Dablu-Sarkar-son-of-rajakar-roshid
‘রাজাকার পুত্র’ ডাবলু যখন রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক

রাজশাহীতে ১যুগ ধরে ‘রাজাকার পুত্র’ ডাবলু মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::  রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহিষ্কারের দাবিতে  মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে চলতি মার্চ মাসের ২ তারিখে অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে ।

 

এইদিন বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে  ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কিন্তু মানববন্ধন পন্ড করতে  ডাবলু সরকারের ভাই  ও রাজশাহী মহানগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ সরকার সেডু মানববন্ধনে হামলা চালান । সাথে ছিলেন আরেক ভাই রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকারও। এছাড়া হামলায় অংশ নেন রাজশাহী মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কতিপয় কর্মীসহ  ৩০ থেকে ৪০ জন । তবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কোন নেতা কিংবা কর্মী উপস্থিত ছিলেন না । তবে ঐ সময় রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট দখলে নেন ডাবলু সরকারের ভাই জেডু ও সেডু সরকার।

 

 

 

 

এরপর শনিবার ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’ ব্যানারে রাজশাহী অঞ্চলের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ আবারোও মানবন্ধনের ডাক দেন। এতে প্রায় হাজারের উপর বিক্ষোভকারী অংশগ্রহন করেন। সেই সাথে  প্রতিটি মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও রাজনীতিতে অশনি সংকেত ও সমাজের জন্য বিপদজনক। অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে।’ তবে ডাবলু সরকারকে চিনতে হলে সবার আগে জানতে হবে রাজাকার পরিক্রমার বিষয়ে।

 

কে এই রাজাকার রশিদ সরকার ? 

রাজশাহীর কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সাত্তার ওরফে টিপুর প্রধান সহযোগী ছিলেন আরেক রাজাকার রশিদ সরকার। আর এই রাজাকার রশিদ সরকারেরই সন্তান রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ডাবলু সরকার। ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ মামলার ৪  নম্বর আসামি ছিলেন রশিদ সরকার। আসামিদের বিরুদ্ধে  অভিযোগের প্রমাণ পায় প্রসিকিউশন টিম। তবে ৬ জনের মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা ও আবুল হোসেন আগেই মারা গেছেন। বেঁচে আছেন একমাত্র আসামি টিপু সুলতান। গত ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্নাল টিপু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেন।

 

 

 

 

হাস্যকর হলেও সত্য যে, যে রাজাকারদের বিচারের জন্য আওয়ামীলীগসহ দেশের আপামর জনগন যখন ফাঁসির কাষ্ঠে রাজাকারদের ঝুলাচ্ছে ঠিক তখনই রাজকারের পুত্র ‘ডাবলু সরকার কিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে প্রায় ১ যুগের কাছাকাছি সময় ধরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে বসে আছেন তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। তবে যাদের জীবনের আত্মত্যাগে আমরা এই মার্চেই পেয়েছি স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতার জনকদের প্রতিটি আত্মা আজ সত্যি লজ্জা ও কস্ট বহন করছে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

 

 

 

রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রকৃতপক্ষে কে ?  

‘ কথায় আছে জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভাল ’।গেল প্রায় ১ যুগের অধিক সময় ধরে রাজশাহীতে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে। এখন দেখে নেয়া যাক রাজাকারপুত্র ডাবলু সরকারের গেল ১ যুগের কর্ম ও অবদান কি  ছিল।

 

▶ ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি সোবহানকে লাঞ্চিত করেন ডাবলু সরকার।

▶জাতীয় দৈনিক যায় যায় দিন ২০২০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ‘বাসের বুকিং সহকারী থেকে শত কোটি টাকা মালিক ডাবলু’

 

▶রাজশাহীর কুমারপাড়ায় ‘সখিনা বোর্ডিং’ দখল করে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে দেশ ছাড়া করেন রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকার । পরে তিনি সেখানে ১৬ তলা বিশিষ্ট সরকার টাওয়ার নির্মাণ করেন। 

 

▶রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে আবদুল জলিল বিশ্বাস মার্কেটটি নামমাত্র মূল্যে দখলে নিয়েছেন রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকার। 

 

▶রাতের আঁধারে ছোট বনগ্রাম এলাকার  বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে ১২ বিঘা জমি দখল করেছেন। 

 

▶রাজশাহী কুমারপাড়ার বিআরটিসির ডিপোর জায়গাটি আরোও এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জোর পূর্বক দখলে নেন রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকার। 

 

▶রাজশাহী সিএন্ডবি মোড়ের পাশেই আরেকটি জায়গা দখল করে ‘থ্রি স্টার’ হোটেল নির্মাণ করেছেন  তিনি। সেখানে তার ব্যবসায়িক পার্টনার রাজশাহীর বিএনপি নেতা শিমুল।  

 

▶রাজশাহী কুমারপাড়ায় রঘুশাহ নামের এক হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের ৫ কাঠা জমিও দখল করে নেন ডাবলু সরকার। 

▶ সর্বশেষ রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকারের আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ২ সপ্তাহ পরেও কেন ডাবলুকে  বহিষ্কার করা হচ্ছে না এমন প্রশ্ন রাজশাহী মহানগরবাসীসহ তৃনমুল আওয়ামীলীগের। 

 

 

তবে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ এবার রাজশাহী অঞ্চলের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ। আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতার এমন নৈতিক স্খলন মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের কষ্ট দেয়। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। তাই রাস্তায় নেমেছি।’

 

 

তবে রাজশাহী অঞ্চলের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে  বলেন, ‘যখন রাজশাহীকে এই দেশের শ্রেষ্ঠ মহানগরী হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে  এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কতিপয় হাইব্রিড দুষ্টু নেতা ও রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকারের নৈতিক স্খলনের ভিডিও চিত্রকে আমরা অভিনন্দন তো জানাতে পারি না। এই বছর জাতীয় নির্বাচনের বছর। এই বছর সিটি নির্বাচনও হবে। কাজেই রাজাকার পুত্র ডাবলু সরকারের এহেন অনৈতিক কর্ম জনমনে যে প্রভাব ফেলছে তা অপূরনীয় । কাজেই প্রতিকারে যেতে হবে। এমন ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে  রাজশাহীবাসী প্রস্তুত নয়। আমরা আশা করব, আগামীকাল কাল থেকে আওয়ামী লীগের সকলেই এই ডাবলু সরকারের শাস্তি চেয়ে রাজপথে নেমে এসেছে।

 

 

 

তবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগসহ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রবীন আওয়ামিলীগ নেতারা বলছেন – যেখানে রাজাকারের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরন হওয়ায় সেই স্কুলের বেতন ভাতা বন্ধ থাকে তবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত রাজাকারের সন্তানেরা কিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতে পারে?  আর তারপরও যদি তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন পালন করার অভিনয় করে তবে বুঝেই নিতে হবে আওয়ামীলীগ অধ:পতন সুনিশ্চিত। 

 


 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.