নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহী মহানগরীতে দূর্নীতিবাজ ডাক্তারসহ অসংখ্যা দুর্নীতির কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এমন ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার সরকারী অধিগ্রহণকৃত ( একোয়ার ) সম্পত্তি দখল করে ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিও দখল করেছে এমন ভূমিদস্যু ডাক্তারেরও সন্ধান মিলেছে ।
ঐ ডাক্তারের নাম ডা: নুরুল। তিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞ। প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যাক্তি মালিকানা জমি জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ আনেন রাজশাহী মহানগরীর লক্ষিপুরের হ্বাজী আবু বকরের একমাত্র সন্তান মাফিজুল ইসলাম মুন্না। কিন্তু গভীর অনুসন্ধানে প্রমানিত হয়েছে চক্ষু ডাক্তার নুরুল শুধু ব্যাক্তি মালিকানার জমি দখল করে ক্ষান্ত হননি বরং তিনি ১৯৬০-১৯৬১ সালের সরকারী অধিগ্রহণকৃত ( একোয়ার ) সম্পত্তি দখল করে বসে আছেন। উক্ত জমিটি রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বিপরীতে।
সরেজমিন রাজশাহী আদালতে ও রাজশাহী বোয়ালিয়া এসিল্যান্ড অফিসের পর্যালোচলা ও নথি অনুযায়ী - রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বিপরীতে বর্তমান কবর খনন কমিটির পাশে ১৯৬১ সালে গরিমন বেওয়ার কাছ থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে। যাহার কেস নং এল.এ - ১৫৮/৬০-৬১। কিন্তু পরবর্তীতে গরিমন বেওয়ার ঐ অধিগ্রনের জমি অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন তিনি ১৯৬১ সালে সরকারের কাছ থেকে ওই টাকা গ্রহণ করেন ( সংবাদে ১৯৬১ সালের অধিগ্রহনের কাগজ সংযুক্ত)। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পরেও অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পরেও ওই জমির মালিক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ছিল এবং এখন পর্যন্ত আছে। এরপরে ২০২১ সালে গরিমন বেওয়ার কয়েকজন ওয়ারিশ ৪টি জাল দলিল বের করে। যার ক্রমিক নং যথাক্রমে (১) দলিল নং - ১১৮২০-১২০-২১৬-২১৮ (২)দলিল নং - ১৭০৯/২৮/০২/২০২১ ইং (৩) ৫৮৬১/৫৮৩৬ ২০/০৯/২০২১ ইং (৪) দলিল নং ২৮০৫ ০৪/০৪/২০২১ ।
পরবর্তীতে ডা: নুরুল হ্বাজী আবু বকরের জায়গায় জবর দখল করে কাজ করতে গেলে হ্বাজী আবু বকরের একমাত্র সন্তান মফিজুল ইসলাম মুন্না বাধা দেন। ঐ সময় ডা: নুরুল মফিজুল ইসলাম মুন্নার বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত সেই মামলা বাতিল করে দেয় এবং মফিজুল ইসলাম মুন্নাকে ডা: নুরুলের বিরুদ্ধে মামলা করার আদেশ দেয়। যার মামলা নং পরবর্তী সেই মামলায় আদালত ডা: নুরুলের নির্মান কাজ বন্ধ করার জন্য ১৫ দিনের আদেশ দেয়। কিন্তু আদালতের এই ১৫ দিনের আদেশ অমান্য করলে আদালত পুনরায় ২১/১১/২০২৩ ইং তারিখে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। যার মামলা নং - ৩০৩/২২।
এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা: নুরুল প্রকৃত তথ্য গোপন করে তার সহসঙ্গী হিসেবে ডাক্তার শফিউল্লাহ, ডাক্তার মোজাম্মেল, ডাক্তার সুব্রতসহ মোট ১৪ জন ডাক্তারকে নিয়ে সরকারী অধিগ্রহণের জমিসহ হ্বাজী আবু বকরের জমিতে রাতারাতি কাজ করে চলেছেন।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল মাস্টার জানান রাজশাহী মহানগরীর ভেতরে সরকারী অধিগ্রহণের জমি একজন ডাক্তার সবাইকে ম্যানেজ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তা এখন বড় প্রশ্ন।
রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের পাশের বাসিন্দা ও সাবেক সহকারী ভূমি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান - ডা: নুরুল গ্রুপ এখন রাজশাহীতে দুর্ধর্ষ। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী অধিগ্রহণের জমিসহ ব্যাক্তি মালিকানার জমি কিভাবে রাতারাতি দখল করে নির্মান কাজ করছে তা দেখে আমি বিস্মিত।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তবুও থেমে থাকেনি ভূমিদস্যুতার দৌরাত্ম।
