rmp-motihar-thana-corrupted-sawon
রাজশাহী মতিহার থানার এএসআই থেকে কন্সটেবল হওয়া কে এই শাওন

রাজশাহী মতিহার থানার এএসআই থেকে কন্সটেবল হওয়া কে এই শাওন ?

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

মাহমুদ হোসেন, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় কর্মরত উচ্ছৃঙ্খল ও বদমেজাজি পুলিশ সদস্যদের খুঁজে বের করার কাজে নেমেছিল গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে এ রকম সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের খোঁজ মিলেছে। তাদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে পুলিশ বাহিনীকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে, বিপদে তাদের সহায়তা চায়, সেই বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে পুলিশের অনেক প্রশংসামূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের এভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা।

 

 

সম্প্রতি এমনই একজন দুর্নীতিবাজ ও বদমেজাজি (সাইকো) পুলিশ সদস্যর সন্ধান পাওয়া গেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানায়। এই পুলিশ সদস্যর নাম শাওন ইসলাম। তিনি মতিহার থানায় এএসআই পদে কর্মরত কিন্তু সম্প্রতি তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের আদেশে কথা কন্সটেবল পদে ডিমোসন দেয়া হয়েছে । এর আগে তিনি কন্সটেবল পদে চাকরিতে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, কন্সটেবল শাওন  

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায় কন্সটেবল শাওন রাজশাহী মতিহার থানা এলাকায় তার একক আধিপত্য ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এহেন কোন অপরাধ নাই যেটা এই পুলিশ সদস্য করেনা। তার অন্যতম সহোযোগি হচ্ছে একই থানার কর্মরত কনেস্টেবল মিজানুর রহমান। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা করে তা হচ্ছে মাদকসহ আসামি গ্রেফতার করে টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেয়া এবং উদ্ধার করা মাদক অন্যত্রে বিক্রি করা। এছাড়াও তার কথার বাইরে কেও গেলে তাদের উপর চালায় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন।

 

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে এএসআই শাওন ও তার বিশ্বস্ত সহোযোগী কনেস্টেবল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ যে সকল তথ্য পাওয়া যায়, তা রীতিমত যে কোন মানুষের চোখ কপালে উঠতে বাধ্য হবে। একজন পুলিশ সদস্য কতটা দূর্নীতিবাজ ও অমানবিক হলে এই সকল কাজ করতে পারে তা বলায় বাহুল্য। 

 

নিম্নে এই দূর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যর কিছু অমানবিক ও দূর্নীতির ঘটনা বর্ননা করা হলোঃ- 

 

ঘটনা -১. 

স্বামীকে না পেয়ে গর্ভবতী স্ত্রীকে শারিরিক নির্যাতনঃ- কিছুদিন আগে এমনই একটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে একজন গর্ভবতী নারীর সঙ্গে। তাকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন ও লাঞ্চিত করেছে এএসআই শাওন। ওই নারীর নাম – লতিফা খাতুন (২৬), তিনি মতিহার থানার মোহাব্বতের মোড় এলাকার মৃত সাধুর ছেলে ফল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের স্ত্রী।

 

অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীরের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২০/০৯/২২ ইং তারিখে রোজ মঙ্গলবার রাত ৮ ঘটিকার সময় আমাদের বাসায় অনাধিকার প্রবেশ করে এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান। বাসায় প্রবেশ করেই বাসার বিভিন্ন যায়গা তল্লাশি করতে থাকে। আমি গর্ভবতী হওয়ায় ঘরে শুয়ে ছিলাম,তখন ঘর থেকে বের হয়ে আমি তাদের বলি আপনারা কারা আর কি খোঁজাখুঁজি করছেন? 

