House_in_the_Middle_of_the_Street
এবার বাংলাদেশে সড়কের মাঝে বাড়ি

এবার বাংলাদেশে সড়কের মাঝে বাড়ি

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এ সুপ্রশস্ত রাস্তার মধ্যে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন রেখেই রাস্তাটি তৈরী করতে হয়েছে। 

 

 

 

সড়কের মধ্যে ভবনটির জমি আগে অধিগ্রহণ না করায় এবং ভবনের মালিক তার জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নিরুপায় হয়ে ভবনটি রেখেই রাস্তার উন্নয়ন কাজ করছে।এমন ঘটনা দেশে আগে কখনও ঘটেনি। আগারগাঁওয়ের এ সড়কটিই নতুন দৃষ্টান্ত। ২০০৩ সালে চীনের সাংহাই অঞ্চলে হাইওয়ে বানানোর কাজ চলছিল। এ উন্নয়নের জন্য সবাই সরকারকে রাস্তার জন্য জমি দিয়ে দেয় এজন্য সরকার তাদের ক্ষতিপূরণও দিয়েছিল। কিন্তু একটি বাড়ির মালিক তার বাড়িটি ছাড়তে রাজি হয়নি। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে চার লেনের রাস্তাটির মাঝে বাড়িটি রেখে ঐ অংশে দুই লেনের রাস্তা তৈরী করে। তখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয় সে ঘটনা। আগারগাঁও থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত সড়কটিও এখন ওই রকমই এক ঘটনার জন্ম দিতে যাচ্ছে।

 

১৫০ ফুট প্রস্থের ছয় লেনে উন্নীত এ রাস্তাটির মধ্যেই ৬ শতাংশ জমির উপর নির্মিত একটি একতলা ভবনের মালিক নূরজাহান বেগম। তিনি ১৯৬৪ সালে জমিটি কিনে রাখেন এবং এখন রাস্তার মধ্যে তার জমির অংশ পড়লেও তিনি জমিটি ছাড়তে রাজি নন। ফলে বাড়িটি অক্ষত রেখেই রাস্তার উন্নয়ন কাজ করতে হয়েছে।

 

 

বাড়িটি অবৈধ বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন রিট করলেও সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পরবর্তীতে বাড়ির মালিক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সড়কের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে রিট করেন এবং এর প্রেক্ষিতে আদালত ভবন মালিকের বৈধতা দেন ও ভবনটির বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করেন। 

 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, রাস্তাটি তৈরীর আগে এ ভবনটি সম্পর্কে জানা ছিল না, এখন ঐ ৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। অধিগ্রহণ করা সম্ভব না হলে ওভাবেই থাকবে ভবনটি।

 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটি রাস্তার মধ্যে রেখেই সিটি কর্পোরেশন বাকি অংশের কাজ করেছে। ইতোমধ্যে বাড়িটির চারপাশে রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটির উত্তর পাশে পড়েছে বাড়িটি। উত্তর পাশের সড়কের প্রায় অর্ধেকটাই দখল করে আছে বাড়িটি। ফুটপাতও এ অংশে সংকুচিত হয়েছে। ফলে রাস্তা দিয়ে যেমন যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ফুটপাত দিয়েও হাঁটাচলায় সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা।ভবনটির দেয়ালে সাঁটানো আছে ভবন মালিকের করা রিটের এবং আদালতের দেওয়া রায়ের নোটিশ।

 

এ রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী সিদ্দিক রহমান জানান , ‘রাস্তার মধ্যে বাড়ি- এমন ঘটনা দেশে প্রথম দেখলাম। রাস্তাটি পুরোপুরি চালু হলে রাস্তার এ অংশে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে।

 

 

উক্ত বাড়িটির মালিকের ছেলে রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কোর্ট থেকে আমাকে ঐ স্থানের ৬ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা ১৯৬৪ সালে জমিটি ক্রয় করি। আমাদের ঢাকায় এটি ব্যতীত কোনো জমি নেই। তাই চাচ্ছি না জমিটি বিক্রি করে দিতে। এখন সিটি কর্পোরেশন রাস্তা প্রশস্ত করছে কিন্তু আমাদের সাথে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি বরং আমাদের জমি অবৈধ বলে মামলা করেছিল। আমরা সে মামলা থেকে আমাদের পক্ষে রায় পেয়েছি এবং আদালত আমাদের জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও হাইকোর্টের রিটের স্থিতাবস্থা উঠে গেলে আমরা এখানে ভবন তৈরীর প্রক্রিয়ায় যাবো। আমরা চাচ্ছি না জমিটি ছেড়ে দিতে। যদি সিটি কর্পোরেশন কাছাকাছি এ মানের জমি দিতো তাহলে না হয় ভেবে দেখতাম।

 

অধিগ্রহণ অনুযায়ী টাকা দিলে জমিটি বিক্রি করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের কোনো প্রস্তাবই দেওয়া হয়নি। আর প্রস্তাব দিলেও জমি দিবো কিনা সেটা তখন ভেবে দেখবো। রহমতের আবেদনের শুনানি করে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থিতাবস্থা আদেশ দেন। 

 

তবে আবেদনকারীর আইনজীবীর মতে, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্ট্যাটাস কো অর্ডার তথা স্থিতাবস্থা আদেশ বলবৎ থাকবে। 

 

রাস্তাটি নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেপকনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রুবেল বলেন, ‘রাস্তাটির মধ্যে ব্যক্তিগত ৬ শতাংশ জমি থাকায় সেটিকে ওভাবে রেখেই বাকি কাজ করতে হচ্ছে। এ জমিটি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি। অধিগ্রহণ না হলে ওভাবেই থাকবে।’

 

বাস্তবায়ন প্রকল্পের পরিচালক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হাসান মোঃ আল মাসুদ টিবিএসকে বলেন, ‘২০১৭ সালে রাস্তাটি প্রশস্তের জন্য পিডব্লিউডি থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তখন ব্যক্তিমালিকানাধীন এ জমির বিষয়ে জানানো হয়নি।

 

আমরা গত বছর রাস্তাটির কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখতে পাই রাস্তার মধ্যে ৬ শতাংশ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। রাস্তার কাজ শুরু করার সময় জমিটি নিয়ে মামলা থাকায় তখন অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এখন আমরা এ জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে অধিগ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পেলেই অধিগ্রহণের বিষয়ে বাকি কাজ করা হবে।অধিগ্রহণ করা সম্ভব না হলে ভবনটি যেভাবে আছে ওভাবেই থাকবে বলেও জানান তিনি। 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.