Corruption in Rajshahi voluntary Indian High Commissioner Bhati's departure to the public
রাজশাহীতে দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারী ভারতীয় হাই কমিশনার ভাটির বিদায়ে স্বস্তি

রাজশাহীতে দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারী ভারতীয় হাই কমিশনার ভাটির বিদায়ে স্বস্তি

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

কুটনৈতিক প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::  রাজশাহীতে নিযুক্ত বিতর্কিত ভারতীয় হাই কমিশনার মিস্টার ভাটিকে নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের আজ ৩য় ও শেষ পর্ব প্রকাশ হলো। 

🟥 ১ম পর্বরাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জয় ভাটি যেভাবে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালেন

🟥 ২য় পর্ববাংলাদেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো ভারতীয় হাই কমিশনার মিস্টার ভাটি দূর্নীতির রোল মডেল

🟥 ৩য় ও শেষ পর্ব

বিতর্কের বোঝা নিয়ে রাজশাহী ছাড়লেন ভাটি।কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত নানান বিতর্কিত ঘটনার কালোছাপ রেখে শুক্রবার রাজশাহী ছেড়েছেন ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি। ভিসা দুর্নীতি ও হয়রানি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ,  ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো, তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে পরিকল্পিত বিভেদ বিভাজন সৃষ্টি, সরকারি কাজে অনাকাঙ্খিত তদবির ও হস্তক্ষেপ, অর্থ কেলেংকারি এবং নারীসঙ্গ উপভোগসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কাজে জড়িয়েছেন ভাটি।

 

এদিকে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি তাকে দিল্লীর সাউথ ব্লকে (ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) তাকে ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৩১ মে রাজশাহীতে তার দায়িত্ব শেষ হয়। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিদায় সংবর্ধনা নিচ্ছিলেন। ভাটির রাজশাহী ত্যাগের খবরে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তাদের অভিযোগ, বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ভারতের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন ভাটি।এদিকে রাজশাহী নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ওই দূর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ভারতীয় হাই কমিশনারের বিদায়ে মিস্টি বিতরন করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।

 

 

🟥 যা দাবি করেন মিস্টার ভাটি

তবে সঞ্জীব কুমার ভাটির দাবি, তিনি রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের মাঝে ভারতের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করেছেন। বিধিবদ্ধ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তিনি বন্ধুপ্রতীম নিকট প্রতিবেশি ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের বিদ্যমান বিবিধ যোগাযোগ ও মেলবন্ধনকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করেছেন। 

 

🟥 সরেজমিন অনুসন্ধান যা বলছে 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩ মার্চ সঞ্জীব কুমার ভাটি রাজশাহীতে ভারতীয়  হাইকমিশনের সহকারি হাইকমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই সঞ্জীব কুমার ভাটি আগ্রাসী কূটনীতির পাশাপাশি বিধিবদ্ধ কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন শুরু করেন। দায়িত্বের  শেষদিন পর্যন্ত রাজশাহীতে এসবই করেছেন। 

 

সূত্র মতে, ভারত সরকারের অনুদান ও অর্থায়নে রাজশাহীতে বেশ কিছু প্রকল্প সম্প্রতি শেষ হয়েছে।  রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। ভাটি এসব প্রকল্পের অর্থছাড় সুপারিশের জন্য ঠিকাদারের কাছে কমিশন দাবি করেন। এ নিয়ে রাসিকের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি শুরু করেন। ঠিকাদার ভাটিকে কমিশন দিতে অসম্মতি জানালে প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধের হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তিনি ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন আদায়ের পর অর্থছাড়ের সুপারিশ দেন। ভাটির এসব কর্মকান্ড নিয়ে সিটি মেয়র পড়েন চরম অস্বস্তিতে।

 

🟥 রাজনৈতিক দলীয় কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ

 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ মার্চ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করেন ভাটি। বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদের তালিকা পাঠিয়ে তাদেরকে কমিটিতে পদ দিতে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ওপর অযাচিত চাপ ক্সতরি করেন। নেতৃবৃন্দ ভাটি সুপারিশকৃত ১২ জনকে কমিটিতে পদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই ঘটনার পর ভাটি, সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম  খায়রুজ্জামান লিটন ( বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা প্রকাশ্যে বলা শুরু করেন।

 

 

🟥 অনুসন্ধানে যা ভয়ংকর তথ্য এসেছে

তবে,খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রাজশাহী ধর্মসভা, পঞ্চবটি মহাশশ্মান ও লক্ষী নারায়ণ বিগ্রহ মন্দিনের নেতৃত্ব নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে দীর্ঘদিনের চলামান দ্বন্দ্বকে তিনি বারবার উস্কানী দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উপক্রম করেন। একপক্ষের হয়ে তিনি নিজেই একবার মন্দির দখলে ঘটনাস্থলে যান। মন্দির দখলে পুলিশ দিয়ে সহায়তার জন্য বারবার আরএমপি কমিশনারের ওপর চাপ দেন। তবে পুলিশ উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করেন।

 

