রাজশাহীতে অবৈধভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে Rapid Cash Shadhin Apps Shopup eLoan
রাজশাহীতে অবৈধভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে Rapid Cash Shadhin Apps Shopup eLoan

রাজশাহীতে অবৈধভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে Rapid Cash Shadhin Apps Shopup eLoan

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

মহানগর প্রতিনিধি, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: হাতের নাগালে এখন র‌্যাপিড ক্যাশ, শপআপ, স্বাধীনসহ নানান অ্যাপস। ইউটিউবে এসব অ্যাপসের রিভিউও দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার নিয়ম যেমন তুলে ধরা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারিত হওয়ার মতো তথ্যও দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু এসব অ্যাপস পরিচালনাকারীদের তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে নাগরিকদের সকল গোপন তথ্য নেয়া হলেও দেখার কেউ নেই।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য। ঋণ দিয়ে কেটে রাখা হচ্ছে বড় অংকের অর্থ। নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে না পারলে, দিন হিসেবে নেয়া হয় জরিমানা।

এমন ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছে তরুণ বয়সীরা। কয়েক মাস ধরে এমন প্রতারণা চললেও দেখার কেউ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই ধরনের ঋণ কার্যক্রমের কোনো বৈধতা নেই।

হ্যাঁ, খুবই সহজ উপায়। মোবাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করুন। তথ্য দিন, পেয়ে যাবেন ঋণ। প্রশ্ন আসতে পারে, ঋণ পাওয়া কি এতই সহজ! অনলাইনে ঋণ দেয়ার প্রলোভন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একাধিক অ্যাপস। সেখানে জুড়ে দেয়া হচ্ছে শর্ত; মেনে নিলে পাওয়া যাচ্ছে ঋণ।

তবে, এই অর্থ লেনদেনকে অবৈধ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ বাংলাদেশের যে কোন স্থানেই এই লেনদেনকে বৈধ ঘোষনা করা হয়নি বিধায় জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরেও যদি এই লেনদেন কেউ করে থাকে তবে তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরী।
কারণ, বারবার গ্রাহককে বিভিন্নভাবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে
সতর্ক করা হচ্ছে তারপরেও যেন কেউ এসব ফাঁদে পা না বাড়ায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাজশাহী শাখার উপ-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আখতার আলম উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান- Rapid Cash, Shadhin Apps, Shopup eLoan এ লেনদেন প্রক্রিয়া পুরোটাই অবৈধ। যদি আপনার এলাকায় কিংবা আপনার কাছে এই ধরনের কোম্পানী কোন সেবা নিয়ে আসে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং সেলে কিংবা নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করুন।

অনলাইন প্লাটফর্মে বেশ আলোচিত অ্যাপস ‘র‌্যাপিড লোন, র‌্যাপিড ক্যাশ, এমলোন, স্বাধীন ক্যাশসহ নাম না জানা অসংখ্যা এপস।

শর্তনুযায়ী মোবাইলে অ্যাপসটি নামালে নিয়মনীতি তুলে ধরা হয়। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয় এই অ্যাপস, যা ১২০ দিনের মধ্যে পরিশোধের শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে। তবে, ঋণের পরিমাণ কম হলে সময় কমিয়ে নির্ধারণ হয়।

অ্যাপসে ঋণ প্রক্রিয়া

মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করে অ্যাপসে নিবন্ধন করতে হয়। প্রবেশের পর স্পিন কুপনের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করার শর্ত রয়েছে। নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, এনআইডি কার্ডের নম্বর, ছবি, এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সেলফি যুক্ত করে পূরণ করতে হয়। ঠিকানার সঙ্গে এলাকা, সড়ক নম্বর, পাড়া, মহল্লা যুক্ত করতে হয়। পরিবারের সদস্য, আত্নীয় স্বজন সংখ্যা এবং পেশাও তুলে ধরার শর্ত যুক্ত করে দিচ্ছে অ্যাপস র‌্যাপিড লোন।

দেখা যায়, যারা প্রথম গ্রাহক তাদেরকে সচরাচর ২০০০ টাকা ঋণ দেয়া হয়। আর ২০০০ টাকা ঋণ চাহিদা দিলে, অ্যাপসটি গ্রাহককে দেবে ১৬৮৫ টাকা। তবে, পরিশোধ করতে হবে ২০০৫ টাকা। এক্ষেত্রে কেটে রাখা হবে ৩১৫ টাকা। ঋণ পরিশোধের শর্ত দেয়া হয় সাত দিন। তবে, প্রথম গ্রাহককে কম পরিমাণ অর্থাৎ ১০০০ টাকাও সর্বনিম্ন ঋণ দেয়া হয়।

ঋণ দেবার ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জের নামে হচ্ছে ছলচাতুরি। বলা হয়, অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখা যুক্তি দেয়া হয়। তবে, পরিমাণ যতো বেশি হবে টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও বেশি।

সম্প্রতি এই সকল প্রতারনা শিকার হয়েছেন রাজশাহী নগরীর বেশ কয়েকজন তরুনসহ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী ছোড়াপানের মোড় এলাকার শিক্ষার্থী নুর আলম সিদ্দিকী, অলি আহম্মেদ, কৌশিকসহ আরো অনেকে।মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ও তরুনদের টার্গেট করে প্রতারনায় নেমেছে এই সকল প্রতিষ্ঠান।

কেউ জানেনা ঋণদাতা কারা?

তথাকথিত ঋণের টাকা গ্রাহককে পরিশোধ করা হচ্ছে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপসে যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর দেয়া নেই।

অ্যাপসে বলা আছে, ‘আমরা কোনো ব্যাংক নই। কিন্তু আমরা অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঋণ গ্রহণকারীদের সংযুক্ত করি।’

কিন্তু ঋণ বিনিয়োগকারী কারা তার কোনো তথ্য দেয়া নেই।

অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়, কোন মানদণ্ডে এসব ঋণ দেয়া হয়? উত্তর আসে, এআই প্রযুক্তি আপনার ঋণ বিভিন্ন যুক্তিবিজ্ঞান এবং গাণিতিক পরিভাষার মাধ্যমে পর্যালোচনা করে থাকবে।

এসব অ্যাপসে ঋণ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’।

প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশ্লেষক খান সাদেকুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনকৃত প্রতিষ্ঠানই শুধুমাত্র ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু অনলাইনে ব্যাংকের বাইরে এ ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থাকছে না। সার্ভিস চার্জের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বড় অংকের অর্থ।’নানান সার্ভিসের নামে অর্থ কেটে থাকে অ্যাপসগুলো।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.