস্বস্তিবোধ হওয়াই স্বাভাবিক। সানগ্লাস চোখকে রোদের অস্বস্তি থেকে রেহাই দেবে।

 

 

 

❒ ছাতা ব্যবহার

রোদের তীক্ষ্ণতা ও তাপ থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবেন। যাদের মাইগ্রেনের প্রবলেম আছে তাদের জন্য তো ছাতা অপরিহার্য। ব্যাগে সবসময় একটি ছোট ছাতা রাখুন। যারা বৃষ্টিতে ভিজতে চান না তারা হঠাৎ বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। কালো ছাতা এভয়েড করবেন। যারা একটু বেশি সচেতন তারা রোদে বেরুনোর আগে সানস্ক্রিন ক্রীম লাগাতে ভুলবেন না।

 

 

 

 

❒ মৌসুমী শাকসবজি ও ফলমূল

পানি আছে এমন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন পেঁপে, লাউ, শসা, ঝিঙাও বিভিন্ন শাক। পেয়ারা, আমড়া, বাতাবিলেবু, তরমুজ, আনারস, মাল্টা, পেঁপে, ফুটি ইত্যাদি পানি যুক্ত বিভিন্ন তাজা ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন। নিয়মিত লেবুর শরবত খেতে পারেন।

 

 

 

❒ অন্যান্য খাবার

এসময় তরল, সহজপাচ্য খাবার বেশি খেতে হবে। টক দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গরমে নানাভাবে টক দই খেতে পারেন। সকালে চিড়ার সাথে , দুপুর, বিকেলে লাচ্ছি বানিয়ে, অথবা এমনিতেই। দুপুর, রাতের খাবারে সালাদ রাখার চেষ্টা করবেন।

 

 

 

❒ রান্নাঘর

যারা বাইরে জব করেন তারা সাধারণত রাতে বা সকালেই রান্নার কাজটা সেরে ফেলেন। তাদের মতোই অন্য গৃহিণীদের সুবিধার জন্য সকালে রান্না সেরে নেয়া বুদ্ধিমতির কাজ হবে। কারণ যত বেলা বাড়ে সূর্যের উত্তাপ ততো বাড়ে। ভর দুপুরে রান্না করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হতে হয়। এছাড়া সকালে গ্যাসের প্রেসারও ভালো থাকে। রান্নাঘরে পাতলা সুতির ড্রেস পরবেন। গৃহিণী যাদের তাপ সহ্য করতে খুব কষ্ট হয়, তারা রান্না ঘরের দরজায় একটি টেবিল ফ্যান বিপরীত মুখী করে রাখতে পারেন। সেটি রান্নাঘরের ভেতরের উত্তাপ বাইরে টেনে নিয়ে আসবে। অথবা রান্নার মাঝে মাঝে এসে ফ্যানের হাওয়ায় একটু ঠান্ডা হয়ে নেবেন। এছাড়া একটি পাতলা কাপড় ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর পর ঘাম মুছে নিতে পারেন।

 

 

আরোও উল্লেখ্য যে, এই গরমে নিজে সুস্থ থাকার চেষ্টা করার পাশাপাশি অন্যকে ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন। বিশেষ করে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের প্রতি বেশি যত্নবান হতে হবে। গরমের দিনে তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম সাদকা। আমরা যে কেউ এ সহজ সাদকার মাধ্যমে আখিরাতের সঞ্চয় বাড়াতে পারি।


প্রফেসর ডা: আনিসুর রহমান

এমবিবিএস, এফসিপিএস 

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.