অভিযোগে জানা গেছে, রাজশাহী প্রকৌশল  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( রুয়েট) নিয়োগ ও বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজের টেন্ডারেও ভাটি হস্তক্ষেপ করেছেন বারবার। লোক নিয়োগে যেমন চাপ দিয়েছেন তেমনি পছন্দের কোন ঠিকাদারকে কাজ দিতেও অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন। টেন্ডার থেকে দাবি করেছেন কমিশন। রুয়েট প্রশাসন চরমভাবে বিবৃত হন। শেষ পর্যন্ত কোন সুবিধা না পেয়ে ভাটি জামায়াত প্রভাবিত কিছু অখ্যাত অনলাইন ও আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সাংবাদিক জড়ো করে তাদেরকে দিয়ে রুয়েট প্রশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার সংবাদ করিয়েছেন। 

 

এ প্রসঙ্গে রুয়েট প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিষয়গুলি আমরা বলতেও বিব্রতবোধ করছি। বন্ধু দেশের একজন কূটনীতিক এভাবে এতটা অসৌজন্যমূলক আচরণ করবেন-আমরা ভাবতেও পারি না। ভাটি বহুবার ফোন দিয়ে রুয়েট ভিসিকেকে চাপ দিয়েছেন তার পছন্দের লোকজনকে চাকরি দিতে হবে। টেন্ডার দিতে হবে। এসব ভাবাই যায় না।

 

বাংলাদেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো ভারতীয় হাই কমিশনার মিস্টার ভাটি দূর্নীতির রোল মডেল
বাংলাদেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো ভারতীয় হাই কমিশনার মিস্টার ভাটি দূর্নীতির রোল মডেল

🟥 সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন মেরুকরন! 

অভিযোগে আরও জানা গেছে, ভাটি, রাজশাহীতে কর্মরত মুলধারা প্রগতিশীল সাংবাদিকদের সঙ্গেও চরম বৈরী আচরণ করেন। ভিসা না দিয়ে তাদেরকে চরম হয়রানি করেছেন। দিনের পর দিন পাসপোর্ট আটকে রাখেন। অকারণে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করেন। অন্যদিকে জামায়াতি ভাবাদর্শের সাংবাদিকদের নিয়ে ভাটি নিয়মিত বৈঠক করেছেন তার দপ্তরে। সাংবাদিকদের মধ্যে দলাদলি ও বিভাজন সৃষ্টিতে প্রকাশ্যে ইন্ধন দিয়েছেন। অতিষ্ঠ হয়ে শেষাবধি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ভাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে চিঠি দেন। তবে ভারতীয় হাইকমিশন ভাটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলি এখন তদন্ত করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলি থেকে জানা গেছে।

 

 

🟥ভিসা প্রদানে স্বেচ্ছাচারীতা!

এদিকে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও মিস্টার ভাটি চরম স্বেচ্ছাচারি আচরণ করেছেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও তার স্ত্রীকে বেনাপোল পথে ভিসা দেওয়া হলেও শিক্ষক দম্পতির দুই নাবালক সন্তানকে দেওয়া হয় এয়ার ভিসা।  অনেকের ভিসা নিয়ে বসে থাকলেও দিনের পর দিন তাদেরকে ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট আটকে রাখেন। আবার যারা ভাটির দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করেছেন তাদেরকে তিনদিনেই ভিসা দিয়েছেন। যারা ব্যক্তিগত চেষ্টায় ভিসা আবেদন করেছেন তাদের অধিকাংশই চরম হয়রানির শিকার হন ভাটির হাতে। সময়মতো ভিসা না পেয়ে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। 

 

🟥জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যহতি প্রদান

 

অনুসন্ধানে, অভিযোগে আরও জানা গেছে, রাজশাহী সহকারি হাইকমিশনে কর্মরত লোকাল ষ্টাফদের অনেকেই ভাটির নির্দেশমতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সহায়তায় রাজি না হলে তাদের অনেককেই তিনি অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেন। তাদেরই একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাক্তি অভিযোগ করে  বলেন, আমরা এই দেশের তেলে জলে বড় হয়েছি। বাংলাদেশের স্বার্থপরিপন্থি কোন কাজ করতে রাজি না হওয়ায় ভাটি আমিসহ অফিসের কয়েকজনের ওপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ হন। এমন কিছু সরকার বিরোধী ও বিপজ্জ্বনক ব্যক্তির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে যা নিয়ে আমরা কথা বলতাম। অপরিচিত নারীরা এসে ভাটির প্রাইভেট কক্ষে ঢুকে পড়তেন। হাইকমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমরা আপত্তি করতাম। ভাটি ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাদেরকে চাকরি ত্যাগ করাতে বাধ্য করেন। দিল্লীর সংশ্লিষ্ট বিভাগেও আমরা এসব বিষয় জানিয়েছি। 

 

🟥যেভাবে ভুক্তভোগীসহ রাজশাহীবাসী খুশী

একটি মানুষের বিদায়ে যখন মিস্টি বিতরন করেন কোন ভুক্তভোগী তখন বুঝতে আর কারো বাকী থাকেনা তার কস্টের জায়গাটা কোথায় বিধায় মিস্যার ভাটির বিদায়ে  রাজশাহীবাসীসহ খুশী অনেকেই। কারন একটাই রাজশাহীবাসী আর কখনো ভাটির মত দূর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ভারতীয় হাই কমিশনার আর কখনই চায়না। 



উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.