আজকের দিনটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, সমুদ্রের তলদেশে যে পরিবেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে সেটাকে হিমশীতল তাপমাত্রা ও গভীর অন্ধকারের জন্য ‘মিডনাইট জোন’ বলা হয়। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে বেশ একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ডুবোযানটি উদ্ধারকাজে। এই ডুবোযানে ৫ জন আরোহী ছিলেন।
ঐ ৫ পরিবারের মুখপাত্র ম্যাথিউ জোহান বলেন, তিনি আশা করেন মি. নারজিওলেটের অভিজ্ঞতা এবং সামরিক কর্মজীবন ডুবোযানে থাকা অন্যদের আশ্বস্ত করবে, যদিও উদ্ধার অপারেশনের ফলাফল তার উপর নির্ভর না করে।
তবে ড. কেন লেডেজ মনে করেন এই সময়সীমা চূড়ান্ত নয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইবারবেরিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত লেডেজের মতে, বিষয়টি নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর, টাইটানে থাকা কেউ কেউ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকতে পারবেন। এটি নির্ভর করছে কতটা কার্যকরভাবে তারা অক্সিজেন সংরক্ষণ করতে পারে তার ওপর। কাঁপুনিতে অনেক বেশি অক্সিজেন ব্যয় হবে। কিন্তু তারা যদি একে অপরকে জড়িয়ে থাকেন তাহলে উষ্ণতা তৈরি হবে। এতে অক্সিজেনের ব্যবহার কমবে। তার মতে, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার একটি ধীরগতির বিষয়। বাতির সুইচ বন্ধ করার মতো নয়, এটি অনেকটা পাহাড়ে চড়ার মতো। তাপমাত্রা শীতল হবে ও শরীরে পরিবর্তন আসবে কত দ্রুত পাহাড়ে চড়া হচ্ছে তার ভিত্তিতে।
টাইটানের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে না জানার বিষয়টি স্বীকার করে ড. লেডেজ বলছেন, পরিস্থিতি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যদিও এটি খুব সুখকর আলোচনা না। কেউ কেউ অপরের চেয়ে বেশি জীবিত থাকতে পারেন। এর আগে বুধবার মার্কিন কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাউগার বলেছিলেন, তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে অনেক বিষয় এখনও অজানা। বিবিসিকে তিনি বলেছিলেন, টাইটানে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তি অক্সিজেন ব্যবহারের মাত্রা আমরা জানি না।
ড. লেডেজ বলছেন, নিখোঁজ ডুবোযানে থাকা ব্যক্তিরা শুধু অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন তা নয়। হয়ত এটি ইলেক্ট্রিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। টাইটানের ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডিঅক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা। কারণ অক্সিজেনের মাত্রা যখন কমতে শুরু করবে তখন ক্রুদের প্রশ্বাসে কার্বন ডিঅক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকবে। যার পরিণতি হবে প্রাণঘাতী। এক সময় তা ঘুমের ঘোর তৈরি হবে, যা অ্যানেসথেটিক গ্যাসে পরিণত হবে এবং ঘুমিয়ে পড়তে পারে ত্রুরা। কারও শরীরে রক্তের প্রবাহে বেশি গ্যাস থাকাকে হাইপারকেনিয়া বলা হয়। চিকিৎসা করা না হলে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সাবেক সাবমেরিক ক্যাপ্টেন রিয়ান রামসে বলছেন, টাইটানের ভিডিওতে তিনি কার্বন ডিঅক্সাইড নিঃসরণ ব্যবস্থা দেখেননি। এটি তার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে।
[caption id="attachment_113051" align="alignleft" width="900"] সর্বশেষ টাইটান সাবমার্সিবল সম্পর্কে যা জানা গেলো[/caption]
একই সময়ে ক্রুদের হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শরীর শীতল হয়ে গেলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ক্যাপ্টেন রামসির মতে, টাইটান যদি সাগরের তলদেশে থাকে তাহলে তামপাত্রা শূন্য ডিগ্রির কম হতে পারে। আর যদি বিদ্যুৎও না থাকে তাহলে কোনও ভেতরে তাপ উৎপাদনের কোনও সুযোগ থাকবে না।
যদিও ড. লেডেজের মতে, হাইপোথার্মিয়া ক্রুদের ‘বন্ধু’ হতে পারে। তারা যদি প্রচণ্ড শীতে চেতনা হারিয়ে ফেলেন তাহলে হয়ত বেশিক্ষণ জীবিত থাকবেন। কারণ তখন তাদের শরীর পরিস্থিতির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাপ খাইয়ে নেবে। উদ্ধারকর্মীরাও বিষয়টি জানেন। অবশ্য এর অসুবিধাও আছে। তারা অচেতন হয়ে থাকলে নিজেদের রক্ষার জন্য কিছু তারা করতে পারবে না। যেমন, শব্দ সৃষ্টি করে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com