অনলাইন মেডিক্যাল রিপোর্ট, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন : সাধারণ বিবেচনায় এর উত্তর পাওয়া সম্ভব নয় কারণ মানুষ মরে গেলে সে আর ইহজগতে ফিরে আসে না এবং পরকাল থেকে ইহজগতে যোগাযোগের উপায় আজ অবধি বের হয়নি।আর মৃত্যক্ষণে অনুভূতির বর্ণনা দেওয়া সম্ভব হয় না কারণ মানুষের Mode of Death বা মৃত্যু মূলত ৩ উপায়ে হয়ে থাকে -
১) ব্রেন ডেড হয়ে-এ সময় তার চেতনা না থাকায় কথা বলার প্রশ্নই উঠে না
২) ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে -ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে শব্দ উচ্চারণ করা সম্ভব নয় কারণ ফুসফুসের বাতাসই ভোকাল কর্ডকে কাঁপিয়ে শব্দ তৈরি করে।
৩)হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হয়ে-হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু এই সাধারণভাবে বিবেচিত এই বিষয়টিই অসাধারণ ও রহস্যময় হয়ে উঠেছে এবং কিছু বহুল আকাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরও মিলছে “ল্যাজারাস সিনড্রোম” এর কারণে।
হার্টবিট ও শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে এমন রোগীদের Cardiopulmonary resuscitation (CPR) (বুকে চাপ দিয়ে ও শ্বাস দিয়ে ডাক্তাররা রোগী হার্ট ও ফুসফুসের কাজ পুনরায় চালুর যে প্রচেষ্টা চালান), Defibrillation (হার্টে ডিসি কারেন্ট দিয়ে শক দিয়ে হৃদপিন্ডকে কর্মক্ষম করে তোলা) প্রচেষ্টার পরও যখন রোগীকে জীবিত করা সম্ভব হয়নি এবং চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন সেসব রোগীদের কারো কারো কোনরূপ চিকিৎসা ছাড়াই পুনরায় জীবিত হওয়ার কেসগুলোকে ল্যাজারাস সিনড্রোম (Lazarus Syndrome) বলে।
আপনার জ্ঞাতার্থে ল্যাজারাস সিনড্রোমের অনেকগুলো বাস্তব উদাহরণের মধ্য থেকে ৫টি তুলে ধরা হলো :
১)১৯৯৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের হিনচিংব্রুক হাসপাতালে ডাফনি ব্যাংকস নামক এক নারীকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ঘোষণার প্রায় ৩৪ঘন্টা (অর্থাৎ ১দিন ১০ঘন্টা) পর তাকে মর্গে জীবিত পাওয়া যায়।
২)২০০৭ এর মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Beebe Medical Center in Lewes,Delaware এ জুডিথ জনসন নামের এক বৃদ্ধার হৃদপিন্ড থেমে যাওয়ায় (Cardiac Arrest) এবং সকল প্রচেষ্টার পরও তা চালু করতে না পারায় নির্দিষ্ট সময় পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।পরবর্তীতে পোস্ট মর্টেমের জন্য তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি মর্গে বেঁচে উঠেন এবং মামলা ঠুকে দেন চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নামে।
৩)২০১০ সালের ২৭শে আগষ্টে মেইল অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় কেট অগ নামক এক অস্ট্রেলিয়ান নারী প্রিম্যাচিওর বেবীর জন্ম দেন।ডাক্তাররা প্রায় ২০মি. চেষ্টার পরও শ্বাস চালু করতে ব্যর্থ হওয়ার পর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।সদ্যপ্রসূত ও মৃত সন্তানকে গভীর ভালবেসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখেন অনেকক্ষণ।প্রায় ২ঘন্টা পর তিনি লক্ষ্য করেন শিশুটি বেঁচে উঠেছে।
৪) ২০১২ সালের ১৭ই অক্টোবর বিবিসি নিউজের হেলথ বুলেটিনে তাসলিম রফিক নাম্নী এক নারীর কাহিনী বর্ণিত হয়।তাকে অচেতন অবস্থায় ব্রিটেনের The Royal Berkshire Hospital in Reading এ ভর্তি করা হয়।কিন্তু চিকিৎসকরা প্রায় ৪৫মি. চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।মৃত ঘোষণার প্রায় ১১ ঘন্টা পর তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে উঠেন।
৫)২০১৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারীতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের মিসিসিপির ৭৮বছর বয়স্ক ওয়ালটার উইলিয়ামকে মৃত ঘোষণার পর যখন তাকে দাফন করার প্রস্তুতি চলছিলো তখন সৎকার কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি তার নড়াচড়া দেখে বিষয়টি সবাইকে জানান এবং পরবর্তীতে তিনি জীবিত হয়ে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করেন।
