corrupt_si_abdul_karim_rajshahi
আসামী গ্রেফতারের পর বানিজ্য করেন যেভাবে রাজশাহী মহানগর ডিবির এসআই করিম

আসামী গ্রেফতারের পর বানিজ্য করেন যেভাবে রাজশাহী মহানগর ডিবির এসআই করিম

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার জনাব বিপ্লব বিজয় তালুকদার বিপিএম গত বছর যোগদানের পর থেকেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করেছেন।

 

এরপর  রাজশাহী মহানগর ডিবিকে সাজিয়েছেন নতুন আঙ্গিকে । বিশেষত রাজশাহী মহানগর ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার কে এম আরিফুল হক যোগদানের পরেই রাজশাহীতে কিশোর গ্যঙ্গ উৎখাত, ছিনতাইকারী দমন, অপহরন চক্র নিধন,সাইবার অপরাধ দমন,মাদক নির্মূলসহ অসংখ্যা অপরাধ দমনে প্রশংষা অর্জন করেছে রাজশাহী মহানগর ডিবি তথা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ । 

 

কিন্তু এরই মাঝে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে মুষ্টিমেয় পুলিশের দুর্নীতিবাজ একটি দুষ্টচক্র। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর ডিবির কতিপয় পুলিশ সদস্য নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। অনুসন্ধানে এরই মধ্যে উঠে এসেছে রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার শিরোইল ফাঁড়ির বিতর্কিত সাবেক ইনচার্জ ও মহানগর ডিবিতে বর্তমানে কর্মরত এসআই আব্দুল করিম তালুকদার ও তার টিমের নাম। সত্যিকার অর্থে অভিযোগ যেখানে পাহাড় সমান সেখানে একটি অভিযোগ বেমানান।

 

১।   গ্রেফতারের পর বাণিজ্য 

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪/০৫/২০২৪ ইং তারিখ শুক্রবার বেলা আনুমানিক ১২.৩০ মিনিটে রাজশাহী দামকুড়া থানাধীন কসবা এলাকায় অভিযান চালায় রাজশাহী মহানগর ডিবির এসআই আব্দুল করিম ও তার টিম। অভিযানের সময় রাজশাহী দামকুড়া কসবা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে আড়াই বোতল আমদানী নিষিদ্ধ ফেন্সিডিল বিক্রির সময় গ্রেফতার করা হয় রজব আলী নামক এক যুবককে। গ্রেফতারের পর রজব আলীকে নির্যাতন চালান এসআই করিম। পরবর্তীতে এসআই করিম রজব আলীর বোনের বাড়ি গিয়ে হেরোইন মামলা দিয়ে চালান দেয়ার কথা বলে আবারোও নির্যাতন চালান রজবকে। এসময় এসআই করিম ১ লক্ষ টাকাও দাবি করেন রজবের পরিবারের কাছে। 

 

এদিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে,  রাজশাহী দামকুড়া থানাধীন কসবা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক কর্মচারী জানান – রজবকে নির্যাতনের সময় রজবের ছোট শ্যালক প্রতিবাদ করলে এসআই করিম এক পর্যায়ে রজবের ছোট শ্যালককে মারধর করেন। এছাড়া রজব আলীকে হেরোইন মামলা দিয়েও  চালান দেয়ার ভয় দেখান। এসময় এসআই করিম রজবের পরিবারের কাছে ১ লক্ষ টাকা দাবি করলে রজবের পরিবার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রজবের শ্যালক রুবেলের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা দেন এসআই আব্দুল করিম তালুকদারকে। তাছাড়াও আমাকে উক্ত মামলার সাক্ষী হওয়ার জন্য তিনি রীতিমতো চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আর সাক্ষী হয়নি।

 

