In a village in Bangladesh there is everything but there are no people
বাংলাদেশের একটি গ্রামে সব আছে শুধু মানুষ নেই

বাংলাদেশের একটি গ্রামে সব আছে শুধু মানুষ নেই

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::    গ্রাম আছে, মানুষ নাই! হঠাৎ কথাটি শুনে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। আসলেই এমন একটি মানুষ শূন্য গ্রাম রয়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলাতে। গ্রামটি উপজেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের নাম মঙ্গলপুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কোনো জনবসতি নেই।

 

গ্রাম জুড়ে ধান, মুশুরি ইক্ষুসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত আর ফলের বাগান। রয়েছে বেশ কয়েকটি বসতভিটার ধ্বংসাবশেষ, আছে বেশ কয়েকটি পুকুরও। এসব দেখেই ধারণা করা যায়, এক সময় এ গ্রামে মানুষের বসতি ছিল, এখন নেই।

 

কেন নেই? এই প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয় পাশের গ্রাম বলাবাড়িয়ার ৯৫ বছর বয়সী খালেক খানের কাছে। বর্তমানে তিনিই ওই গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি। খালেক খান বললেন, আমি নিজে মঙ্গলপুর গ্রামের মানুষ শূন্য হওয়ার বিষয়ে খুব একটা জানি না। তবে বাপ দাদাদের কাছে শুনেছি এক সময় এই মঙ্গলপুর গ্রামে মানুষ ছিল। তাদের অনেকের গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়ালে গরু ছিল। গ্রামটি প্রায় মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে আজ থেকে দেড়’শ বছর আগে।

 

 

সর্বশেষ হাজরা ঠাকুর, নিপিন ঠাকুর-এরা ৪/৫ ঘর মানুষ তিনি দেখেছেন। আজ থেকে ৮০/৮৫ বছর আগে তারাও ঘরবাড়ী ভেঙ্গে চলে যায়। তিনি বলেন, পরবর্তীতে এরা হয়তো মাঠের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ করেনি সে কারণে চলে গেছেন। ঘরবাড়ী ভেঙ্গে আগে যারা গেছেন তারা কি কারণে চলে গেছে এ সম্পর্কে তেমন কিছু তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

 

বলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তার আলি বলেন, শুনেছি মঙ্গলপুর গ্রামের মঙ্গল পাঠান নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন; তার নামেই গ্রামটির নাম মঙ্গলপুর। মঙ্গল পাঠানের তিন একর জমির উপর ছিল বিশাল বাড়ি। বাড়ির চতুর ধারে উঁচু করে ৩০ থেকে ৪০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীর ছিল। পাশের পুকুরের উঁচু পাড়ে দাঁড়িয়ে নাকি বাড়ির ভিতরের কাউকে দেখা যেত না। ওই পরিবার ছিল ভীষণ ভাবে পর্দাশীল। বউ মেয়েরা কখনো বাইরের পুরুষের সাথে দেখা করতো না। মঙ্গল পাঠান সেখানেই মারা যান। তার কবরও রয়েছে এই গ্রামে। তিনি আরও বলেন, শুনেছি ১২ জাতির বাস ছিল এ গ্রামটিতে। অত্যাচারিত হয়ে ওই গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়েছে এমন কথা কখনোই শুনিনি। তবে কি কারণে ধীরে ধীরে মানুষ গ্রাম ছেড়েছে তার পিতাও বেঁচে থাকা অবস্থায় বলতে পরেননি বলে জানান তিনি।

তবে এ এলাকায় একটি কথা অনেকের মুখে শোনা যায়, এক সময় কলের, গুটি বসন্ত ওই গ্রামটিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক মানুষ এতে মারা যায়। মৃতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল বেশি। গ্রামে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক্তার, কবিরাজ, ওঝা নিয়ে এসে ঝাড় ফুক করাসহ গ্রাম বন্ধ করেও কলেরা গুটি বসন্ত নিয়ন্ত্রণে না আসায় ওই গ্রামে অনেকে মনে করতে থাকে কোন দৈব শক্তির কারণে এমনটি হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস জন্মাতে থাকে এ গ্রামে থাকলে তারাও বাঁচবে না। ভয়ে তখন মানুষ ওই গ্রাম ছাড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে মানুষজন ঘর বাড়ী ভেঙ্গে যে যার মত ভারতসহ দেশের সুবিধামত জায়গায় যেয়ে বসবাস শুরু করে। সেই থেকে ওই গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে যায়।

 

 

ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর খান বলেন, মঙ্গলপুর গ্রামের জমি জমা সব পরবর্তীতে ওই গ্রামের বসতিদের উত্তরসূরিরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষের কাছে বিক্রি করে গেছেন। এখন মঙ্গলপুর গ্রাম জুড়ে শুধুই ফল ফসলের মাঠ।

 

 

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলপুর গ্রাম পর্যন্ত ১৮ফুট চওড়া মাটির রাস্তা ছিল। বর্তমানে রাস্তাটি তিনি হেরিং করে দিয়েছেন। রাস্তাটি এখন শুধুমাত্র মঙ্গলপুর মাঠের ফসলাদী আনা নেয়ার কাজে ব্যবহার হয়। ওই গ্রামের রাস্তার পাশেই মসজিদের নমুনা পাওয়া যায়। সেখানে মাঠে কর্মরত কৃষকেরা নামাজ আদায় করেন। যে কারণে সেখানে পানির ব্যবস্থার জন্য টিউবওয়েল বসিয়ে দেয়া হয়েছে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.