স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: আম আমাদের দেশের জাতীয় ফল। আম এমনই একটা লোভনীয় খাদ্য যেটা কেউ পছন্দ করেন না এরকম পাওয়াই যায় না। আম সকলেই পছন্দ করেন। আর আম বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন ফজলী, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আমরুপালী ও আশ্বিনা ইত্যাদি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই আমার মনে হয় হিমসাগর আমটা বেশি পছন্দ করেন। আম যেমন খান না কেন কাঁচায় খান না কেন আর পাকায় খান না কেন প্রত্যেক ভাবেই শরীরে উপকার করে থাকে আম। অনেক ক্ষেত্রে পাকা আমের চেয়ে কাঁচা আমের গুণ অনেক বেশি। কাঁচা আম বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে কারণ কাঁচা আমের উপকারিতা বেশি। কাঁচা আম আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। আজকের এই প্রতিবেদনে এমনটিই জানাচ্ছেন দেশের খ্যাতিমান পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা।
উপকারীতা
➡আম চোখ ও রাতকানা রোগের ভাল হতে সাহায্য করে। কারণ কাঁচা আমের ভিটামিন এ ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ
➡আমে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে স্বতেজ রাখতে সাহায্য করে আম।
➡আম খেলে ঘুম ভালো হয়। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে তারা রাতে খাওয়ার পরে একটা করে আম খেয়ে দেখতে পারেন ঘুম ভালো হবে।
➡পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের ভিটামিন সি এর পরিমাণ একটু বেশি। সেই কারণে কাঁচা আমটা যতটা পারবেন বেশি খাবেন।
➡এছাড়াও আমে বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে আম।
➡আমের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । যেটা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন ধরুন ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিউকেমেনিয়া, প্রোস্টেট ক্যান্সার এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে আম।
➡আমে খনিজ লবণের পরিমাণ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সেই কারণে আপনার দাঁত, নখ, চুল গুলো মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
➡অনেকেরই ধারণা আছে আম খেলে হজম হয় না পেট খারাপ হয়। এই সমস্যাটা তখনই হবে যখন আপনি অতিরিক্ত আম খাবেন। আপনি যদি কম করে আম খান তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিই হবে।
➡ আম শরীরের ক্ষয় রোধ করে।
➡এছাড়াও আমে রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ও টারটারিক অ্যাসিড। যেটা শরীরের খার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
➡কাঁচা আমের প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। সেই কারণে যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রয়েছে তারা যদি আম খায় তাদের এই সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।
➡ আম শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
➡পাকা আম খেলে আমাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। পাকা আম খাওয়ার ফলে গ্লোট্রনিক অ্যাসিড আমাদের মস্তিষ্কের কোস গুলোকে উজ্জীবিত করে
➡হৃদরোগ ও অ্যালজেমা প্রতিরোধ করে পাকা আম।
➡পাকা আম মিনারেল এর ঘাটতি মেটায়। আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে তাই শারীরিক প্রশিক্ষণের পর শরীরের পটাশিয়াম ঘাটতি কমাতে আম বেশ উপকারী।
➡পাকা আম ঠান্ডা বা ফ্লও দূর করতে সাহায্য করে।
➡গর্ভবতী মায়েদের জন্য আম খুব উপকারী। আমি প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা গর্ভবতীদের জন্য এবং গর্ভে থাকা শিশুর জন্য খুব উপকারী।
➡শরীরে 'ভিটামিন সি' র প্রচুর অভাব হলে স্কার্ভির মতো রোগ হতে পারে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
আমের অপকারিতা :
➡আম অনেকের এলার্জি থাকে।
➡বেশি আম খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে।
➡আমে প্রচুর সুগার থাকে তাই ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য আম ক্ষতিকর।
➡কিডনির সমস্যা যাদের আছে তাদের আম খাওয়া উচিত নয়। আম খেলে কিডনির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
➡যারা অ্যাজমাতে ভুগছেন তারা নিয়মিত আম খাবেন না।
➡আমে আরো কিছু উপাদান আছে যেগুলো শরীরের ক্ষতি কর। যেমন ফিটোকেমিক্যাল, কম্পাউন্ড তথা গ্যালিক অ্যাসিড,ম্যাঙ্গফেরিন, কোয়ানেরটিন এবং টেনিন বা কস জাতীয় উপাদান এই উপাদানগুলি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
সুইডেনের স্টোকহোম ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২৭ জন অংশগ্রহণকারী ১২ সপ্তাহ ধরে ১০০ কিলোক্যালরিযুক্ত তাজা আম খেয়েছিলেন। তারা রক্তে গ্লুকোজ হ্রাস, সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির ক্ষমতাতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখায়। শুধু তাই নয়, আম খাওয়ার পর শরীরের ওজন, চর্বির শতাংশ, ইনসুলিন বা লিপিড প্রোফাইল বা রক্তচাপের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না। গবেষণায়, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূল প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আম খাওয়ার পরে কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকির কারণগুলি নিশ্চিতভাবে পাওয়া গেছে। অন্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আম খেলে ওজন কমে না, বাড়ে। আসলে, আমে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, যা ওজন বাড়াতে পারে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com