এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ জুন সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন তা গনমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি।শুধু তাই নয় বরং আরোও কি কি অনিয়ম, অভিযোগ, দূর্নীতি ও ঘূষ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তা জানা প্রয়োজন।
▶ অনিয়ম ১ - শব্দ দূষন রোধে নিষ্ক্রিয় এই অধিদপ্তর
ভয়ংকর শব্দ দূষণে আক্রান্ত দেশের সবুজ নগরী রাজশাহী। জাতিসংঘের সর্বশেষ (২০২২) প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থতম শব্দ দূষণের শহর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জলবায়ু ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়েও বিষয়টি যাচাই করেছে। তারাও নিশ্চিত হয়েছে রাজশাহীতে শব্দদূষণের পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য মাত্রার অনেক ওপরে। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির ও উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন এ বিষয়ে অভিযান করেননা বলে বারংবার প্রমাণিত হয়েছে।
আরোও উল্লেখ্য যে, ভয়ংকর শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন রাজশাহীর মানুষ। অন্যদিকে নসিমন ও ভটভটি জাতীয় অবৈধ যানবাহনও দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী নগরে অবাধে চলাচল করছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে শত শত বালুবাহী ট্রাক, ট্রাক্টর ও ভারী ডাম্পার নগরীর একদিক থেকে আরেক দিকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবাধে। উপরন্তু রাজশাহী নগরে ১০ হাজার অটো রিকশার চলাচলে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারপরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
▶ অনিয়ম ২ - পুকুর জলাশয়ে নিয়ে বানিজ্য
অন্যদিকে রাজশাহী মহানগরীতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে পুকুর ও জলাশয় ভরাটের কাজ। বছর খানেক আগে শহরে ২২০টি পুকুর থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে ১০০ এর নিচে। রাজশাহী মহানগরবাসীর অভিযোগ, রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে জমির মালিকরা অবৈধ এই কাজ করে চলেছেন।
অবশ্য নিয়ম অনুযায়ী পুকুর ভরাটের দাবি করলেও প্রতিবেদনটি প্রচার না করতে টাকাও সেধেছেন মালিকরা। এ দৃশ্য ও কথোপকথন বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ক্যামেরায় ধারণও করা হয়েছে। জলাশয় ও পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'পুকুর ভরাট করার কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সারফেস ওয়াটারের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু পরাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বারংবার বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করার পরও তারা দেখেও না দেখার ভান করেন। বিধায় বলতেই হয় রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির ও রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন নীরব কেন সেটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
চলতি বছরের ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা আয়োজিত এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মো. বেলাল হায়দারের উপস্থিতিতে অধ্যাপক ড. মোছা. রেবেকা সুলতানা বলেছিলেন - পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় আমরা সভা সেমিনার করে কি করব। কারন রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন দুপুর ১ টায় অফিসে আসেন এরপর উনি কিসের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করবেন। বরং রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশই এখন ভারসাম্যহীন।
▶ অনিয়ম ৩ - অভিযোগ দিলেও প্রতিকার নেই
২০২২ সালের ১৭ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টায় এবং ২০২৩ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৯.৩০ মিনিটে জাতীয় দৈনিক মাতৃভূমির খবর পত্রিকার রাজশাহী মহানগর প্রতিনিধি রমজান আলী রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীনকে ২ ট্রাক অবৈধ পলিথিনের বিষয়ে একটি তথ্য দিলে তিনি বলেন - আমি বিষয়টি দেখছি বলে তিনি তার মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তাকে বারংবার 01765711349 নাম্বারে ফোন দিলে তার ফোন সুইজড অফ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে রাজশাহী ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মারুফ হাসানকে বিষয়টি জানালে তিনি রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীনকে অবহিত করতে বলেন।
▶ অনিয়ম ৪ - জেলার সকল ইট ভাটায় মাস চুক্তি
