Laxmipur-Polytechnic-Institute
লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে ১৩৩০ টাকার রাউটার কেনা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে ১৩৩০ টাকার রাউটার কেনা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি,  উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কেনাকাটায় রীতিমতো ‘পুকুর চুরি’র ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্য যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের চেয়ে প্রতিটি সরঞ্জামের দাম ১০ থেকে ৯০ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখানো হয়েছে। দেখা যায়, ১,৩৩০ টাকার রাউটার কেনা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। যা পুকুর চুরি বললে হয়তো ভুল হয়ে যাবে তবে দিনে দুপুরে ডাকাতি বলা যেতে পারে। 

 

 

 

নিয়মবহির্ভূত টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং কয়েক কোটি টাকার কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্তে গিয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ উঠেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটেছে।

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ল্যাবের যন্ত্রাংশ কেনায় বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কর্তৃপক্ষ কেনাকাটার যে তালিকা দেখিয়েছেন, সেখানে প্রকৃত বাজারদরের সঙ্গে বড় ধরনের অমিল পাওয়া গেছে। রশিদে টিপি লিংক ব্র্যান্ডের ডব্লিউআর ৮৪০ মডেলের একটি রাউটারের দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ সাড়ে ৩৬ হাজার টাকা। অথচ এটির বাজারমূল্য মাত্র ১৩৩০ টাকা! একই ব্র্যান্ডের আরেকটি ডব্লিউটি ৮৪১এন মডেলের তিনটি রাউটার কেনা হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকায়। বাজারে এর একটির দাম ১ হাজার ৫৫০ টাকা।

 

 

 

এ ছাড়া আর্চার সি২০ মডেলের ওয়াইফাই রাউটার ৭টির মূল্য ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এই মডেলের রাউটারের বাজারমূল্য ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। ডি লিংক নেটওয়ার্কিং কেবল টেস্টার দুটির দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার করে ৬ হাজার টাকা। যার প্রত্যেকটির বাজারমূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকার মধ্যে। পিসি ও নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স টুলস কিট দুটির দাম ধরা হয়েছে ১১ হাজার টাকা। যেখানে একটির দাম পড়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। একই টুলস কিট ১ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

 

 

 

 

অন্যদিকে  অপটিক্যাল স্প্লিসার মেশিন কেনা হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। যার প্রকৃত বাজার মূল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা। সাইনটেক ২৫০ওয়ানএ অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন সিস্টেম ট্রেইনারের মূল্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। যদিও এটির বাজার মূল্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এদিকে ১২টি কম্পিউটার কেনা হয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে ২৫ হাজার টাকা বেশি খরচ দেখানো হয়েছে। এইচপি ১৩৫ডব্লিউ ব্র্যান্ডের প্রিন্টার উইথ স্ক্যানারের বাজারমূল্য ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা হলেও তারা কিনেছেন ৩০ হাজার টাকায়। এ রকম তিনটি প্রিন্টার কেনা হয়েছে। বেনকিউ আরই৬৫০১ মডেলের চারটি ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ডের দাম পড়েছে ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। যার প্রত্যেকটি কেনা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। অথচ একই মডেলের হোয়াইটবোর্ড বাজারে পাওয়া যায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। আর অটোডেস্ক ২০০৭ মডেলের অটোকার্ড প্রোগ্রামের মূল্য ৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, যদিও এর মূল্য ৭৯৯ টাকা মাত্র।

 

 

জানা গেছে, টেন্ডারের মাধ্যমে এ কেনাকাটায় বড় দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্তে যান দুদক (চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর) সমন্বিত চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। দুদক সূত্রে জানা গেছে, মালামাল সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ লাখ টাকার দুটি বিলের কপি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, মেসার্স জে অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে। আরেকটিতে দেখা গেছে, এসএআরএস টেকনিক্যাল সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে ২৩ লাখ টাকার মালামাল। সেখানে রাউটারের দাম দেখানো হয়েছে অকল্পনীয়।

 

 

 

অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে নিয়ে সরবরাহকারী ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম। কেনাকাটায় দুর্নীতির অর্থ ভাগবাটোয়ারাও করেছেন নিজেদের মধ্যে। এ ছাড়া অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের একাধিক মালামালও আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।মনিরুল ইসলামসহ টেন্ডারে অংশ নেওয়া কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে জানান, কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কাজ সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে দেওয়া হচ্ছে।তাদের অভিযোগ, তালিকায় থাকা প্১ম, ২য় বা ৩য় প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে ৫ম ও ৬ষ্ঠ অবস্থানে থাকা পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার কাজ দেওয়া হয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা টেন্ডার পাননি, তারা কাগজপত্র বা বিভিন্ন ত্রুটির কারণে পাননি। তারাই ২০২২-২৩ অর্থবছরের টেন্ডার দরপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এর আগে তারা (ঠিকাদার) আমার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিটও করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন; আমি জবাব দিয়েছি।’

 

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.