২।  জুয়ার বোর্ডে বাণিজ্য

রাজশাহী মহানগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি জুয়ার বোর্ড গোপনে চলে। আর এই সকল জুয়ার বোর্ডের টাকা নিজেই গিয়ে উত্তোলন করেন এসআই করিম। উল্লেখ্য যে, রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার শিরোইল ফাঁড়ির ইনচার্জ থাকাকালীন শালবাগান,বাস টার্মিনাল, ভদ্রা, রেলগেট,  ছোট বনগ্রাম, সপুরাসহ মহানগরীর বিভিন্ন জুয়ার বোর্ডে মাশোয়ারা তুলে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়। এছাড়াও ২০২০ সালের মার্চ মাচে ৪ বন্ধুকে ধরে ব্যাংকের বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়ে ১ বন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হন  এসআই আব্দুল করিম তালুকদার। এরপর বদলী হয়ে যান রাজশাহী দামকুড়া থানায়। দামকুড়া থানায় থাকাকালীন মাদকের গডফাদারদের সাথে গড়ে তুলেছিলেন সক্ষতা। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী মহানগর ডিবিতে আসার পর থেকেই গ্রেফতারের পর ভয় ভীতি দেখিয়ে ঘূষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতি নিয়ত।

 

৩| মাদক বিক্রি বানিজ্য 

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী কাটাখালী নওদাপাড়া স্কুল মোড় এলাকায় প্রায় ৫০০ বোতল আমাদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছিলেন এসআই করিম। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিয়ে উদ্ধারকৃত মাদক পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে বলে জানান। কিন্তু মাদক উদ্ধারের বিষয়টি ২ দিন পর্যন্ত ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করেছিলেন এসআই করিম। তবে স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ বারংবার বিষয়টি  জানার চেস্টা করলে এসআই আব্দুল করিম তালুকদার জানান ‘ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি ’।

 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মহানগর ডিবির এসআই  আব্দুল করিমের দ্বারা যারাই নির্যাতনের শিকার  হয়েছেন তাদের ভাষ্য অনুযায়ী রাজশাহী মধ্যে মহানগর ডিবির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এসকল বিষয়ে মোটেও অবগত নন কেননা ঘটনাগুলো ঘটার সাথে সাথেই অধিকাংশ সময় ঘটনাস্থলেই রফাদফা করা হয় আসামীদের সাথে বিধায় ডিবি অফিস পর্যন্ত এসকল বিষয় জানাজানি হয়না । বিধায় এসআই আব্দুল করিমের গ্রেফতার বানিজ্যসহ অন্যান্য  কর্মকাণ্ড  সবার অগোচরেই থেকে যায় । 

 

এদিকে রাজশাহী রাজশাহী মহানগর ডিবির এসআই  আব্দুল করিমের  এইরুপ কর্মকান্ডে উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সচেতন নাগরিক সমাজের (সনাক) এর নেতা জামাত খান। জামাত খান বলেন – ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি রাজশাহী মহানগরীর কিছু পথভ্রষ্ট পুলিশ অফিসার বিভিন্ন অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন। আমরা চাইনা – রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের  গুটি কয়েক পথভ্রষ্ট পুলিশের কারনে তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলুক। কারন রাজশাহী মহানগরীর বর্তমান পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার যে দৃষ্টিকোন থেকে  রাজশাহী মহানগরীকে পরিচালনা করছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত। কারন এখন পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি যা করেছেন তা মাইল ফলক হয়ে থাকবে। বিধায় আমরা চাইনা এই শান্তির নগরীতে গুটি কয়েক পুলিশ সদস্য অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি করুক। 

 

 

তবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সমাজ বিশেষজ্ঞদের মতে- এখুনি যদি এই সকল করাপ্টেড পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে যদি কোন পদক্ষেপ না নেয়া যায়,তবে বাংলার প্রতিটি থানায় এইরকম একটি করে দুর্নীতিবাজ এসআই  আব্দুল করিমের  জন্ম হবে আর সেই সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত দূর্নীতি বিরোধী অভিযান কখনই সফলতার মুখ দেখবেনা। 

 

 

(সংশোধিত সংস্করণ ) 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.