নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: ধরা পড়লেই বহিষ্কার’ ও ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’- এ দু’টি বাক্য এখন সরকারের উচ্চ মহল থেকে প্রায়ই বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। কথা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বৈকি। তবে ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ❝ Prevention is better then cure ❞ । প্রবাদের মর্ম মতে দুর্ঘটনা-অঘটন ঘটলেই মুখ রক্ষার জন্য ‘বহিষ্কার’ বা ‘ছাড় না দেয়ার’ হুমকি দেয়ার চেয়ে ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটতে না দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই বেশি শ্রেয়। অর্থাৎ এমন কাউকে ক্ষমতায় কিংবা উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করা উচিৎ নয় যার দ্বারা সমাজের আপামর জনসাধারণের জান,মাল কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের হানি ঘটে। এই ধরনের ব্যাক্তি সমাজের প্রতিটি স্থানে থাকলেও এদের মেয়াদকাল ২/৪ বছরের বেশী হয়না। উদাহারন স্বরুপ বলা যেতে পারে, রিজেন্ট কান্ডের শাহেদ, আওয়ামী লীগের মহিলা নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর, যুব মহিলা লীগের পাপিয়া, ক্যাসিনো কান্ডের সম্রাটদের মত ব্যাক্তির নাম।
যাই হোক, এত গেল বিগত বছরগুলোর উদাহারন মাত্র। কিন্তু সম্প্রতি খোঁদ শিক্ষা মহানগরী কিংবা গ্রীন সিটি খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে ভুমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও দখল বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হুদা। তার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ গ্যাং নিয়ে জমি দখল কিংবা চাঁদাবাজির মত অভিযোগ নতুন নয়। বরং রাজশাহী মহানগর যুবলীগের উচ্চ পদ প্রত্যাশীদের দুরুল হুদাও একজন। কিন্ত অপ্রিয় হলেও সত্য যে, যুবলীগ নেতা দুরুল হুদার কর্মকাণ্ডে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ বিব্রত হলেও সাক্ষী প্রমানের অভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছেনা দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
এরই ধারাবাহিকতায় সুলতানা বেগম নামের এক মহিলা উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের রিপোর্টারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেন - হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি রাতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা দুরুল হুদা দলবল নিয়ে রাজশাহী বিসিক ম্যাচ ফ্যাক্টরির মোড়ে অবস্থিত একটি মার্কেটে ঢুকে দোকানপাটে লুটপাট চালিয়ে পুরো মার্কেটটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি দখল করে নিয়েছেন। অথচ আমি বিগত ১০ বছর পূর্বে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল বারীর কাছ থেকে উক্ত মার্কেটে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছি।
সুলতানা বেগম আরোও বলেন, আমাদেরকে মারপিট করে বের করে দিয়েছে দুরুল হুদার গুন্ডা বাহিনী । আমি বলেছি, আমাদের ২ লাখ টাকা সালামি দেয়া আছে। এই টাকা কে দেবে? শুধু সুলতানা নয়, সেখানকার একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একইভাবে তাদের অভিযোগ, মার্কেট ভেঙে মালামাল পর্যন্ত লুট করা হয়েছে তাদের। ফলে অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্থান এখন রাস্তার পাশে।
অন্যদিকে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল বারীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান, আমি গত ২০০৬ সালে এই জমি ক্রয় করার পর থেকে সরকারি খাজনা প্রদান করে ভোগ দখল করে আসছিলাম। এবং আমি সেখানে কয়েকটি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু গত ০৪/০১/২০২৩ ইং তারিখে আমার দোকান ঘরের ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী মহল আমার দোকান ঘর ভাংচুর করে ভাড়াটিয়াদের মালামাল লুটপাট করে তাদেরকে সেখান থেকে রাস্তায় বের করে দিয়েছে। এই ঘটনায় আমি রাজশাহী মহানগর কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছি।
কিন্তু প্রমান সাপেক্ষে কোন দলীয় কর্মীর বিচার প্রক্রিয়া সময় ও শর্ত সাপেক্ষ বিষয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মত দলে যখন দুরুল হুদার মত দলীয় কর্মীর আবির্ভাব ঘটে তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় রাজনীতির রনাঙ্গন।
