si-abu-haider-crime-rajshahi
সকল আইনের ঊর্ধ্বে কি রাজশাহী মালোপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার ?

মিস্ট্রি এবাউট রাজশাহী মালোপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

হাবিব জুয়েল,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: ঠিক যেন ব্লকবাস্টার সিনেমার কাহিনী। অনেকটাই জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প । না, এটা হালের আলোচিত সিনেমা কেজিএফ কিংবা বাংলাদেশী মহানগর ওয়েব সিরিজের ট্রেইলারের গল্প বলছিনা । আমি বলছিলাম বাংলার ভিলেন এলেন স্বপন বা দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহানগর ওয়েব সিরিজের ভিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যের চরিত্রের কথা ।  তবে যে গল্পটির অনুসন্ধান মিলেছে রাজশাহীতে তাতে ভারতীয় প্রযোজক সুবাস ঘাই কিংবা রাজশাহীতে নির্মিত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘শাটিকাপ’ এর মত প্রযোজক এই গল্প নিয়ে সুপার হিট মুভি নির্মান করতে পারবেন নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি এমনই একজন দুর্নীতিবাজ ও বদমেজাজি (সাইকো) পুলিশ সদস্যর সন্ধান পাওয়া গেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া মডেল থানায়। এই পুলিশ সদস্যর নাম আবু হায়দার। বর্তমানে এসআই আবু হায়দার রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার অন্তর্গত মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। 

 

 

 

 

এসআই আবু হায়দার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া ও বোয়ালিয়া থানায় প্রায় ৬ বছর যাবৎ কর্মরত আছেন । তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হলেও আবারোও কয়েকদিন পরেই বহাল তবিয়তে ফিরে আসেন নিজ কর্মস্থলে। বিষয়টি অনেকটা এররকম, রাজশাহী মালোপাড়া  ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার সকল আইনের ঊর্ধ্বে এবং তিনিও যেন অঘোষিত সর্বেসর্বা। তবে তার বিরুদ্ধে যে সকল অন্যায় অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে তা রীতিমতো গাঁ শিউরে উঠার মত। নিম্নোক্ত অভিযোগগুলো অনুসন্ধানে বের হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর বাইরেও আছে আরোও অভিযোগের আমলনামা যা তথ্য প্রমান ব্যাতীত প্রকাশযোগ্য নয়। অবশ্য তাকে নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক নয়াদিগন্তসময় টেলিভিশন সংবাদও প্রকাশ করে ক্ষান্ত হয়েছে কয়েক দফা। 

 

জাতীয় গনমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রাচারিত সংবাদের লিংকসমূহ

 

🔻দৈনিক প্রথম আলো – রাজশাহীতে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পালাতে গিয়ে হাসপাতালে তরুণ

🔻 দৈনিক নয়া দিগন্ত –রাজশাহীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ঘটনায় দুই পুলিশ ক্লোজড

🔻 সময় টেলিভিশন – পালানোর জন্য পুলিশ ফাঁড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আহত আসামি

 

 

 

➡ অভিযোগ ১ 

উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের জুন মাসে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে রিয়াদ নামের ১ জন আসামীকে ৪ তলা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ার চেস্টা করলে এসআই আবু হায়দার ও কন্সটেবল রায়হানকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। সংবাদটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হয় যা নিম্নে ১টি জাতীয় পত্রিকার নিউজ লিংক ও স্ক্রিনশট দেয়া হলো। সেই সাথে কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি এসআই হায়দার আলীর কাছে জানতে চাইলেও তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। তবে অদৃশ্য কিংবা অশুভ শক্তির ইসারায় তিনি আবারোও কর্মস্থলে যোগদান করে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন। কিন্ত জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে ?

 

 

➡ অভিযোগ ২

২০২২ সালের আগস্ট মাসে এসআই আবু হায়দার ও তার টিম রাজশাহী উপশহর এলাকায় নাটকীয় তল্লাশী চালিয়ে রাত সাড়ে ৩ টায় রাজশাহী উপশহরের ৩ নং সেক্টরের ৪ নং রোডের ১৭৭ নম্বর বাসা থেকে ৩টি ম্যাগজিন, ৩২ রাউন্ড গুলি ও ৬ রাউন্ড গুলির খোসাসহ ১টি বিদেশী পিস্তল এবং ৯০ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ১২ রাউন্ড গুলির খোসাসহ ১টি শটগান, ১টি প্রাইভেট কারসহ  ওয়াহিদ মুরাদ জামিল ওরফে লিংকন (৫৬) এবং সজল আলীকে (২৪) গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে মুরাদ জামিল ওরফে লিংকন (৫৬) এবং সজল আলীকে (২৪) জানা এ  সকল অস্ত্রের লাইসেন্স আছে কিন্তু তারপরেও এসআই হায়দার আলী প্রাথমিকভাবে অস্ত্রের লাইসেন্সের কথা অস্বীকার করেন গনমাধ্যমের সামনে  এবং বড় ধরনের অস্ত্রের চালান আটক করেন মর্মে সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু পরিশেষে জানা যায়, প্রকৃত ঘটনা ছিল ব্যবসায়ীর সাথে আরেক ব্যবসায়ীর দ্বন্দের জেরে এসআই হায়দার আলী তাদের গ্রেফতার করে বাহবা কুড়ান এবং সেই সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে ওয়াহিদ মুরাদ জামিল ওরফে লিংকনের কাছে পরবর্তীতে মামলায় ধারা কমানোর কথা বলে উৎকোচ গ্রহন করেন।

