নাটোর প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: নাটোরে ফয়সাল হোসেন নামে ১৫ বছর বয়সী এক দোকান কর্মচারীর আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নাসিম উদ্দিন নাসিম নামের আইডি থেকে ভিডিওটি আপলোড হলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডর ভিডিওতে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে কিশোরকে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।
এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা হলে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া আর-ওয়ান ফাইভ মডেলের একটি মোটরসাইকেলও পুলিশ জব্দ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার নবীনগর গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে একরাম হোসেন সুমন (৩৫) এবং শহরের চকরামপুর এলাকার আনিসুর রহমানের ছেলে মো. আবির (২৬)।
নির্যাতনের শিকার কিশোর ফয়সালের হোসেনের দোকান মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক লেনদেনের সূত্র ধরে অপর ব্যবসায়ী একরাম হোসেন সুমনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সুমনের মদদে তার সহযোগী রবিউল আওয়াল বাপ্পি, আবির, মোহাম্মদ মনি তার পেটে ধারালো চাকু ধরে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তাকে ও তার দোকানের কর্মচারী ফয়সালকে জিম্মি করে। এসময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির চাবিও হাতিয়ে নেয় তারা। পরে তাদের শহরের কানাইখালী এলাকায় যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি আহমেদ এবং তার ভাই যুবলীগ সদস্য রবিউল আওয়াল বাপ্পি, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শুভসহ বাকিরা সেখানে যোগ দিয়ে তার স্ত্রীর গহনা ও নগদ টাকা নিয়ে আসতে বলে। সেইসাথে তার দোকান কর্মচারী ফয়সালকে চোর বলে দাবি করে তার কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে রবিউল আওয়াল বাপ্পি এবং তার সহযোগীরা লোহার প্লাস দিয়ে ফয়সালের বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলে।’
এসময় পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শুভকে নির্যাতনের শিকার কিশোরের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, চুরির ঘটনা শিকার করে নিতে। নইলে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবে। তাতে তার ১০ বছরের সাজা হবে।
আব্দুস সালাম আরও জানান, তিনি তার ব্যবহৃত আর-ওয়ান-ফাইভ মডেলের মোটরসাইকেলটি আসামিদের দিলেও তারা আরও দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। একইসঙ্গে এই ঘটনা পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। পরে টাকা আনার কথা বলে সেখান থেকে তিনি থানায় এসে ঘটনাটি পুলিশকে জানান।
পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতনের শিকার কিশোরকে উদ্ধার ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করে।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও একরাম হোসেন সুমন, মো. আবিরকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় রোববার সকাল ১০টার দিকে ব্যবসায়ী একরাম হোসেন সুমন, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি আহমেদ, তার ভাই যুবলীগ সদস্য রবিউল আওয়াল বাপ্পি, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল শুভসহ ৮ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন দোকান মালিক আব্দুস সালাম।
নাটোর জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব বলেন, রনি আহমেদ, রবিউল আওয়াল বাপ্পি ও আব্দুল্লাহ হিল শুভর যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা একটি নৃশংস ঘটনা। যারাই এর সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘পুলিশ খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে একরাম হোসেন সুমন ও আবিরকে গ্রেপ্তার করে এবং ভুক্তভোগী ফয়সাল ও আব্দুস সালামের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আহত ফয়সালকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com