নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে খুলনা-দর্শনা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী এবং কনসালটেন্ট সার্ভিস ভারতীয় স্টুপ কনসালটেন্ট ও আরভি এসোসিয়েটস জয়েন্ট ভেঞ্চার’র পক্ষে মো. আসাদ। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা দর্শনার মধ্যে পুরনো লাইনের পাশাপাশি নতুন ১২৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তিমূল্য ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত শরীফ খান এবং ভারতীয় কনসালটেন্সি সার্ভিস আরভি এসোসিয়েট এবং স্টুপ কনসালট্যান্টস লিমিটেড জয়েন্ট ভেঞ্চার’র পক্ষে অভিক ভট্টাচার্য। কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তিমূল্য ৭৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৯০ টাকা। এই প্রকল্পে ৫৭ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। উভয় প্রকল্পই ভারতীয় এলওসি এর অর্থায়নে হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করেন। দেশের প্রতিটি জেলায় রেল সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ চলমান আছে। আমাদের দেশের রেল ব্যবস্থা ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ দ্বারা দুই অঞ্চলে বিভক্ত। আমরা পর্যায়ক্রমে সকল রেল ব্যবস্থাকে ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। ভারতের সকল রেললাইন ব্রডগেজে। আমরাও দেশের রেল ব্যবস্থাকে একরকম ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। এছাড়া রেললাইন সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে সবগুলোকেই আমরা ব্রডগেজ আকারে করছি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রেস উইং জানায়, উভয় প্রকল্পই ভারত সরকারের দ্বিতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি)-এর অধীনে বাংলাদেশ সরকারকে প্রদত্ত ২ বিলিয়ন ডলার রেয়াতি ঋণের সহায়তায় সূচিত হতে যাচ্ছে। তারা জানায়, ভারত সরকারের লাইন অফ ক্রেডিট পোর্টফোলিওর প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার।
খুলনা-দর্শনা রেললাইন প্রকল্পটি ভারত সরকারের লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে মোট ৩১২.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই রেললাইনের মোট দৈর্ঘ্য ১২৬.২৫ কিলোমিটার (ডাবল লাইন) যার মাঝে রয়েছে ১৪.৪০ কিলোমিটার লুপ লাইন এবং ১৪৭টি গার্ডার ব্রিজ ও কালভার্ট। এই প্রকল্পটি খুলনা-ঢাকা, খুলনা-চিলাহাটি, খুলনা-রাজশাহী রুটে এবং মংলা বন্দর ও দর্শনা-গেদের মধ্যে যোগাযোগকে উন্নত করার পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এটি হরিয়ান, ভেড়ামারা, সান্তাহার, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন, আমানুরা, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও এবং রংপুরে প্রস্তাবিত জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে জ্বালানি পরিবহনকে সহজ করে দেবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের জন্য চুক্তিটি করা হয়েছে এসটিইউপি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড, এএআরভিইই অ্যাসোসিয়েটস্ আর্কিটেক্টস্ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস্ প্রাইভেট লিমিটেড এবং ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে।
এদিকে পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইন প্রকল্পটি ভারত সরকারের লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে মোট ১২০.৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল পার্বতীপুর এবং কাউনিয়া জংশনের মধ্যে ৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা যার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট-কাউনিয়া-রংপুর-পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় সেকশন, কাঞ্চন-বিরল-বিরল সীমান্ত সেকশন এবং শান্তাহার-বগুড়া-কাউনিয়া-রংপুর-পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় করিডোর অংশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও লাইনের পরিবহন ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে। এটি বিরল সীমান্ত দিয়ে আন্তঃসীমান্ত যাতায়াত সহজ করতেও সহায়তা করবে। এছাড়াও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খুলনা অঞ্চল থেকে সরাসরি রংপুর বিভাগে জ্বালানি পরিবহন করা যাবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের জন্য চুক্তিটি করা হয়েছে এসটিইউপি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড, এএআরভিইই অ্যাসোসিয়েটস্ আর্কিটেক্টস্ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস্ প্রাইভেট লিমিটেড এবং ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে।
উল্লেখ্য ভারত সরকারের রেয়াত যোগ্য লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে পরিচালিত এই গুরুত্বপূর্ণ রেল সংযোগ প্রকল্পসমূহের জন্য কনসালটেন্সি সার্ভিসের চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমগ্র অঞ্চলের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ঢাকা ও দিল্লি।এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, ভারতীয় হাই কমিশনের প্রথম সচিব সালোনি সাহাইসহ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে, ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক প্রতিনিধি এবং কনসালট্যান্ট সার্ভিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com