 

 

 

 

➡ অভিযোগ ৩

২০২২ সালের আনুমানিক অক্টোবর মাসে এসআই আবু হায়দার রাজশাহী মতিহার এলাকার হাসিব নামের এক ব্যাক্তিকে ৫০ পিচ ইয়াবা সহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে মুক্তিপন হিসেবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন এবং আরএমপি মামলায় চালান করে দেন ( আরএমপির প্রেস নোটিসে উক্ত মামলার তথ্য সংরক্ষিত আছে)। পরবর্তীতে টাইলস ব্যবসায়ী হাসিব জানান – আমি বিনোদনপুর বাজার থেকে অটোতে রিক্সায় জিরো পয়েন্টে যাচ্ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ রাজশাহী গ্রামীন ফোন অফিসের সামনে আমার পাশে বসা ১ জন যাত্রী নেমে যান এবং অটো ১০০ গজ সামনে গেলেই আমার অটোরিক্সা থামিয়ে এসআই হায়দার আলী চেক করে আমার পাশের সিট থেকে ইয়াবা উদ্ধার দেখান। ঐ সময় আমি পুরো ঘটনা বুঝে নিয়ে চুপচাপ থাকি এবং এসআই হায়দারের কথায় সাঁয় দিয়ে যা করতে বলে তাই করি। পরে আরএমপি মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে জানতে পারি আমাকে টার্গেট করেই সোর্সের মাধ্যমে আমার পাশের সিটের যাত্রী ইয়াবা অটো রিক্সার রডে গুঁজে দেয়া হয়েছিল।আর আমার পাশে বসা সেই যাত্রী ছিল এসআই আবু হায়দারের সোর্স।

 

 

 

➡ অভিযোগ  ৪

এর আগে রাজশাহী রাজপাড়া থানায় থাকাকালীন লক্ষিপুরে জিপিওর সামনে প্রতিষ্ঠিত মাদারল্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক  ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার দায়ের করা একটি চুরির মামলায় এসআই আবু হায়দার ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার উপর মিমাংসার জন্য চাপ দিলে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা সে সময় গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের সময় এসআই এসআই আবু হায়দারের বিষয়টি সামনে আনেন এবং এসআই আবু হায়দারের বিরুদ্ধে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।

 

 

তবে সার্বিক বিষয়ে এসআই আবু হায়দারের   ০১৭১৯৪৭৮২০৪ (01719478204) নং মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এরপর তাকে কয়েক দফা উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের বার্তা বিভাগ থেকে মেসেজ পাঠালেও এসআই আবু হায়দার কোন প্রতিউত্তর করেননি। এছাড়া স্বশরীরে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে কেনো দেখা করেননি এবং ফোন রিসিভ করেননি।?  উত্তর কিন্তু একটাই উপরেল্লেখিত ঘটনাগুলো সবই সত্য। আর এসআই আবু হায়দার সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন।

 

বিহাইন্ড দি মিস্ট্রি অফ রাজশাহী মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার
বিহাইন্ড দি মিস্ট্রি অফ রাজশাহী মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার

 

শুধু উপরেল্লেখিত ঘটনা নয় , রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার দূর্নীতির কারনে বিদায়ী ওসি মাজহারুল ইসলামের প্রধান সহযোগী ছিলেন মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হায়দার আলী। গ্রেফতার বানিজ্য, হোটেলে হোটেলে টাকা আদায়, মাদকব্যবসায়ীদের কাছে মাসোয়ারা আদায় এবং রাজশাহী সাহেববাজার ফুটপাতের প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা আদায়ও করে থাকেন এসআই আবু হায়দার।

 

 

 

পুলিশ বাহিনীকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে, বিপদে তাদের সহায়তা চায়, সেই বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে পুলিশের অনেক প্রশংসামূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের এভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন রাজশাহীর অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা।

 


 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.