health-minister-jahid-malik
মানিকগঞ্জের ডিসি লতিফের বিরুদ্ধে যে কারনে সোচ্চার স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মানিকগঞ্জের ডিসি লতিফের বিরুদ্ধে যে কারনে সোচ্চার স্বাস্থ্যমন্ত্রী

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::  বেশি মূল্যে জমি অধিগ্রহণের অর্থ হাতিয়ে নিতে সব ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর পরিবার। নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমে তিনি প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে কেনার ব্যবস্থা করেন। এ কাজে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় ক্যাডারদের। দাম বাড়াতে নাল শ্রেণির জমি মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়।।এরপর কাগজ-কলমে শ্রেণি পরিবর্তন করতে তিনি ডিও লেটার দেন আইন মন্ত্রণালয়ে। অতঃপর রাতারাতি নাল শ্রেণির জমি কাগজ-কলমে হয়ে যায় ভিটি শ্রেণি। এদিকে সবকিছু যখন ঠিক ঠাক তখন প্রতারণামূলক এ উদ্যোগে বাগড়া দেন সাহসী মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ।

 

 

 

তিনি বুঝতে পারেন এভাবে অধিগ্রহণের দর প্রস্তাবের নথিতে সই করলে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। যদিও লাভবান হবে মন্ত্রী জাহিদ মালেকের পরিবার। কিন্তু ভবিষ্যতে এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হলে প্রথমেই ফেঁসে যাবেন তিনি। এরপর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জে। সংশ্লিষ্ট ইডিসিএল (এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড) প্রকল্পটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। মানিকগঞ্জ সদর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজ এলাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো  জানিয়েছে, সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএল’র প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পের শুরুতে এভাবে বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি। সম্ভাব্য দুর্নীতি ঠেকাতে যুক্তি তুলে ধরে আপত্তি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন মানিকহঞ্জের  জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ।  এরপর আটকে গেছে পুরো প্রক্রিয়া।

 

 

 

অধিগ্রহণ কারসাজিতে ডিসি বাধা দেওয়ায় মন্ত্রীর সঙ্গে ডিসির এক ধরনের অদৃশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।তবে ডিসির এই সাহসী উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইডিসিএল’র পুরাতন প্লান্ট মানিকগঞ্জে সরিয়ে নিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। যার নাম ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মানিকগঞ্জ প্লান্ট স্থাপন’ প্রকল্প। সম্প্রতি প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি অর্থ লোপাটের অপচেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় জেলা প্রশাসন বেঁকে বসায় আটকে গেছে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। 

 

 

সরকারি অর্থ লোপাটে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছক তুলে ধরে ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় চিঠি পাঠায় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন (স্মারক নম্বর ০৫.৩০.৫৬০০.৩০৩.০২.০০৫.২১-৪২)। এতে বলা হয়, ‘ইডিসিএল প্লান্ট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজায় ৩১.৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছে। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে ২৭ ডিসেম্বর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ১৭ জানুয়ারি জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

 

সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন, জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত ও দাখিলকৃত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রস্তাবিত ভূমির শ্রেণি নাল হলেও সাম্প্রতিককালে বালু ভরাট করে ভিটি শ্রেণি করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে মহাপরিদর্শক নিবন্ধনের স্মারকে (নম্বর ১০.০৫.০০০০.০০৪.৯৯.০০৭.২১-৭৭.) জেলার অন্য কোনো মৌজার রেট পরিবর্তন না করলেও শুধু ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজার ভিটি/বাড়ি শ্রেণির সরকারি মূল্য প্রতি শতকে পঁচিশ হাজার টাকার পরিবর্তে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। কেননা আশপাশে মৌজার সমশ্রেণির জমির মৌজারেট অনেক কম।’ 

 

 

চিঠিতে আশপাশের আরও চারটি মৌজায় জমির মূল্যসহ তুলনামূলক বিবরণী তুলে ধরা হয়।এতে দেখা যায়, আলোচিত ৮৪ নম্বর মেঘশিমুল মৌজায় প্রস্তাবিত ৩১.৫ একর জমি অধিগ্রহণে সরকারের খরচ হবে ১১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।অথচ জমির প্রকৃত শ্রেণি নাল হিসাবে অধিগ্রহণ করা হলে খরচ হওয়ার কথা মাত্র ৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার ৫০ টাকা। 

 

 

মানিকহঞ্জের  জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলছেন , প্রস্তাবিত জমি আসলে ভিটি শ্রেণির নয়। হঠাৎ বালু ফেলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রেণি পরিবর্তনকৃত জমি অধিগ্রহণ করা হলে সরকারের প্রায় তিন থেকে দশগুণ পর্যন্ত অর্থ অতিরিক্ত খরচ হবে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৬০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। কাজেই প্রস্তাবিত জমির পরিবর্তে একই মৌজার অন্য কোনো জমি অথবা পার্শ্ববর্তী কোনো মৌজায় জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ সাশ্রয় হবে এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করে জেলা প্রশাসন। 

 

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট জমি কেনার ক্ষেত্রে লাঠিয়াল হিসাবে ভাড়ায় খাটেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা।।এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন মধ্যস্থতাকারী। এদের মধ্যে গড়পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন সরকার ও পার্শ্ববর্তী জাগীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন অন্যতম।

 

এছাড়া জমি কেনায় ভূমিকা রাখেন জনৈক খালেক ও ওবায়দুর নামের স্থানীয় পাতিনেতা। এদের মধ্যে আফসার উদ্দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘খাস লোক’ বলে এলাকায় পরিচিত। আর জাগীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ছেলের বিয়েতে উকিল ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রে মন্ত্রীর সঙ্গে জাকির চেয়ারম্যানের আত্মীয়তা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে ইডিসিএল’র প্লান্ট মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের প্রস্তাব পূর্বপরিকল্পিত ।প্রস্তাবিত জমির কাছেই গড়পাড়া ইউনিয়নে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ কয়েক বছর ধরে মেঘশিমুল মৌজায় বিশাল আয়তনের জমি কেনা হয়। এরপর জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি নিবন্ধন মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে আলোচিত জমির শ্রেণি পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

 

এভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন আইনসম্মত হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্ন তুলে জেলা প্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মেঘশিমুল মৌজার অধিকাংশ জমির শ্রেণি নাল। বাস্তবে ভিটি শ্রেণির জমি খুব বেশি পাওয়া যায় না।’ কিন্তু নিবন্ধক মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে এভাবে আশপাশের জমির শ্রেণি অপরিবর্তিত রেখে শুধু একটি মৌজায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা উদ্দেশ্যমূলক। 

 

 

অন্যদিকে মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে মানিকহঞ্জের  জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফের অপসারণ দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে মানিকগঞ্জ পৌর শহরের প্রেসক্লাবের সামনে প্রধান সড়কে মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.