স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহীর মতিহার থানাধীন কোরিডোর মোড় এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে মুনায়েম গত ৮ মাস আগেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে যে সম্পদ গড়েছেন তা শুনলে চোখ কপালে উঠবেই সবার। আঙ্গুল ফুঁলে কলা গাছ হওয়া মুনাইম কোটি টাকা দিয়ে নিজস্ব বাড়ি নির্মান করেছেন। জমি কিনেছেন আনুমানিক ১০-১২ কাঠা, যার বাজার মুল্য আনুমানিক ১ কোটি টাকা। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে কি করে এতো টাকার মালিক হলেন মুনায়েম ? তার পরিবারের সদস্যরাই কি করেন?
Ultima Wallet ‘আল্টিমা ওয়ালেট’ নামের একটি অনলাইন অ্যাপে ইনভেস্ট করলেই পাওয়া যাবে ডলার। রাতারাতি হয়ে যাবে কোটিপতি। মতিহার থানাধীন বেশ কিছু এলাকায় ‘আল্টিমা ওয়ালেট’ অ্যাপের মাধ্যমে টাকা বিনিয়গের প্রচারণা চালান মুনাইম। তার এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে রাতারাতি কেটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে প্রতারিত হয়েছেন শত শত মানুষ। ইনভেস্ট করে রাতারাতি কোটিপতি হতে চাওয়া মানুষের হাতে শূণ্য ধরিয়ে দিয়েছেন অনলাইনের এই প্রতারক মুনায়েম। প্রতারিতদের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী, ওষুধ ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কৃষকেরা। তবে বেশির ভাগ রয়েছে বেকার তরুণরা।
ঐ এলাকার মৃত: আজিমদ্দিনের ছেলে লিটন ইসলাম উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – মুনায়েম ও আমি রাসিক ২৯ নং ওয়ার্ডের এক মহল্লায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে মুনাইমের সাথে আমার বন্ধু সুলভ পরিচয়। আনুমানিক গত ৭ মাস আগে মুনাইম আমাকে প্রলোভন দেই যে, Ultima Wallet অ্যাপসে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আমার মাধ্যমে প্রদান করিলে প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকা করে লাভের টাকা পাওয়া যাবে। মুনাইমের কথায় সরল মনে বিশ্বাস করিয়া গত ৭ মাস আগে কিস্তি থেকে টাকা তুলে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নগদ মুনাইম কে তার বাড়িতে ঘরের ভিতরে গিয়ে এলাকার ৪ থেকে ৫ জন পরিচিত বন্ধুর উপস্থিতিতে প্রদান করি। তার এক মাস পরে বিবাদী লাভের টাকা হিসাবে ২৮ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে আমাকে। তার পরে গত ৬ মাস অতিবাহিত হলেও বিবাদী কোন টাকা আমাকে প্রদান করে না। গত ৭ দিন ধরে তার কাছে আমার পাওনা টাকা ও লাভসহ মোট ৫ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা চাইতে গেলে মুনায়েম, দিবো দিচ্ছি বলে তাল বাহানা করতে থাকে। পরে বুঝতে পারি মুনাইম মিথ্যা বলে আমার কাছে থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে আমার সাথে।
এদিকে রাজশাহীর মতিহার থানাধীন কোরিডোর মোড় এলাকার অসংখ্যা শিক্ষিত বেকার যুবক গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান- আমরা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি নারী ও পুরুষ মিলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন মানুষের কাছে থেকে Ultima Wallet অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা ইনভেস্ট করার কথা বলে রাজমিস্ত্রী মুনায়েম প্রায় আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে। নিয়েছেন। এরপর থেকে সে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বিভিন্ন নামী দামী হোটেলে অবস্থান করে ফেসবুকে সেলফি তুলে দিচ্ছে। কিন্তু তার মতিহার থানাধীন বাসায় টাকা চাইতে গেলে মুনায়েমের বাবা চা -পান দোকানদার মনসুর আলী আমাদের বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দেখায় এবং বলে চাঁদাবাজ হিসেবে তোদের পুলিশের হাতে তুলে দেবো।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, গত ৮ মাস আগেও সে রাজশাহীর বিভিন্ন নির্মানাধীন বিল্ডিং এ রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। কিন্তু বর্তমানে সে লাখ লাখ টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছে মানুষের টাকা প্রতারণা করে। সম্প্রতি সে রাজশাহীর আসাম কলোনী এলাকায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি নির্মান করেছে। শুধু তাই নয় আসাম কলোনী এলাকায় মুনায়েম ‘আলটিমা ওয়ালেটের’ অফিস খুলে রাখলেও বর্তমানে সেই অফিস বন্ধ করে দিয়েছে মুনায়েম।
এদিকে অত্র এলাকার ৩০/৪০ ভুক্তভোগীরা আরোও বলেন – প্রথম দিকে যারা ‘আল্টিমা ওয়ালেট’ নামে একটি অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাঁরা টাকা উত্তোলন করেছেন। আবার কেউ কেউ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ওই অ্যাপে আর প্রবেশ করতে পারছেন না গ্রাহকেরা। আর এরপর থেকে ঐ এলাকায় মুনাইমকে চোখেই পড়ছেনা।
তবে সার্বিক বিষয়ে মুনায়েমের বাবা পান দোকানদার মনসুর আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান – আমার ছেলে নির্দোষ। তাই আমি মতিহার থানার সকল এসআই, এএসপি ইফতেখার, এডিসি একরামুল এবং এডভোকেট মুন্না সাহার সাথে কথা বলেছি – তারাও বলেছেন আমার ছেলে নির্দোষ। এরপরেও কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে তবে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেবো।
তবে, এ বিষয়ে মুনায়েমের সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু রাজশাহী আসাম কলোনী এলাকায় গেলে প্রতারক মুনায়েমের কোটি টাকার বাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
আরোও উল্লেখ্য যে, গেল কয়েক মাসে রাজশাহী মতিহার থানায় প্রতারক মুনায়েমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গেলে অনেকেই তা গ্রহন করেননি।তবে পরিশেষে গতকাল ২২/০৬/২০২৩ ইং তারিখে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানার ওসি আব্দুল মজিদ ও মতিহার থানার তদন্ত ওসি শাহিনের হস্তক্ষেপে অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে।
এবিষয়ে আরএমপি মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – প্রতারক অনলাইনের হোক কিংবা অফলাইনের প্রতারনা করলে প্রতারকের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.