নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: ১৯২৫ সালে হরি সিং নামক এক হিন্দু কাশ্মিরের সিংহাসনে বসে। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময়েও মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মির সেই হিন্দু রাজার শাসনে ছিলো। সে সময় কাশ্মিরের প্রায় ৮০% মানুষ ছিল মুসলমান। দেশ বিভাগের সময় সেও কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। তা হতেও পারতো। কিন্তু হঠাৎই ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর কিছু পার্বত্য দস্যুদের আক্রমণের শিকার হয় দুর্ভাগা কাশ্মিরের অধিবাসীরা। সে সময় দস্যুদেরর হাত থেকে বাঁচতে ও ভারতীয় সেনাদের সাহায্য লাভের আশায় ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় হরি সিং, অথচ কাশ্মিরের প্রায় ৮০% মুসলমান পাকিস্তানের সাথেই যোগ দেওয়ার পক্ষে ছিল। হরি সিং এর সেই ভারতের সাথে হাত মিলানোর অঘটন আজো কাশ্মিরিদের গলার কাঁটা হয়ে আছে। যে কাঁটা দূর করতে ব্যর্থ ভারতের মতো বিশ্বের বৃহৎ ও উদার গণতন্ত্র।
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরি সিং ‘ Instrument of Accession’ এ স্বাক্ষর করে যা পরের দিন ভারতের সাধারণ রাজ্যপ্রশাসক কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। এই স্বাক্ষরের পরই হামলাকারীদের উচ্ছেদ করার জন্য ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। কিন্তু তীব্র শীত থাকায় তারা সবাইকে বিতাড়িত করতে পারে নি। এমতবস্থায়, ভারত বিষয়টিকে জাতিসংঘের নিকট উপস্থাপন করে। জাতিসংঘ তখন পাকিস্তান ও ভারত উভয়কেই তাদের দখলকৃত ভূমি খালি করে দিয়ে গণভোটের আয়োজন করতে বলে। কিন্তু ১৯৫২ সালে ভারত এ গণভোটকে নাকচ করে দেয়, কারণ তারা জানত যে গণভোটে জনগণের রায় ভারতের বিপক্ষেই যেত।ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু থেকেই ছিল। সেই দ্বন্দ্ব ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধে রূপ নেয়। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। ১৯৬২ সালে ইন্ডিয়ার অধীনে জাম্মু ও কাশ্মিরের ৬০% অঞ্চল (জাম্মু, কাশ্মির ভ্যালি ও লাদাখ) ছিল, পাকিস্তানের অধীনে ৩০% (গিলগিত-বালতিস্তান ও আজাদ কাশ্মির) এবং চীনের অধীনে ১০% অঞ্চল (আকসাই চিন) ছিল।
জাম্মু ও কাশ্মীর পরিচিতিঃ
জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারত এখনও তার সর্ব উত্তরের প্রদেশ হিসেবে বলবৎ রেখেছে। এর অধিকাংশই হিমালয় পাহাড়ে অবস্থিত। এ প্রদেশের তিনটি অঞ্চল রয়েছে- জাম্মু, কাশ্মির ভ্যালি ও লাদাখ (ছোট তিব্বত)। কাশ্মিরের কিছু অংশ ভারত নিয়ন্ত্রিত ও কিছু অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ছিল।
কাশ্মীরের দুর্ভাগ্যের কারণ ও ইতিহাসঃ
তবে কাশ্মিরীদের বর্তমান গোলামী দশার জন্য শুধু ভারতই দায়ী নয়, আরও কিছু লোক দায়ী। তারা কারা? তারা হল কাশ্মীরের কিছু নেতাবৃন্দ। স্বাধীনতা খয়রাতের মাল নয়, এটি অতি কষ্টে অর্জনের বিষয়। এজন্য অপরিহার্য হল, যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব এবং জনগণের কোরবানি। মুসলমানদের অপূরণীয় ক্ষতি শুধু অমুসলিম শত্রুরাই করেনি। বড় বড় ক্ষতি করেছে মুসলমান নামধারি সেকুলার ও ইসলামের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষী জাতীয়তাবাদী মুনাফিক নেতারা। আজ মুসলিম বিশ্ব যেরূপ বিভক্ত, শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন তার কারণ তো তারাই। বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মুসলমানদের ন্যায় কাশ্মিরীদেরও স্বাধীন হওয়ার মোক্ষম সুযোগ এসেছিল। ভারতবর্ষের বুকে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন দেশ রূপে যারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখতেন তারা কাশ্মির নিয়ে যতটা ভাবতেন কাশ্মিরীদের নিজেদের নেতারাও ততটা ভাবেনি। ক্যাম্ব্রিজের ছাত্র চৌধুরি রহমত আলী তার আবিস্কৃত পাকিস্তান শব্দটির ‘ক’ অক্ষরটি নিয়েছিলেন কাশ্মিরের প্রথম অক্ষর থেকে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার একমাত্র যে ট্রেনটি নতুন স্বপ্নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে সেটি ধরতে তারা দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়। এর জন্য দায়ী তাদের ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী সেকুলার নেতারা। এ নেতাদেরই একজন হলেন শেখ আব্দুল্লাহ। কাশ্মিরের অমুসলিম ডোগরা রাজার বিরুদ্ধে তুমুল গণ আন্দোলনের সূত্রাপাত হয় ১৯৩১ সালে এবং সেটি জম্মুতে রাজার সৈন্যদের দ্বারা পবিত্র কুরআনের অবমাননা হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তখন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুসলিম কনফারেন্স এবং তার নেতা ছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ। তিনি ছিলেন চিন্তা-চেতনায় সেকুলার এবং ইসলামে অঙ্গিকার শুন্য। পাকিস্তানের স্বপ্ন তার ভাল লাগেনি। অথচ পাকিস্তান গড়ার কাজ চলছিল তার ঘরের পাশে। তার ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল কংগ্রেস নেতা জওহার লাল নেহেরুর সাথে। নেহেরুও ন্যায় তিনিও মুসলিম লীগের দ্বি-জাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না।
[caption id="attachment_112817" align="alignleft" width="1065"] জেনে নিন জাম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস[/caption]
বিশ্বাসী ছিলেন ভারতীয় এক জাতি তত্ত্বে।ফলে মুসলিম লীগের সাথে সম্পর্ক না গড়ে তিনি সম্পর্ক গড়েন কংগ্রেসের সাথে। তার কাছে যেটি অধিক গুরুত্ব পায় সেটি কাশ্মিরের মুসলমানদের ঐক্য নয়, বরং সেটি কাশ্মিরের হিন্দু পন্ডিতদের সাথে একাত্ব হওয়া। ফলে দুই টুকরায় বিভক্ত হয় কাশ্মিরী মুসলমানেরা। ১৯৩৯ সালের ১১শে জুনে শেখ আব্দুল্লাহ মুসলিম কনফারেন্সের নাম পাল্টিয়ে রাখেন ন্যাশনাল কনফারেন্স। এভাবে একতার গুরুত্ব যে সময়টিতে সর্বাধিক ছিল তখন অনৈক্যই তীব্রতর হয়। মুসলিম কনফারেন্স দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিপরীতে মুসলিম কনফারেন্সের নেতৃত্ব দেন চৌধুরি গোলাম আব্বাস এবং মির ওয়াইজ ইউসুফ শাহ। মুসলিম কনফারেন্স পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার পক্ষে জোর দাবী জানায়।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com