 

তখন এএসআই শাওন বলেন ❝ আমি তোর বাপ ❞ মতিহার থানা থেকে এসেছি তোর স্বামী কোথায় তোর স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে উল্টো করে টাংগিয়ে পিটাবো। আমি তাকে আবারও বলি আমার স্বামীকে কেন নিয়ে যাবেন কি অপরাধ তার? আমার এই কথা শুনে এএসআই শাওন আমার উপর চড়াও হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে বলে তোর স্বামীকে বের করে দে, নাহলে তোর কপালেও দুঃখ আছে। 

 

আমি বলি আমার স্বামী বাসায় নাই আর আপনি আমার সাথে এই রকম দুর্ব্যবহার করতে পারেন না। তখন এএসআই শাওন আমার উপর আরো বেশি চড়াও হয়ে আমাকে চড় থাপ্পর সহ এবং তার হাতে থাকা স্টীক লাঠি দিয়ে তার ঘাড়ের ওপর আঘাত করে, এবং এটাও বলে তুই গর্ভবতী তাইনা, তোর পেটে এমন লাথি মারবো যে এখনি ডেলিভারি হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী লোক জন জড় হয়ে গেলে, জনগণের তোপের মুখে স্থান ত্যাগ করে এএসআই শাওন।

 

আপনার স্বামীকে কেন তুলে নিয়ে যেতে চায় এএসআই শাওন, এই প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী জানান, আমি তাকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি আমার স্বামীর অপরাধ কি, কেন তুলে নিয়ে যাবেন? সে কোন কারণ না জানিয়ে শুধু বলে ধরতে পারলেই বুঝতে কেন তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

 

আপনি কোথাও কোন অভিযোগ করেছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বলেন, আমি অভিযোগ করবো বলে মনে করেছিলাম কিন্তু সেইদিন রাত ১১ তার সময় আবারও এএসআই শাওন আমাদের বাসায় আসে এবং আমাকে বিভিন্নরকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে তুই যদি এই কথা কাওকে বলিস তাহলে তোর স্বামীকে হারাবি। এই কথা শোনার পর আমি ভয় পেয়ে যায়, তখন সে আমাকে বলে এখন আমি ভিডিও করবো আর তুই বলবি আমার সাথে এই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি ভয়ে তার কথায় সম্মতি দিলে সে আমার একটা ভিডিও করে নেয়, এই কারণে আর অভিযোগ করতে পারিনি। 

 

ঘটনা – ২।  মাদক উদ্ধার করে বিক্রি

গত ১৩/১১/২২ ইং রোজ রবিবার দিনগত রাত ৩ ঘঠিকায় অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশের মতিহার থানার এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান তদের থানা এলাকার বাহিরে কাটাখালী থানার অন্তর্ভুক্ত শ্যামপুর বালুর মাঠে অভিযান করে ৫০ পিচ ফেন্সিডিল আটক করে তবে  আসামি গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হয় তারা। পরবর্তীতে উদ্ধার করা ফেন্সিডিল থানায় জমা না করে রাজিব নামের এক সোর্সের মাধ্যমে তা অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। উল্লেখ্য যে উদ্ধার করা ফেন্সিডিলের মালিক ছিলেন, রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানার অন্তর্ভুক্ত মিজানের মোড় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও তারিক।

 

ঘটনা – ৩।

১২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ দুইজন কে আটক করে মাত্র ২০ পিচ দিয়ে মামলাঃ- গত ১৭/১২/২২ ইং তারিখ রোজ শনিবার সকাল ৫ ঘটিকার সময় মতিহার থানাধীন মিজানের মোড় সাতবাড়িয়া ওয়াব্দা বট তলায়, একই এলাকার সোর্স রাজিব ও নাসিরের দেয়া তথ্যে মতিহার থানাধীন চর খিদিরপুরের বিখ্যাত দুইজন মাদক ব্যবসায়ী কাবিল ও জিয়াকে ১২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ আটক করে এএসআই শাওন ও কনস্টেবল মিজান। তখনি খুব চতুরতার সাথে তাড়াতাড়ি করে সোর্স রাজিব ও নাসিরের মাধ্যমে ১০০ পিচ ফেন্সিডিল সরিয়ে দেয় এএসআই শাওন এবং পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আসামিদের নিতে ডিউটিরত ফোর্স সহ গাড়ি গেলে তাদেরকে জানানো হয়, ২০ পিচ ফেন্সিডিল সহ এই দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। যেহেতু ১২০ পিচের তুলনায় ২০ পিচের মামলা অনেক নরমাল বা সহজ তাই আসামিরাও সেচ্ছায় স্বীকার করে করে যে তাদের কাছে ২০ পিচ ফেন্সিডিল ছিলো। এবং পরবর্তী সময়ে সরিয়ে রাখা ১০০ পিচ ফেন্সিডিল তার সোর্সের মাধ্যমে অন্যত্রে বিক্রি করে দেয় এএসআই শাওন ও তার বিশ্বস্ত সহোযোগি কনস্টেবল মিজান।

