নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৫, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে একটি কালাচ। পরে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। সম্প্রতি গোদাগাড়ী উপজেলার শেকরমারি গ্রামের আদিবাসী গৃহবধূ আদরী সর্দারকে সাপে কাটে। আদরী রাতে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বিছানার ওপরেই সাপ উঠে পায়ে কাটে। আদরীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা সাপটিকেও মেরে হাসপাতালে এনেছিলেন চিকিৎসককে দেখানোর জন্য। মৃত সাপটিকে দেখে চিকিৎসকেরা জানান, এটি বিষধর ক্রেইট বা কালাচ। এই সাপটি গোখরার চেয়েও বিষধর বলে জানান চিকিৎসকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জেনেটিক বিভাগের অধ্যাপক আবু রেজা বলেন, বিষধর প্রজাতির সাপগুলো সাধারণত বালুচরে থাকে। এখন চর ডুবে গেছে। তাই রাসেল ভাইপার চর থেকে উঠে নদীর তীরবর্তী পাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। আর কালাচ সাধারণত বরেন্দ্র অঞ্চলে থাকে। নদীর তীরেও সাপটির দেখা মেলে। নিশাচর সাপটি ঘুমের মধ্যে থাকা মানুষকে বিছানায় উঠেও কামড়ায়। বর্ষাকালে কালাচেরও আবাস ডুবে যাওয়ায় সাপটি গৃহস্থের বাড়িতে যাচ্ছে। তাই এখন সাবধান থাকায় ভালো।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় একটি সাপ উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন বোরহান বিশ্বাস রোমন। এই সাপ গবেষক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাপ উদ্ধার করেন তিনি। বোরহান বিশ্বাস জানিয়েছেন, কালাচ দেশের অন্যান্য স্থানে তেমন দেখা যায় না। তবে রাজশাহীতে এই সাপ প্রচুর দেখা যায়। এর পাশাপাশি এখন চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারও পর্যাপ্ত সংখ্যক দেখা যায় রাজশাহীতে।
তিনি জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে এক সময় প্রচুর রাসেল ভাইপার ছিল। দিনে দিনে সেসব বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১০-১১ সালের দিকে এটি আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বানের পানিতে ভেসে রাজশাহী আসে। পদ্মার চরাঞ্চলে সাপটি থাকে। এরা চরের পাখি, ইদুর ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এখন চরগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় নদীর তীরে উঠে আসছে এসব সাপ। আবার জেলেদের জালেও সাপ আটকা পড়ছে। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দেখামাত্রই এসব সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতি। পরোক্ষভাবে মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাসেল ভাইপার মারতে গিয়েও মানুষ সমস্যায় পড়তে পারে। এর ক্ষিপ্রতা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা নেই। এই সাপ কাটলে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দেহে পচন ধরে। তবে সঠিক চিকিৎসা পেলে আশঙ্কার কিছু নেই। এখন দেশের সব জেলা শহরের হাসপাতালেই রাসেল ভাইপারের ভেনম আছে। কিন্তু মানুষ প্রথমেই হাসপাতালে না এসে ওঝার কাছে যায়। ফলে মৃত্যু বাড়ে।
বোরহান বিশ্বাস বলেন, সাপ নিয়ে আতঙ্ক থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতনতারও দরকার আছে। বেশি করে সাপ উদ্ধারকারী তৈরি করতে পারলে এ সমস্যা কেটে যাবে। প্রাকৃতিক উপায়েও রাসেল ভাইপার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেখানে রাসেল ভাইপার আছে সেখানে শঙ্খিনি সাপ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। এই সাপ রাসেল ভাইপার খেয়ে ফেলে। শঙ্খিনিও বিষধর সাপ। তবে এই সাপ মানুষকে তেমন একটা কামড়ায় না। গত ৫০ বছরে মাত্র একজনকে কামড়ানোর রেকর্ড আছে। এই সাপের মাধ্যমেই রাসেল ভাইপার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.