তবে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন না হলেই এমন ঘটনা সর্বত্রই ঘটবে। যেমনটা ঘটেছে রাজশাহী জেলা ডিবির এই ইন্সপেক্টর আতিকের বিরুদ্ধে। গেল কয়েকদিনে স্থানীয় দৈনিক, জাতীয় দৈনিকসহ ৩০টি গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ইন্সপেক্টর আতিকের বিরুদ্ধে সংবাদ। তবুও অদৃশ্য কারনে মুখে কলুপ এঁটেছেন অনেকেই।
সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিক ও তার টিমের কতিপয় পুলিশ সদস্য নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। অর্থের বিনিময়ে মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের সহায়তা দেয়া, উৎকোচ, নিরাপরাধীদের আটকে পেন্ডিং মামলায় জড়ানো, মিথ্যা দোষারোপে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের ফাঁসানোর চেষ্টা, পুলিশ কর্মকর্তার ‘কালো টাকা’ লেনদেনে রাজি না হওয়া, সম্পত্তি জবর দখলসহ রাজশাহী জেলা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান সব অভিযোগ। সব অভিযোগ গণমাধ্যমের সামনে আসেনি। আবার অনেকে ভয়ে মুখ খোলেনি। আবার কেউ কেউ গোপনে অভিযোগ জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের হেড কোয়ার্টারে। তবে রাজশাহী জেলা ডিবি পুলিশের যে সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা পূর্বে ‘গুরু পাপে লঘুদণ্ড’ পেয়ে এমনটাই করে চলেছেন।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ১
গত ২৩/১০/২০২৩ ইংরেজি তারিখে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার সেতাবুর রহমানের পুত্র উজ্জ্বল হককে। কোন হিরোইন না পেয়েও ২০ গ্রাম হিরোইন দিয়ে চালান দেয় ইন্সপেক্টর আতিক। যার মামলা নং ৬৩ গোদাগাড়ী থানা । এসময় কম হেরোইন দেয়ার কথা বলে উজ্জ্বলের বাবা সেতাবুর রহমানের কাছে ২লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন ইন্সপেক্টর আতিক।। এছাড়াও যে ব্যাক্তির আক্রোশের কারনে উজ্জ্বল হককে মামলা দেয়া হয় তার কাছে নেন ২ লাখ টাকা নেন ইন্সপেক্টর আতিক।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ২
গত ১১/১০/২০২৩ ইং তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কোদালকাঠি এলাকার মিজানুর রহমান মামুনের কাছ থেকে ১০০ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার করে ২০ গ্রাম হিরোইন দিয়ে চালান দেন। যার মামলা নং ৩০। পরবর্তীতে বাকী ৮০ গ্রাম হেরোইন উধাও হয়ে গেছে।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ৩
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৩ খ্রি. রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানাধীন দিঘলকান্দি গ্রাম হতে সকাল ০৬:৫০ টায় ২জন মাদক ব্যবসায়ীকে ৩০ গ্রাম হেরোইন-সহ গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলার ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের নাম মো: আশরাফুল ইসলাম (২৫) ও মোছা: মর্জিনা বেগম (৪৫)। কিন্তু এই ঘটনায় ইন্সপেক্টর আতিক মর্জিনা বেগমের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে। এসময় মর্জিনা বেগম তআর এক কাছের আত্মীয়ের কাছে ফোন দিলে তিনি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ইন্সপেক্টর আতিকের ঘূষ দাবি করার বিষয়টি জানান। এসময় চারঘাট থানার পুলিশ উপস্থিত হলে ইন্সপেক্টর আতিক হেরোইন উদ্ধার হয়েছে বলে জানান। কিন্ত উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের হেরোইন দেখাতে পারেননি। গ্রেফতারকৃত আশরাফুল ইসলাম নাটোর জেলাধীন নাটোর সদর থানার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মো: নুরু মন্ডলের পুত্র এবং মোছা: মর্জিনা বেগম রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার দিঘলকান্দি (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের মৃত ইয়াদ উল্লাহর কন্যা।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ৪
সম্প্রতি মিন্টু নামের গোদাগাড়ীতে একজন সোর্স ও প্রতারককে নিয়োগ করেছেন রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিক।আর এই সোর্স ও প্রতারক মিন্টু কয়েকজন মাদক কারবারি ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। মাদক কারবারিরা তাকে টাকা দিলেও সাধারণ মানুষরা তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। তবে গোদাগাড়ী সাধারণ মানুষ বলছেন মিন্টু মুলত জেলা ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজা’র লোক। তাঁর নামে মাসোহারা উত্তোলন করাই তাঁর কাজ৷ যারা মাসোহারা দেয় না তাদেরকে আতিকুরকে দিয়ে আটক করায় এবং মামলা দেওয়ায়। অডিওতে তিনি আরও বলেন সম্প্রতি উজ্জ্বল নামে একজনকে তাঁর কথা না শোনায় তাকে তিনি আটক করিয়েছেন।
