পাঁচ বাংলাদেশিকে জিম্মি করার অভিযোগ ইউক্রেনে
পাঁচ বাংলাদেশিকে জিম্মি করার অভিযোগ ইউক্রেনে

পাঁচ বাংলাদেশিকে জিম্মি করার অভিযোগ ইউক্রেনে

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন:- ইউক্রেনের সেনারা পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে এক বাংলাদেশির করা ভিডিওবার্তায় প্রথমে বিষয়টি প্রকাশ পায়। সেখানে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশিরা তাদের উদ্ধারের আকুতি জানান। ঢাকার রাশিয়া দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গতকাল প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জিম্মি ওই বাংলাদেশিরা তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগও বলেছে, ইউক্রেনের কিভারতিসি শহরের একটি অভিবাসী শিবিরে আটকে আছেন পাঁচ বাংলাদেশিসহ শতাধিক বিদেশি। তবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এখনো এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, আমি জানি না, এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

অন্যদিকে, যুদ্ধের মধ্যে অনেকে পালিয়ে এলেও ইউক্রেনের দুই শহর মারিওপোল ও সুমিতে ১০ বাংলাদেশি আটকা পড়ার খবর মিলেছে। তবে ইউক্রেন থেকে রোমানিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ২৮ বাংলাদেশি নাবিক। তাদের সঙ্গে আছে যুদ্ধের গোলায় নিহত এক নাবিকের মরদেহ। জিম্মি বাংলাদেশিদের বিষয়ে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের ওই ভিডিও থেকে একজনের পরিচয় জানা গেছে।
তার নাম রিয়াদুল মালিক। তিনিসহ আটকে থাকা অপর চারজনকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে রিয়াদুল বলেন, আমরা ইউক্রেনের একটি ক্যাম্পে আটক রয়েছি। এখানে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি আছেন। একজন দরজায় পাহারা দিচ্ছেন। তাদের সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

আমরা একটি মোবাইল ফোন লুকিয়ে রেখেছি। এই শিবিরকে ইউক্রেনের সেনারা ঘাঁটি বানিয়েছে। রাশিয়া সেনা ঘাঁটি দেখে দেখে বোমা ফেলছে। আমরা অনেক ভয়ে আছি। আমাদের আটকে রেখেছে জিম্মির মতো করে। এক শর ওপর মানুষ আছে।

রাত হলে বোমা ও গুলির শব্দ শুনতে পাই। লাইট বন্ধ করে দিই। আমরা যেখানে তিনজন মানুষ থাকি, সেখানে ১০ জন এনে রেখেছে। আমাদের মারে। আমাদের অনেক মারতেছে। রিয়াদুল আরও বলেন, ইউক্রেনের অন্য ক্যাম্পগুলোর সবই বোমা ফেলে উড়িয়ে দিয়েছে এরই মধ্যে। এ শিবিরটা শুধু আছে।

আমরা জানি না, আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কতটুকু আছে। আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করার জন্য। আমাদের জীবনের এখন ১ মিনিটেরও নিশ্চয়তা নেই। ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা বেলারুশ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে আছি। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। আমাদের জীবন এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। এখানে অনেক দেশের ১০০ জনের ওপর মানুষ আছে। নারী ও শিশু আছে। ওরা কাউকে মুক্তি দিচ্ছে না। এর আগে এক বাংলাদেশিকে উদ্ধারের কথা জানায় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও নেপাল তাদের নিজস্ব নাগরিকদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে আনার অনুরোধ করেছে।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি বলেন, এরই মধ্যে একজন বাংলাদেশি আমাদের সঙ্গে এসেছে। ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

আটকে আছে ১০ বাংলাদেশি : পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন, মারিওপোল শহরে দুজন এবং সুমিতে আটজন আটকা পড়েছেন। সেখানকার পরিস্থিতি খুব কঠিন। এই ১০ জন বাংলাদেশিকে শহর দুটি থেকে সরিয়ে নিতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জানা যায়, ইউক্রেনের সুমি শহরটি দেশটির পূর্ব-উত্তরাঞ্চলে রাশিয়া সীমান্তের কাছে।

এর কাছের খারকিভ শহরে রাশিয়ার বাহিনীর ব্যাপক গোলাবর্ষণের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে এসেছে। সুমিতেও বৃহস্পতিবার রাতে বোমা হামলা হয়েছে। মারিওপোল শহরটিও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশ সীমান্তের কাছে। সেই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর শনিবার রাশিয়া সেখানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে বেসামরিক মানুষদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে।

রোমানিয়ার উদ্দেশ্যে ২৮ নাবিক : বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পর গতকাল সকালে বোমা হামলা একটু কমলে রোমানিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন নাবিকরা। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, আমি দুপুর ১টায় কথা বলে কনফার্ম হয়েছি, তারা ইউক্রেনের বাঙ্কার থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। তিনটি গন্তব্য সামনে রেখে তারা রওনা দেন। প্রথমটি পাশের দেশ মলদোভা, দ্বিতীয়টি পোল্যান্ড, তৃতীয় রোমানিয়া। যেখানে নিরাপদে যাওয়া যাবে সেখানেই নাবিকরা যাবেন।

তবে কোথায় যাবেন নিরাপত্তার খাতিরে সেটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। আশা করছি নিরাপদেই পৌঁছাবেন তারা। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর থেকে মলদোভার সড়কপথের দূরত্ব ৮১২ কিলোমিটার। আর অলভিয়া থেকে পোল্যান্ডের সড়কপথের দূরত্ব ১৪০০ কিলোমিটার। আর পোল্যান্ড যেতে হলে ইউক্রেনের বিশাল এলাকা দিয়েই যেতে হবে। সেজন্য প্রথমে মলদোভায় গিয়েই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.