পুর্বে প্রকাশিত সংবাদ সমূহের নিচের লিংকে দেয়া হইল
▶ রাজশাহীতে চোখের ডাক্তার নুরুল যখন ভূমিদস্য - দৈনিক নববার্তা
https://dailynobobarta.com/news/3975/
▶ পেশায় তিনি ডাক্তার কিন্তু কর্মকাণ্ডে তিনি ভূমিদস্যু - দৈনিক দেশের সংবাদ
▶ রাজশাহীতে চোখের ডাক্তার যখন ভূমিদস্যু : উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন
https://uttorbongoprotidin.com/dr_nurul_eye_specialist_rajshahi/
এদিকে ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম মুন্না বলেন - আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞার অর্ডার নিয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশের কাছে গিয়েছি, এরপর পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়েছি এমনকি ৯৯৯ এ ফোন করে জানিয়েছি ডা: নুরুল জাল কাগজের মাধ্যমে সরকারী অধিগ্রহণের জমি দখল করে এবার আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখলে নেমেছে। কিন্তু দু:খের বিষয় আজ জানুয়ারী মাসেও কাজ চলমান রয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসন তো নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে পারছেনা তবে আমার জমি রক্ষার দ্বায়িত্ব আর কে নেবে ?
সার্বিক বিষয়ে ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম মুন্না আরোও বলেন - যেহেতু আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে আমি কোন আন্দোলনে যাবোনা। নির্বাচন শেষ হলেই আমি আমি বৃহত্তর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করব ইনশাআল্লাহ। এতে যদি আমাকে ‘ হাঙ্গার ষ্ট্রাইক ‘ করতে হয় তবুও আমি করব।তবে যতক্ষন আমি আমার জমি ফিরে পাবোনা ততক্ষন সকল রকমের আন্দোলনে আমি চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এদিকে রাজশাহী বড়কুঠির এসিল্যান্ড শাহিনের সাথে মযোগাযোগ করা হলে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান — ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম মুন্না জমি নিয়ে কোর্টে একটি মামলা দ্বায়ের করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি তদন্ত করে কোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাই। যে প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে উক্ত জমির মালিক মৃত আবু বক্কর কিন্তু বর্তমানে ছেলে মেয়েরাই উক্ত জমির ওয়ারিশ। পরবর্তীতে রাজশাহী জেলা জজ আদালত উক্ত জায়গার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু ডা: নুরুল আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মান কাজ চালয়ে যাচ্ছেন। যা আদালত অবমাননার শামিল। মফিজুল ইসলাম মুন্না খারিজ বাতিলের দরখাস্ত করেছেন যা শুনানী আগামী ২১/০১/২০২৪ ইং তারিখে শুনানি হবে । তবে আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অফিসিয়ালি আমি ডা: নুরুলকে সকল প্রকার নির্মান কাজ থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছি।
অন্যদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জানান - ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তবে সরকারী অধিগ্রহণের জমি যে তিনি জাল কাগজের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন তা জানা ছিলনা। তবে একজন ডাক্তার হয়ে কিভাবে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও তিনি আইন পরিপন্থি কাজ করে চলেছেন তা উদ্বেগের বিষয়। তবে নির্বাচন শেষে ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনকেও এই বিষয়ে অবহিত করা হবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com