রমজান আলী, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে এবার মাদক, চোরাচালান হত্যাসহ নানান মামলার আসামি ৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থী। আসন্ন এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে এবার কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেকেই রয়েছেন বিভিন্ন মামলার আসামী। আবার প্রতারণার মামলায় জেলে বন্দি থেকেই রাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এক প্রার্থী। কিন্তু রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ডের চিত্র একটু ভিন্ন।
গত নির্বাচনে রিক্সায়ালা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবির কাছে থেকে টাকা ধার নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন। কেননা ২৯ নং ওয়ার্ড চাচ্ছিল একজন যোগ্য প্রার্থী। বিধায় বিপুল ভোটে পাশ করেন বর্তমান কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন। কিন্তু গেল ৫ বছর কেমন সেবা দিলেন তিনি এটিই এখন প্রশ্ন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ড বরাবরই আলোচিত সমালোচিত। কেননা গেল ৫ বছরে কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন যে সম্পদ গড়েছেন তা শুনলে চোখ কপালে উঠবেই সবার। আঙ্গুল ফুঁলে কলা গাছ হওয়া কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন ২ কোটি টাকা দিয়ে নিজস্ব ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মান করেছেন। জমি কিনেছেন আনুমানিক ২০/৩০ কাঠা, যার বাজার মুল্য আনুমানিক ৭/৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয় বাসায় লালন পালনের জন্য গরু কিনেছেন ৮/৯ টি, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে এ টাকা তিনি কোথায় পেলেন ?
আসুন জেনে নিই এই টাকার উৎস কি কি ।রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিসের আওতাভুক্ত মতিহার থানাধীন বিনোদপুর মির্জাপুর খোজাপুর, শ্যামপুর ঘাট নিয়ে অত্র ২৮ নং ওয়ার্ড গঠিত। এছাড়াও চর খানপুর, চর মাজার দিয়াড, ১০ নম্বর ঘাট ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চল। আর এই সীমান্ত অঞ্চলে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক বানিজ্য হয়ে থাকে। সেই সাথে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে রাসিকের এই ২৯ নং ওয়ার্ডেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র এলাকার অনেকেই কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন - নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনে বিরুদ্ধে উঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। কাউন্সিলর কার্যালয় যেন এখন কিশোরদের আড্ডাখানা। অনেকেই বলছেন এলাকায় কিশোর সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ হয় এই কার্যালয় থেকেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাসিক কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন কার্যালয়ে বসে থাকে একদল কিশোর। সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের নামে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যহত আছে । এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হওয়ার সুবাধে রাবি শিক্ষকদের নিজস্ব বহুতল বাড়ি রয়েছে এই এলাকায় তাই কেউ বাড়ি নির্মান করলেই তাদের গুনতে হয় ক্লাব বা পিকনিকের নামে চাঁদা বা মাশোহারা। এলাকায় তার রয়েছে নিজস্ব কিশোর গ্যাং। এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষেরই দাবি কাউন্সিলর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজখবরই নেননি। এছাড়াও ৫/৬ টি জুয়ার বোর্ডের কর্তাও কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন। এছাড়াও গেল নির্বাচনে যাদের কাছে টাকা ধার নিয়েছিলেন তাদের কাউকে কাউকে মামলা দিয়ে কিংবা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কুপোকাৎ করেছেন। এতে ধারের টাকা আর কখনই পরিশোধ হয়নি।
[caption id="attachment_112839" align="alignleft" width="900"] যেভাবে মাফিয়া ডন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন[/caption]
এলাকাবাসীর মধ্যে ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা আমেনা উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান - কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন আগে ক্রসফায়ারে নিহত আলোর ডে লেবার ছিল। মাদক সরবরাহ ও খুচরা বিক্রি করতো। সে আবার কাউন্সিলর হয়েছে তাহলে বোঝ কি অবস্থা হয়েছে। মাদক সম্রাজ্যের সে এখন বড় নেতা কি করে গরবী দু:খীদের দেখবে। দেখ ওয়ার্ডে কোন কিচ্ছু হয়নি।
স্কুল মাস্টার আফজাল হোসেন বলেন - আপনারা সাংবাদিকরা সারা বছর কোথায় থাকেন। দেখতে পাননা সব ওয়ার্ডে উন্নয়ন হলেও এই ওয়ার্ডে শুধু কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের ভাগ্য ছাড়া আর কিছুর উন্নয়ন হয়নি। আপনারা যদি মাদক কারবারি যতই হুজুর সাজান তারপরও তার যেটা কাজ সেটাই করবে। যেমনটি করছেন আমাদের কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
সামাজিক সংগঠনের রোকেয়া নামের এক সমাজকর্মী জানান - জিরো থেকে হিরো হওয়া কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের আগে খবর ছাপান তারপর ওয়ার্ডের মাদক সিন্ডিকেটের তথ্য তুলে ধরুন।
বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের হ্যাস্তন্যাস্ত করারও অভিযোগ রয়েছে রাসিক কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদক সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যদের নিয়ে ২৯ নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত দেন দরবার করেন। আরোও উল্লেখ্য যে, নিজ কার্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের বিচার শালিসে আসা এলাকার বয়:বৃদ্ধদের সামনেই সিগারেট টানতে থাকেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায়, একমাত্র মাদকসেবিদের মাঝেই এই লক্ষন পরিলক্ষিত হয়। আর এটাও সত্য যে, তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করেন। এছাড়াও তার ওয়ার্ড কার্যালয়ে আসা নারীদের সাথেও করে থাকেন অশোভন আচরণ।
উপরে উল্লেক্ষিত বিষয় গুলো নিয়ে রাসিকের ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সর্বপরি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে যে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ডবাসিকেই বেছে নিতে হবে কোন কাউন্সিলর তাদের জন্য যোগ্য। তবে ২৯ নং ওয়ার্ড এর সুশীল মহল বলছেন - অন্তত একজন মাদক কারবারীর কাছে আমরা নিরাপদ থাকতে পারিনা। যোগ্য প্রার্থী আমাদেরকেই বেছে নিতে হবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com