 

rmp-motihar-thana-corrupted-sawon-police.jpg

ঘটনা – ৪। 

২৪/০৪/২০২৩ ইং তারিখে  সাইফুল নামের এক ব্যক্তির আছে থেকে তার দুর্গাপুর খামারবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে ১,৫০.০০০ টাকা নিয়ে তাকে আবার ১ কেজি গাঁজা দিয়ে চালান দেন কন্সটেবল শাওন। এরপর আবার জোর  করে অন্য এক ব্যক্তির নাম মামলায় ঢুকান।

 

rmp-motihar-thana-corrupted-sawon
রাজশাহী মতিহার থানার এএসআই থেকে কন্সটেবল হওয়া কে এই শাওন

ঘটনা – ৫। 

চম্পা নামের একটা হিরোইন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩৫ পিচ ইয়াবা পাওয়ার পর  তার ছেলে কে ৫ পিচ ইয়াবা  দিয়ে চালান দেয়ার পর  চেয়ে চম্পার কাছে ১ লাখ টাকা নেয়।

 

ঘটনা – ৬।

রাজশাহী মতিহারের হাবিল নামের একটা ব্যক্তির কাছে থেকে ২৮/০৫/২০২৩ ইং তারিখে তার বাবার নামে ওয়ারেন্ট ছিলো কিন্তু  এএসআই @ ওরফে কন্সস্টেবল শাওন হিরোইন মামলা দিবো বলে ৬০ হাজার টাকা ঘূষ নেন। 

 

ঘটনা – ৭ 

রাজশাহী মতিহার এলাকায় গত ২৪/০৬/২০২৩ ইং তারিখে মানিক নামের এক ব্যক্তি কে ধরে ১ পিচ ফেন্সিডিল পেয়ে তাকে আবার হাবিল-কালু দুই ভাই এর বাসায় নিয়ে যেয়ে মারধর করতে করতে ৩ টা বাস ভেঙে ফেলে। কিন্তু এরপর  তাকে আবার ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ জনকে ছেড়ে দেন কন্সস্টেবল শাওন। 

 

ঘটনা – ৮

তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কল সিডিআর চেক করলেই ২৬/০৬/২০২৩ ইং তারিখে  কালু ও মানিককে ফাঁড়িতে ডেকে পাঠিয়ে যে ভয় ভীতি দেখানো হয়েছে তা অবশ্যই প্রমানিত হবে।

 

ঘটনা – ৯

আল্টিমা ওয়ালেট এপ্সের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মুনায়েমের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন এএসআই থেকে কন্সটেবল হওয়া শাওন। রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানায় আটক থাকাকালীন অনেকের সামনেই একথা আল্টিমা ওয়ালেটের প্রতারক মুনায়েম জানিয়েছে।

 

 

রাজশাহী মতিহার থানার আইন শৃঙ্খলা বিষয় নিয়ে  রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেন – রাজশাহী মহানগরী শিক্ষা নগরী। আর এই রাজশাহী  নগরীর মতো মতিহার থানা এলাকায় কথা কন্সটেবল শাওন কর্তৃক পুলিশি নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে শাওনের মত  দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

 

এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – আপনারা অবগত আছেন গেল ১ বছরে ৯৯৫৮ পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এদের বেশিরভাগেরই কর্মচ্যুতি ও কর্তব্যচ্যুতির অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তি হয়েছে। অভিযোগের ক্ষেত্রে কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। অভিযোগ দিন অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

অন্যদিকে রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক আমার বার্তার ব্যুরো প্রধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের একটিভিস্ট এম.এ.হাবীব জুয়েল বলেন –  পুলিশ সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অনেক সময় পুলিশ সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদবির চালায়, এতে একদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক লাভবানের বিষয় থাকে, অন্যদিকে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় অসাধু পুলিশ সদস্যরা। তবে ২/১ জন পুলিশ সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায় পুরো বাহিনীর ওপর দেওয়া ঠিক নয়। অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেকেই অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.