আমাদের দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ল্যাজারাস সিনড্রোমের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যাই হোক মূল আলোচনায় ফিরে আসি।ল্যাজারাস সিনড্রোম ও গভীর কোমায় যাওয়া রোগীদের (গভীর কোমা বা Irreversible coma তে ব্রেন পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং রোগীকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়) জীবিত হয়ে ফিরে আসার পর তাদের মৃত্যক্ষণের অনুভূতি এবং মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা প্রবাহকে Near Death Experience(NDE) বা Out of Body Experience (OBE) নামে অভিহিত করা হয়।এখন জেনে নিই মানুষের মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতাগুলো।
যেহেতু রেকর্ডেড কেসগুলোর সবার অভিজ্ঞতা এক ছিল না কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিলো তাই সাইকোলজিস্ট ও গবেষক কেনেথ রিং বর্ণিত অভিজ্ঞতাগুলোকে ৫টি ধারাবাহিক পর্বে ভাগ করেছেন-
🟥 প্রশান্তি ও হালকা অনুভব করা-মৃত্যুক্ষণে নিজেকে খুব হালকা ও গভীর শান্তিতে তলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি অনুভূত হয়। মনে হয় শান্তির অসীম গভীরতায় তলিয়ে যাচ্ছে দেহটি।এমনকি আত্মহত্যার কারণে মারা যাওয়া রোগীদের অভিজ্ঞতাও সাধারণ বিশ্বাসের মত ভীতিকর ছিলো না।তবে খুবই নগণ্য ক্ষেত্রে শান্তির পরিবর্তে আতঙ্ক ও ভয়ের অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে।
🟥 দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুভূতি-মৃতদেহ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয় এবং স্বাধীনভাবে অবস্থান বা চলাফেরা করা যায়। এসময় এতটাই হালকা লাগে যে কেউ কেউ শূণ্যে ভেসে বেড়ানোর কথাও বলেছেন।
🟥 ক্ষণিকের জন্য চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাওয়া-হঠাৎ করে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায় এবং এসময় কোথাও টেনে নিয়ে চলার অনুভূতি অনুভূত হয়।অন্ধকার পর্যায়টা খুবই সংক্ষিপ্ত থাকে।
🟥 আলো দেখা ও আলোকময় হয়ে উঠা-হঠাৎ করে চারিদিক অস্বাভাবিক আলোকিত হয়ে উঠে।নিজেকেও মনে হয় আলোর পোষাক পরিহিত ধবধবে সাদা।এ সময় একটি লম্বা আলোর টানেল দেখা যায়।
🟥 আলোর টানেলের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা-নিজে ভাসতে ভাসতে বা ফেরেশতারা সঙ্গী হয়ে আলোর টানেলের মধ্য দিয়ে অজানা গন্তব্যের দিকে চলতে থাকে।
➡️ আর কী দেখতে বা শুনতে পেয়েছেন ?
উপরের ৫টি ধাপে প্রধানত অনুভূতির কথা ব্যক্ত হয়েছে।কিন্তু Near Death Experience (NDE) এর অভিজ্ঞতা অর্জনকারীগণ আর যা যা দেখেছেন তার একটি নাতিদীর্ঘ তালিকা দেওয়া হলো-
➡️ মৃত্যুক্ষণে চিকিৎসক বা উপস্থিত আত্মীয়-স্বজনদের কর্ম দেখেছেন অনেকেই।
➡️ ফেরেশতা বা এ জাতীয় প্রাণের উপস্থিতি যারা অতিমাত্রায় আলোকিত অবস্থায় ছিলেন।
➡️ কেউ কেউ মৃত আত্মীয় স্বজনদের ক্ষেত্র বিশেষে উপস্থিতি দেখেছেন।
➡️ নিজের পুরো জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক বা প্রিয় ঘটনাগুলো চোখের সামনে দৃশ্যমান দেখেছেন।
➡️ বিভিন্ন আদেশ বা বর্ণনা শুনতে পেয়েছেন অনেকে । সবচেয়ে বেশি যে আদেশটির কথা অভিজ্ঞতা অর্জনকারীরা বলেছেন তা হলো নিজ থেকে পুনরায় প্রবেশের নির্দেশ যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তা করতে অনাগ্রহী ছিলেন।
➡️ মাত্র কয়েকক্ষেত্রে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে তীব্র আলো হিসাবে দেখার বা তাঁর নির্দেশ শোনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন অনেকে।
সূত্র:
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com