farmer-dholu-news-godagari-kakonhat
রাজশাহী কাকনে মামলার পর মামলা দিয়ে যেভাবে কৃষকের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা

রাজশাহী কাকনে মামলার পর মামলা দিয়ে যেভাবে কৃষকের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক – উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলে জমিজমার বিরোধ নেই, ক্ষুদ্রজাতির এমন পরিবার এখন খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ আতঙ্ক। জমি দখলের জন্য সন্ত্রাসীদের মামলা-মোকদ্দমা, জাল দলিল, জবরদখল, খুন, ধর্ষণ, হুমকি-ধমকি লেগেই আছে। জীবন বাঁচাতে অনেকেই একে একে পাড়ি জমাচ্ছে ভারতে।

 

 

 

আর সেই দুর্নাম বয়ে বেড়াতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের। অথচ বাংলাদেশ সরকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রতিবছর যে পরিমান কাজ করছে তা বলাই বাহুল্য। রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে গত ১০/০৭/২০২৩ ইং তারিখে গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের মুসরাপাড়া ইয়াজপুর গ্রামে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায়।

 

 

এদিকে একই এলাকায় ভূমিদস্যুতার আরোও একই ধরনের ঘটনা  ঘটতে পারে বলে  মনে করছেন রাজশাহী জেলা গোদাগাড়ী থানাধীন কাকনহাট মোহনপুর বাঙ্গধারা এলাকার স্থানীয়রা। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অঞ্চলে হঠাৎ করে একটি জমি জালিয়াতি চক্র জাল দলীল ও পেশী শক্তির বলে একের পর এক জমি দখল করে চলেছে একটি চক্র। এই চক্রে আছে গোদাগাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের ২/৩ জন নেতা, স্থানীয় মেম্বারসহ যুবলীগের কয়েকজন পথভ্রষ্ট নেতা।

 

 

ঘটনা সুত্রে জানা যায়, কাকন হাট বাঙ্গধারা মৌজার জে,এল নং ১৫৩ এবং ১৯২ দাগের জমি যাহার দলিল নং ৩৭৬৩/২০২০, আরএস অনুযায়ী জমির পরিমান ১.১৬ একর ধানী জমি গত  ২৫/০১/২০২৩ ইং তারিখে রাজশাহী জেলা জজ আদালত হতে ডিক্রিপ্রাপ্ত হয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিস কৃষক  কৃষক সাদেকুল ইসলাম ধলুকে তার জমি বুঝাইয়া দেন গোদাগাড়ীর এসিল্যান্ড সবুজ। কিন্ত হঠাৎ গত  ২২/০৪/২০২৩ ইং তারিখে গোদাগাড়ী ভূমি অফিসে উক্ত জমির খারিজ বাতিলের আবেদন করেন মাসুদ রেজা নামের এক অজ্ঞাত ব্যাক্তি।

 

 

 

মাসুদ রেজার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোদাগাড়ীর বর্তমান এসিল্যান্ড জাহিদ  এ বিষয়ে কৃষক সাদেকুল ইসলাম ধলুকে নোটিশ করে  রাজশাহী আদালত কর্তৃক মামলার রায়ের কপি,ডিসি পারমিশন কপিসহ কাগজ পুনরায় জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।  কৃষক ধলু  রাজশাহী আদালতের রায়ের কপি, খাজনার কপি, খারিজের কপি, সিআইডি রিপোর্ট, ডিসি পারমিশন কপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুনরায় এসিল্যান্ড দপ্তরে জমা দেন।

 

 

 

কিন্তু উক্ত বিষয়ে এসি ল্যান্ডের যে কোন সিদ্ধান্তের পূর্বেই অত্র এলাকার মৃত আলাউদ্দীনের পুত্র শরিফুল ইসলাম ও মৃত আসগর আলীর পুত্র আব্দুল মানিকসহ মাসুদ রেজা, দুলালসহ দেশীয় অস্ত্র ও ৫০ /৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কৃষক ধলুর জমিতে গিয়ে মোহড়া দিয়ে বলে –

এই জমিতে কেউ আসলে তাকে এখানেই পুঁতে ফেলা হবে

 

 

এদিকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কৃষক সাদেকুল ইসলাম ধলু তার ছেলে আলমগীরকে দিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক, রাজশাহী জেলা পুলিশ, গোদাগাড়ী থানাকাকনহাট ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্র,  গোদাগাড়ী টিএনও, গোদাগাড়ী এসিল্যান্ড বরাবর প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত করেছেন। 

 

 

 

অন্যদিকে ঘটনার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাবের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি টিম কৃষক সাদেকুল ইসলাম ধলুর বক্তব্য নিতে গেলে তিনি জানান শরিফুল ইসলাম ও আব্দুল মানিক অত্র এলাকায় ভূমিদস্যু হিসাবে চিহৃত। তারা দূর্বল লোক পেলেই তাদের জমির জাল দলীল করে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ জমি দখলে নেমে পড়ে বিধায় কেউ কেউ বয়ে আর কোনদিন জমিতেই যায়না।

 

 

ক্যমেরার সামনে ভুক্তভোগী কৃষক ধলুর পুত্র আলমগীর  আরো বলেন, জমির খাঁজনা খারিজসহ সব কাগজপত্র আমাদের নামে। কিন্তুু তারা জোর পূর্বক প্রায় এক কোটি টাকা দামের জমিটি দখল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুমীদস্যুর কাছে বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।

 

 

সার্বিক বিষয় নিয়ে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলায় নব্য যোগদানকৃত  এসিল্যান্ড জাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা একটি  লিখিত অভিযোগ পেয়েছি  এবং কৃষক ধলু আদালতের রায়ের কপি, মূল দলীল খাজনা, খারিজ সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাও দিয়েছেন বিধায় এর সত্যতা যাঁচাই বাঁছাই করে আমরা কৃষকের জমি কৃষককেই বুঝিয়ে দেব। কিন্তু এ ব্যাতিত উক্ত জমি নিয়ে কেউ বেআইনীভাবে দখল করার চেস্টা করলে তার বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

এদিকে রাজশাহী গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, রাজশাহী কাকনহাট এলাকায় জমি নিয়ে সংঘর্ষ কয়েকজন জন মারা গেছেন। বিধায় আমরা তৎপর আছি যেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সেই সাথে কেউ যদি আইন শৃঙ্খলার পরিবেশ বজায় না রাখে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

 

 

তবে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার টিএনও  সঞ্জয় কুমার মহন্ত মুঠোফোনে উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান –  কেউ জাল দলিল করলে ২ বছর এবং মালিকানার অতিরিক্ত জমি রেজিস্ট্রি করে নিলে ৫ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। কারও জমি জোরপূর্বক দখল করে নিলে জেল-জরিমানা হবে ৩ বছর। এভাবে ৩০টি ধারায় পৃথকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানার বিধান রেখে দেশে প্রথমবারের মতো ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন হচ্ছে। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.