২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় অবৈধভাবে ইট ভাটায় ইট পোড়ানোয় পরিবেশের ক্ষতি করায় উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিগত দিনে একাধিক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিল এলাকাবাসী। কিন্তু এই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান না চালিয়ে তারা নিশ্চুপ থাকেন। বিধায় এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয় তখন এক প্রকারের বাধ্য বাধকতার কারনেই রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির ঐ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
কিন্তু উল্লেখ্য যে, এরপর থেকে ২০২৩ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত আনুমানিক ৫০ টি ইট ভাটায় রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান করলেও জরিমানার হার নিতান্তই কম। কেননা নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাজশাহী ইট ভাটা সমিতির এক নেতা বলেন - মাসিক মাসোহারা নেয়ার পরও যখন লোক দেখানো অভিযান করে আমাদের আবার জরিমানা করা হয় সেটা কতটুকু মানবিক তা সকলের নজরে আনা প্রয়োজন।
[caption id="attachment_113547" align="alignleft" width="900"] রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির[/caption]
▶ অনিয়ম ৫ - ম্যাডামের ঘুষের টাকা নিয়ে মারামারি
দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভেতরের পরিবেশ নষ্ট। চলে আসছে ফাইল পাশের নামে ঘুষ গ্রহণ এবং কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে ভাগাভাগি। সম্প্রতি ঘুসের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে অফিসের ভিতরেই মারামারি ঘটনা ঘটেই চলছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত দপ্তরটি ভিতরেই মারামারিতে ২ কর্মচারী আহত হন। তবে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ধামাচাপা দেন উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীন। এমনই ঘটনা ঘটেছিল চলতি বছরের ৯ই জানুয়ারী।
জানা গেছে, গত বছর ৮ নভেম্বর রাজশাহী বিমানচত্ত্বরের পাশে অবস্থিত জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভিতরেই ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন ২ কর্মচারী। ওই দুই কর্মচারী হলেন, কম্পিউটার অপারেটর শরিফুল ইসলাম ও উপ-পরিচালকের গাড়ির ড্রাইভার জহুরুল ইসলাম।
এরপরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। গোপন সুত্রে জানা যায়, - পরিচালক মাহমুদা পারভীনের নানা অনিয়ম দুর্নীতির ফাইলপত্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুষের টাকা তুলে থাকেন ড্রাইভার জহুরুল ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দিন ম্যাডামের নামেই ফাইলের ভুল সংশোধন না করেই ফাইল ছেড়ে দিতে বলেন। সেই ফাইল পাস বাবদ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড থাকার পরও ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন।
▶ অনিয়ম - সরজমিন অনুসন্ধানে যা পাওয়া গেল
আগস্ট সকাল ৯.৩০ মিনিট রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসে গিয়ে দেখা মেলেনি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন ম্যাডামের। এরপর বেলা ১০.৩০ মিনিটেও অফিসে আসেননি ম্যাডাম। এরপর অফিসের কর্মচারী কর্তৃক খবর পাওয়ার পর ম্যাডাম হাজির হলেন বেলা আনু: ১২.৪৫ মিনিটে। এখন পর্যন্ত যা পড়লেন তা ছিল ঐ দিনের ঘটনা। কিন্তু অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন এভাবেই অফিস করেন ইচ্ছেমতো। (ভিডিও সংরক্ষিত)
তবে রাজশাহীর সুশীল মধ্যে মহল জানতে চায়, কি প্রত্যাশায়, কার মদদে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির ও রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদা পারভীন? অবশ্য নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে কতক্ষণ নীরবতা পালন করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এটাই এখন প্রশ্ন ?
তবে ইতিপূর্বে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় গনমাধ্যমে যে সকল সংবাদ রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে প্রকাশ হয়েছিল তার কিছু অংশ ও সংবাদ লিংক নিম্নে দেয়া হল -
▶দূষিত পরিবেশ নিয়েই চলছে রাজশাহীর পরিবেশ অধিদপ্তর - জাতীয় দৈনিক সাম্প্রতিক দেশকাল
▶রাজশাহীতে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা দপ্তরটির পরিবেশ নষ্ট: দৈনিক বাংলাদেশ আমার
▶ যা ইচ্ছে তাই রাজশাহীতে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা দপ্তরটি :ডেইলি নিউজ বাংলা
লিংক : https://dailynewsbangla.com/archives/16209
▶ রাজশাহী শহরের শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ ব্যাটারীচালিত যানবাহন উদাসীন পরিবেশ অধিদপ্তর - দৈনিক আমাদের সময়
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com