যদিও মি: স্বসন্মানে বাংলাদেশ ছাড়তে পারেনি তদুপরি তার দেখানো পথেই অবৈধ ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট আর ডলার ইন্ডোর্সমেন্টের ভিড়ে বৈধ কাগজপত্র দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা ভারতীয় ভিসা। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও মিডিয়ার অনুসন্ধানে তার সত্যতা মিলেছে আবারোও। ভারতীয় ভিসা ক্যালেঙ্কারি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর ভিসা অফিসারকে চাকরিচ্যুত ও সারাদেশে ভিসা এক্সিকিউটিভদের রদবদল হলেও থেমে নেই দুর্নীতি নামক অবৈধ অলৌকিক মেশিন।
অপরদিকে সামান্য ভুলেই বাতিল করা হচ্ছে ভিসার আবেদন। এমন প্রমানও পেয়েছে মিডিয়াকর্মী। নাম, আসিয়া বেগম, বয়স ৭৫, পেশায় তিনি একজন গৃহকর্ত্রী। তার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায়। তার সাথে কথা বলে জানাযায়, তার অনেক আত্নীয় স্বজন ও বাবার বাড়ি রয়েছে ভারতে । বয়সের ভারে যেকোন সময় পরপারে যাবেন এমন আশঙ্কায় আত্মীয়দের শেষ দেখার ইচ্ছা নিয়ে ভারতে যেতে চান তিনি। তাই গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী ভিসা সেন্টারে গিয়ে ভিসা আবেদন জমা দেন। কিন্তু মাত্র একটি অক্ষর ভুলের কারন দেখিয়ে তার ভিসা আবেদন বাতিল করেছে ভিসা কর্তৃপক্ষ।
অথচ তার সেই ভুল হওয়া অক্ষরটি মাত্র ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ফি নিয়ে সংশোধনের নিয়ম রয়েছে, এবং একজন ভিসা কর্মকর্তায় সেই কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তারা সেই সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বাতিল করেছেন। সাজেদা বেগম, বয়স ৩৮, বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। তিনি দীর্ঘদিন থেকে পেটের সমস্যায় ভুগছেন। তাই সিদ্ধান্ত, ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এর আলোকে ভারতীয় ভিসা পেতে সকল কাগজপত্র বৈধ ও সঠিকভাবে প্রোসেস করেন এবং গত ২৩ আগষ্ট রংপুর ভিসা সেন্টারে জমা দেন। কিন্তু অলৌকিক কারন দেখিয়ে ভিসা আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
এরকম আরেক ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান (৫৫), তিনি পেশায় একজন কৃষক, তার বাড়িও নাটোর জেলায়। তিনি সকল বৈধ কাগজপত্র জমা দিলেও জাল সনদের অজুহাত দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে। আরেক ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার বাড়ি রংপুরে। তাকেও একই অজুহাতে বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয়, ভিসা আবেদন জমা নেওয়ার আগেই তাদের থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। মুচলেকায় উল্লেখ থাকে তাদের ডলার এন্ডোর্সমেন্টের কপি জাল। অথচ তার ডলার ইনডোর্সকারি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে তারা ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দেশের অন্য কোন ভিসা সেন্টারে মুচলেকার এমন নিয়ম নেই। কিন্তু সুত্র বলছে, প্রতিহিংসার রোষানলে রংপুর ও ঠাকুরগাঁ সেন্টারে এমন নিয়ম চালু করেছে।
এরকম ভাবে হাজারও বাংলাদেশী নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে ভারতীয় ভিসা পেতে। শুধু ভিসা হয়রানি নয়, প্রতিদিন লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত "ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া"। কারন একজন ভিসা প্রত্যাশীর থেকে ভিসা আবেদনের জন্য আবেদন ফি কাটা হচ্ছে ৮৩০ টাকা। অথচ সামান্য ভুল হলেই গচ্চা যাচ্ছে সেই টাকা। এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যাও রয়েছে চোখে পড়ার মত।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) অবৈধ কাগজের রাজত্ব ও দুর্নীতি আর বাংলাদেশী নাগরিকের হয়রানির বিষয়ে ঢাকাস্থ "ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া" এর প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও অভিযোগ দিতে পারেনি মিডিয়া কর্মী। তবে মিডিয়াকর্মী প্রধান কার্যালয়ে গেলে সুন্দর আচরণ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড অমিত কুমারের পিএস কৃপানাথ দে।
কিন্তু তাদের দুর্নীতির কসরত তুলে ধরতেই সহযোগিতার বাতাস উল্টো দিকে ঘুরে যায়। পরে তিনি অভিযোগগুলো লিখিতভাবে দিতে বলেন। পরের দিন অভিযোগ লিখিতভাবে দিতে গেলে কোনভাবেই ঢুকতে দেননি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ, গত ২৮ আগষ্ট ২০২২ তারিখে রংপুর ভিসা সেন্টারের বর্তমান ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে এক ভিসা এজেন্সির কথোপকথনের ১২ মিনিটের অডিও রেকর্ড প্রকাশ পায়। সেই রেকর্ডে দুইজনের মধ্যে ডলার এন্ডোর্সমেন্টের রেট নিয়ে কথা চলে। মামুন বলছে প্রতি এন্ডোর্সমেন্টের জন্য লাগবে ২০০ টাকা, আর এজেন্সি দিবে ১০০ টাকা। অবশেষে এজেন্সির কথা মেনে নিয়ে বলেন, তাহলে আপনি দিয়েছেন ৭ হাজার টাকা বাঁকি টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এজেন্সি বলছে আমার তো ডলার এন্ডোর্সমেন্ট বৈধ তাও এত টাকা দিতে হবে? অন্যেরা তো ভুয়া বা জাল সার্টিফিকেট জমা দিচ্ছে? প্রকাশ পাওয়া রেকর্ডে মামুন কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলছে, তাকে সকল অবৈধ কাগজপত্র জমা নিতে নির্দেশ দিয়েছে বা জমা না নিতে নিষেধ করেনি।
মামুনের এমন কথোপকথন আর ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয়ের আচরন বলে দেয় এই সকল দুর্নীতির পুর্ণ সমর্থন রয়েছে তাদের। মিডিয়াকর্মীরা হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে যায় ঢাকাস্থ ভারতীয় ভিসা সেন্টার যমুনা ফিউচার পার্কে। তবে এমন দৃশ্য শুধু মফস্বলে নয়, এই দৃশ্য চোখে পড়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় ভিসা সেন্টারেও। সেখানকার কৌশল যেন আরও ভিন্ন। তবে সেখানকার তথ্য আর ছবি নিয়ে আগামী পর্বে থাকবে ভিন্ন খবর।
রাজশাহীতে নিযুক্ত বিতর্কিত ভারতীয় হাই কমিশনার মিস্টার ভাটিকে নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের সকল পর্ব
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com