অনুসন্ধান ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ কর্মী দুরুল হুদা রাজশাহী মহানগরের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হুদা। দুরুল হুদার দেশের বাড়ি নওগাঁ নিয়ামতপুরে। থাকেন রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায়। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেন বেচার কাজ করে থাকেন। এক কথায় বলতে গেলে ❝জমির দালালী করেন❞। এদিকে দুরুল হুদার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট পর্যালোচনা করে যে সকল তথ্য পাওয়া যায় তা রীতিমতো আঁতকে উঠার মত। ২০২০ সালের ২০শে জুন রাত ১১.০৩ টায় তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনে যা লেখেছে তার স্ক্রীনশট ও ফেসবুক লিংক নিচে দেওয়া হলো।
[caption id="attachment_111027" align="alignleft" width="960"] নেটিজেনরা অনেকেই মন্তব্য করেছেন - বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ছবিকে অবমাননা করেছেন রাজশাহীর যুবলীগ নেতা দুরুল হুদা[/caption]
এরপর ২০২১ সালের ২রা এপ্রিল দুরুল হুদা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রী এমপি ওবায়দুল কাদেরের সাথে ছবি তুলেন এবং ফেসবুকে সেই ছবি আপলোড করে লেখেন -
[caption id="attachment_111028" align="alignleft" width="540"] রাজশাহীর যুবলীগ নেতা দুরুল হুদার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া[/caption]
এছাড়াও গত ২৯/০১/২০২৩ তারিখে রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তিনি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর সাপাহারের পর্সা আওয়ামী যুবলীগের মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন। অথচ তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগে থাকলেও তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের র্যালীতেও অংশগ্রহণ করেননি। উক্ত বিষয়টিরও ছবিটি তুলে তিনি ফেসবুকে আপলোড করে জানান দিয়েছেন সকলকে। নিম্নে তার স্ক্রীনশট ও ফেসবুক লিংক দেওয়া হলো -
[caption id="attachment_111026" align="alignleft" width="540"] রাজশাহীর যুবলীগ নেতা দুরুল হুদার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া[/caption]
অন্যদিকে ২০২২ সালের ২রা জানুয়ারীতে তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন -
নওগা জেলা নিয়ামতপুর থানা 5 নম্বর রসুলপুর ইউনিয়নের ধানসুরা মোড় সংলগ্ন আদিবাসীদের বসবাসের আশ্রয় স্থান। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ দুরুল হোদার নেতৃত্বে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
[caption id="attachment_111029" align="alignleft" width="700"] প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় গরীব, দূঃখী ও গৃহহীন মানুষকে দেয়া বাড়ি গুলোকে নিজের ব্যাক্তিগত অনুদান বলে প্রচার করছে এই যুবলীগ নেতা।[/caption]
উপরেল্লিখিত দুরুল হুদার ফেসবুকে এই লেখার অর্থ দাঁড়ায় - রাজশাহী মহানগর আওয়ামী যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ দুরুল হোদা তার ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে আদিবাসীদের ঘর নির্মান করে দিয়েছেন।
রাজশাহীর এই যুবলীগ কর্মী হুদার বিষয়ে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান, আমাদেরকে কেউ কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। যদি কেউ অভিযোগ করে তবে আমরা সাংগঠনিকভাবে আমরা মহানগর যুবলীগ একটি কমিটি গঠন করবো। পরে যদি সত্যতা পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হুদাকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে যমুনা টেলিভিশন। যেখানে এই দুরুল হুদাকে অস্ত্রবাজ,চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ভিডিও দেখুন
[embed]https:\/\/preview-xupnewsc.uttorbongoprotidin.com//preview-xupnewsc.uttorbongoprotidin.com//m.youtube.com/watch?v=QbiUMygqliA[/embed]
সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর একাধিক সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন - বিগত বছরে শুদ্ধি অভিযানে ১০ হাজার নেতা কর্মীকে ছাঁটাই করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, জমি জবর দখল, টেন্ডারবাজি ও সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণসহ নানা অভিযোগ ছিল। বিধায় রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগে শুদ্ধি অভিযান অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা দরুল হুদাদের মত রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আওয়ামীলীগের মত প্রাচীন রাজনৈতিক দলের স্বত্ত্ব।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com