মূলত বাড়িতে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আগে থেকে টের পেতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে বলে জানান তারা। যাতে ‘নিরাপদে’ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়। আলোচনায় আসা ওই মাদক ব্যবসায়ীর নাম বিডিআর সাগর, তার স্ত্রীর তাহমিনা, তাহমিনার বোন রুনা এবং রুনার ছেলে অনিক । অত্র এলাকায় ‘ডাইল পরিবার’ নামে পরিচিত এই মাদক ব্যবসায়ী পরিবার।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাড়ির প্রধান ফটকসহ ঘরের কোণায় মোট ৩টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তাদের যেন কেউ হয়রানি করতে না পারে এবং সতর্ক অবস্থানে থাকতেই বাড়ির গেটসহ তিন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। মূলত মাদক বিক্রির জন্য তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যকে জেল হাজতে থাকতে হয়েছে বহুবার।
মাদকের এই অভিনব বানিজ্যে নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে যে কেউ মুখ খুললেই তাকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার কিংবা হামলা মামলার শিকার হতে হয়। ইতিপূর্বে মাদক ব্যবসায়ী সাগর, তহমিনা, রুনা ও অনিকের বিরুদ্ধে যারাই পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তাদেরকেই পড়তে হয়েছে হামলা মামলায়।
অবশেষে গত ০৬/০৫/২০২৪ ইং তারিখে মাদক ব্যবসায়ী সাগর, তার স্ত্রী তহমিনা, তহমিনার বোন রুনা এবং রুনার ছেলে অনিকের বিরুদ্ধে রাজশাহী হেতেমখাঁর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রাজশাহী র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন ৫ এর সিও বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সেই অভিযোগের একটি কপি গনমাধ্যমের হাতেও এসেছে। নিম্নে অভিযোগের কপির আংশিক অংশ দেয়া হল।
[caption id="attachment_116869" align="alignleft" width="764"] র্যাব ৫ বরাবর অভিযোগের কপি[/caption]
এদিকে সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য মাদক ব্যবসায়ী সাগরের ০১৭১৪৬৮৭৭৮২ মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তিনি জানান- এ বিষয়গুলো সবই মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করছে।
একইভাবে মাদক ব্যবসায়ী তহমিনার ০১৭৬৬৩৬০৬৬২ নাম্বারে ফোন দিলে তিনি জানান - আমি আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব। এগুলো বিষয়ে নিউজ করবেননা।
অন্যদিকে অনুসন্ধানে অত্র এলাকায় বসবাসরত রাজশাহী কলেজের প্রফেসর নিজামুদ্দিন জানান – রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক বিডিআর সাগর, তার স্ত্রী তহমিনা, রুনা এবং অনিক । লোকমুখে শোনা যায় থানা পুলিশ র্যাব ডিবিসহ সহ সকল কিছুই নাকি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক সম্রাট সাগর ও মাদক সম্রাজ্ঞী তসলির তহমিনা। তারা অপ্রতিরোধ্য।
মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন - এই পরিবারের ৪ জন সদস্য মিলেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রেইড দেয় ধরেও নিয়ে যায় আবার মাঝে মধ্যেই সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়।
▶ গনমাধ্যমে কর্মীদের হুমকি দেন প্রাকাশ্যেই
তবে গনমাধ্যম ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাগর একাধিক ব্যাক্তিকে বলেছেন - আমার বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করে কোন লাভ হবেনা। আর যারা নিউজ করবে তাদেরও ব্যবস্থা হবে। আর প্রশাসন আমার বাড়িতে আসবেনা এটা আমি গ্যারেন্টি দিয়ে বলতে পারি। আর আমার বিরুদ্ধে র্যাব কিংবা পুলিশে অভিযোগ দেবে এমন কেহই নাই।
▶ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা আরএমপির
এদিকে সাগর, তহমিনা, রুনা ও অনিকের মাদক ব্যবসার বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন - রাজশাহীতে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মুল করাই আমাদের লক্ষ। আমরা মাননীয় পুলিশ কমিশনার স্যারের দিক নির্দেশনায় অপরাধ ও অপরাধী নির্মূলে যে পদক্ষেপ গ্রহন করেছি এতে আমরা সফল হবো বলে শতভাগ আশাবাদী। এক্ষেত্রে মাদকের গডফাদার সাগর হোক কিংবা তার স্ত্রী তহমিনা হোক না কেন কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবেনা।
অপরদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। বিডিআর সাগর, তহমিনা, রুনা ও অনিকের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদক মামলা রয়েছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার বিষয়টি জানা ছিলোনা। তবে শিঘ্রই সাগর, তহমিনা, রুনা ও অনিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিল্লুর রহমান জানান - মাদক ব্যবসায়ী দেশ ও জাতির শত্রু। তারা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন তাদের কাজ অবৈধ ও আইন বিরোধী বিধায় সাগর, তহমিনা, রুনা ও অনিকদের মত মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। আমরা শিঘ্রই এই মাদক সংশ্লিষ্ট পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com