
📌 নিজস্ব প্রতিবেদক । উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: যখন বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে সংস্কারের কাজ চলমান ঠিক তখনই কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য নিজেদের যেন কোন ভাবেই দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছেন না।অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওডব্লিউএ) ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম বলেছিলেন – পুলিশ হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে পুলিশকে এমন অবস্থায় আর কখনও পড়তে হয়নি। “আমরা সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ যাতে আর কখনও জনবিরোধী অবস্থানে ফিরে যেতে না পারে সেই লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদ্যম, আগ্রহ আর নিষ্ঠা নিয়ে আমরা পুলিশকে সংগঠিত করছি।”
সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান গত বছর যোগদানের পর থেকেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করে চলেছেন এবং পুলিশকে সুসংগঠিত করতে এখন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে তথা মেট্রোপলিটন পুলিশকে সুসজ্জিত করতে যে সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করছেন তা রাজশাহী মহানগরবাসীর জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।
কিন্তু তারপরেও প্রত্যেক সংস্থা কিংবা বাহিনিতে এমন কিছু সদস্য আছেন ,যারা পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অভ্যুত্থানের আগেও দুর্নীতিবাজ ছিলেন এবং এখনও দুর্নীতিবাজ রয়েছেন। এদেরই অন্যতম একজন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানার লক্ষিপুরের পুলিশ বক্স ইনচার্জ এসআই করিম। এখন প্রথমেই জানা যাক ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট কে এই এসআই করিম ? তিনি এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন । এই এসআই করিম সম্পর্কে জানতে হলে ২০২৪ সালের কিছু ঘটনাবলী নিচের লিংক থেকে সহজেই জানতে পারবেন ।
https://uttorbongoprotidin.com/corrupt_si_abdul_karim_rajshahi/
এবার আসা যাক মুল ঘটনায়, ২০২৫ সালের ১৪ই অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২.১৫ মিনিটের দিকে রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় অবস্থিত একটি গ্যারেজের মাইক্রো ও কারের ওয়্যারিং মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম টিটু একটি কার ঠিক করার পর ট্রায়াল দেয়ার জন্য বের হন । এসময় লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের সামনে কারের লাইট ওয়্যারিং আবার বিকল হয়ে গেলে অন্ধকারে ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটু রোড ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা খান। এ সময় রাজশাহী লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই করিম ও এএসআই শাহ আলম টিটুকে বক্সে ধরে নিয়ে যান। উক্ত সময় টিটুকে বলা হয়, তুমি মাদক সেবন করে গাড়ি চালাচ্ছিলে বিধায় তোমাকে আটক করা হলো। কিন্তু উক্ত সময় ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটু প্রকৃত ঘটনা বললেও তা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই করিম। পরবর্তীতে ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটুকে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয় ভীতি দেখিয়ে ৪০,০০০ টাকা উৎকোচ নেন এসআই করিম। টাকা নেয়ার পর পরবর্তীতে ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটুকে আরএমপি ধারায় চালান দেয়। অবশ্য উক্ত সংবাদটি স্থানীয় ও দৈনিক জাতীয় গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ইতিমধ্যে।
অনুসন্ধানে জানা যায় , শুধু ওয়্যারিং মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম টিটু নন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রুগীদের দালাল সিন্ডিকেট , বিভিন্ন ক্লিনিক, বেসরকারী হাসপাতাল, লক্ষিপুর কাঁচাবাজারসহ ফুটপাত থেকেও মাসোহারা নেন লক্ষিপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই করিম। অন্যদিকে ঘুষের বিষয়টি সাংবাদিক মহলে জানাজানি হলে ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটুকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান হচ্ছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারই এক নিকট আত্মীয়।
আরও উল্লেখ্য যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট এসআই করিম দ্বায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন জায়গায়। যেমন রাজশাহী মহানগর ডিবি, দামকুড়া থানা, রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার শিরোইল ফাঁড়িসহ আরোও বেশ কিছু গুরুত্ত্বপুর্ন জায়গায়। তবে যেখানেই গেছেন বিএনপি ও জামাতকে নাস্তানাবুদ করতেন। যার অসংখ্য উদাহারন রয়েছে বোয়ালিয়া মডেল থানা, দামকুড়া থানা ও রাজশাহী মহানগর ডিবিতে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য রাজশাহী রাজপাড়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান – দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমি অবহিত। কিন্তু টাকা লেনদেনের বিষয়ে কোনো ঘটনা আমি জানি না। এ বিষয়ে এসআই করিমের সাথে কথা বলবো।পরবর্তীতে রাজপাড়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করননি।
এদিকে এসআই আব্দুল করিমের এইরুপ কর্মকান্ডে উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ , সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক)সহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার সদস্যবৃন্দ। তারা বলছেন – ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি রাজশাহী মহানগরীতে গুটিকয়েক পুলিশ অফিসার বিভিন্ন অপকর্মের জন্ম দিয়েছিলেন । তবে যারা অপকর্মে জড়িত ছিলেন তারা কিন্তু অনেকেই নেই । তবে রাজশাহী মহানগরীর বর্তমান পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান যে দৃষ্টিকোন থেকে রাজশাহী মহানগরীকে পরিচালনা করছেন তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আমরা মনে করি ।
