Rajshahi-city-hut-owner-kalu
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

রাজশাহীতে ‘মাছ কালু থেকে হাট কালু’ – বাকীটা ইতিহাস

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

রমজান আলী, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন::  মাছের ব্যবসা রাজনীতিতে প্রবেশ করে মাফিয়া কিং হয়েছিলেন ভারতের অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পরই মমতা ব্যানার্জি (দিদি)’র  নজর কেড়েছিলেন অনুব্রত । বাংলাদেশে গরু পাচার-কাণ্ডে ১০ বার অনুব্রতকে তলব করেছিল ভারতীয় সিবিআই। অনুব্রত হাজিরা দিয়েছিলেন মাত্র ১ বার।

 

 

 

 

অনুব্রত মণ্ডল কখনও বলেছেন বিপক্ষ দলের ‘কবজি কেটে নেবেন’ আবার কখনও পুলিশের গাড়িতে ‘বোমা’ মারার ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার প্রদর্শন করেছেন। আর বাকীটা ইতিহাস। গুগল সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন এখানে। 

 

 

 

তবে এবারের ঘটনা কিন্তু ভারতীয় অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে নয়। বরং স্থান, কাল, পাত্র পরিবর্তিত হয়ে রাজশাহী মহানগরীতে। তিনিও অনুব্রত মণ্ডলের মত মাছ ব্যবসায়ী থেকে শিল্পপতি হয়েছেন। 

 

 

 

২০২২ সালের ৬ আগস্ট হুন্ডির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার (পূর্ব) আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরপর গ্রেফতার হন প্রাইম ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ওয়াহিদ জামিল মুরাদ ও তার ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদ আলম সম্রাট। 

 

 

 

তবে তৎকালীন সময়ে রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার  জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায়, আতিকুর রহমান কালু দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী সিটি বাইপাশ গরুর হাটটি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সেই সুবাধে প্রাইম ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ওয়াহিদ জামিল মুরাদ ১৫ কোটি টাকা দেন আতিকুর রহমান কালুকে। সেই টাকা  আতিকুর রহমান কালু দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটান। তবে সে সময় রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল জানিয়েছিলেন মূলত হুন্ডির টাকা নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। 

 

 

 

উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘটনা থেকে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারে যে, হুন্ডির টাকার কারনেই রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার কালুর বাড়ি গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটেছিল।

 

 

 

অন্যদিকে দেড় কোটি টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও প্রায় দেড় কোটি টাকার তথ্য গোপন করার অভিযোগে রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২৩ সালের ২রা আগস্ট অর্থাৎ গত মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

 

 

 

দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান – রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার কালুর বিরুদ্ধে ২টি ভবন ও ৯টি প্লটসহ অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি প্রায় ১ যুগ ধরে রাজশাহীর সিটি হাটের ইজারা পেয়ে আসছেন নিয়মিত কিন্তু তিনি ব্যাতীত আর কেউ ইজারা পাননি। সার্বিক বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।

 

Rajshahi-city-hut-owner-kalu-news
বরাবর বিতর্কের কেন্দ্রেই থেকেছেন রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু

এদিকে মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে আতিকুর রহমানের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। গত ১৫ জানুয়ারি তিনি দুদকে তাঁর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি নিজ নামে মোট ৯ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখান। কিন্তু অনুসন্ধানে গিয়ে দুদক জানতে পারে, তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৩২ টাকা।এর মধ্যে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬ হাজার ৫১৫ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক। অন্যদিকে আসামির আয়কর নথির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ব্যয় বাবদ ২ কোটি ৮৭ লাখ ২৮ হাজার ৯০১ টাকা খরচ করেছেন এবং ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮০ টাকার ঋণ শোধ করেছেন। অর্থাৎ ২ কোটি ৯০ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১ টাকা ব্যয় করেছেন। ফলে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১৩ টাকা। এ ক্ষেত্রে তাঁর আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৪২১ টাকা। এ ২ অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

 

প্রকৃতভাবেই কি কালু কোটি টাকার মালিক? 

রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকার প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায়ী রতন বলেন – কালু ভাই ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মাছের ব্যবসা করতেন। তিনি রাজশাহী নিউমার্কেটে অবস্থিত মাছের আড়তে মাছ বিক্রি করতেন।

 

রাজশাহী মহানগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকার মাজেদ মাস্টার বলেন — আতিকুর রহমান কালু ভাই গোয়ালন্দ থেকে ইলিশ মাছ এনে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তৎকালীম সময়ে রাজশাহী দামকুড়ায় সিটি হাটে গরু বিক্রি শুরু করেন।এরপর ১ বছর পর ছোট ছোট শেয়ার কিনতে থাকেন সিটি হাটে। আর তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আতিকুর রহমান কালু ব্যাতীত সিটি হাটে অন্য কেউ ইজারা পায়নি। তবে ক্ষেত্র বিশেষে তিনি পার্টনার বা শেয়ারদার পরিবর্তন করেছেন।

 

রাজশাহী মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকার ৭৪ বছর বয়স্ক মরিয়ম বিবি বলেন – কালুকে চিনি তো। আগে বড় নিউমার্কেটে মাছ বিক্রি করতো। আমি অনেক বছর কালুর কাছ থেকেই মাছ কিনতাম। কিন্তু ১৯৯৮ সালের পর থেকে কালুকে আর দেকজতে পাইনি।শুনেছি মাছ বিক্রি করতে করতে এখন কালু নাকি কোটিপতি। আর সাইকেল চালায়না এখন বড় বড় গাড়িতে চড়ে।

 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সুত্র জানায়-  এই মূহুর্তে সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর শেয়ার হোল্ডার হিসেবে রয়েছেন রাজশাহী গুড়িপাড়া এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে বাবু, আমীন পেট্রোল পাম্পের মালিক আমীন ও দাশু নামের জনৈক ব্যাক্তিসহ নাম না জানা অনেকেই।

 

পরিশেষে সার্বিক বিষয় নিয়ে  সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার যা কিছু আছে, সবকিছু আমি দুদকের কাছে দিয়েছি। জানামতে আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। এখন দেখি, তারা কী অভিযোগ করেছে। দেখলে সেই মোতাবেক আমি জবাব দেব। তিনি দাবি করেন, তাঁর ১টি ৭ তলা বাড়ি ও ১টি ৬ তলা ভবন এবং ১টি ৩ কাঠার প্লট আর পুঠিয়ার বানেশ্বরে জমি  ছাড়া তেমন কিছু নেই।

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.