আরোও উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের একটি ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের টাকা দাবি’র অডিও ফাঁস হয়। ওসি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ওই ঘটনায় অপর দোষী ব্যক্তি জেলা ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজার কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। সে সময় ওই ঘটনার ওসি ও আতিকুর রেজা’র বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী নারী পুলিশের উদ্ধর্তন মহলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
[caption id="attachment_115688" align="alignleft" width="900"] রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার[/caption]
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ৫
২০২১ সালে দেবীপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের কলেজে পড়ুয়া ছেলে সাওন আজমকে হেরোইন ও ইয়াবা বড়ি মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় স্থানীয় লোকজন ডিবির ওই কর্মকর্তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পরে সাধারন লোকজনের রোষালনে পড়ে সাওন আজমকে ছেড়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে এলাকা ত্যাগ করেন ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের দূর্নীতি সমাচার ৬
৪ আগস্ট-২০২২ সালে দূর্গাপুরের অপর আরেক ঘটনায় রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও মিথ্যা মাদক মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিলো। রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন এবং সচেতন গ্রামবাসী।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতরের প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ডিসিপ্লিন (পিএসডি) শাখায় জমা পড়ছে রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিক ও তার টিমের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ । এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের পিএসডি শাখায় অভিযোগ জমা দেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগকারী বলেন – তারা আটক বাণিজ্যের সাথে সক্রিয় আছেন কিনা খোদ হেড কোয়ার্টার তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ,কারণ আমি তো ভুক্তভোগী ,আমি তাদের অনুরোধ জানিয়েছি মাত্র।
▶ ইন্সপেক্টর আতিকের সম্পদ বিবরনী ও দুদকের বক্তব্য
রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিক যে ঘূষ দুর্নীতি কিংবা গ্রেগতার বানিজ্য করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তা কিন্তু নয় রাজশাহীর বেশ কয়েকটি ডেভলপার কোম্পনির সাথে যোগাযোগ করে মহানগরীর তালাইমারি মোড়ের পাশে( সাবেক নর্দান ইউনিভার্সিটির গলি) বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটির পেছনে নির্মান করছেন বহুতল ভবন। সেই ভবনের কাজ এখনও চলমান। এছাড়াও তার রয়েছে ২ টি নিজস্ব মাইক্রো ও কার। যার দাম প্রায় ২ কোটি টাকার উপর।
তবে অবৈধ আয়ে বহুতল ভবন নির্মান ও নিজস্ব কার মাইক্রো থাকার বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় শাখার দূদকের উপপরিচালক ফকরুল আবেদীন হিমেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান - বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউ ঘূষ দুর্নীতির আয়ে একতালা ভবনও যদি নির্মান করে আর তা যদি তদন্তে প্রমানিত হয় তবে সে যেই হোক খোদ দূদক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আবু মোত্তালেব বাদল রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ডিবির কতিপয় সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যাপক গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে । এছাড়াও ২০২২ সালে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে বাংলাদেশ পুলিশের পিএসডি শাখায়। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছেই আশ্রয় খুঁজেছে। আর দীর্ঘদিন থেকেই পুলিশ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। অপরাধ দমন করাই তাদের কাজ। আর সে পুলিশই যদি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে….? তবে মানবাধিকার কমিশন উক্ত বিষয়গুলি পুলিশ সদর দফতরের প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ডিসিপ্লিন (পিএসডি) শাখায় অবহিত করেছে । আশা করি দ্রুত ফলাফল আসবে ।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেন - রাজশাহীর প্রেক্ষাপটে আপনারা দেখেছেন চেইন অফ কমান্ড যখন কোন পুলিশ সদস্য ভঙ্গ করে তখন তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হয়। গত ২০২১ সালে রাজশাহী মহানগরীর ডিবির ডিসিসহ ৩৮ পুলিশ সদস্যকে এক যোগে বদলীর ঘটনা এর অন্যতম উদাহারন হতে পারে। তবে ইন্সপেক্টর আতিক রাজশাহীতে যে দূর্নীতির উদাহারন সৃষ্টি করেছেন তাও সবার জন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে। তবে এখনই যদি এই সকল পুলিশ অফিসারের লাগাম না টানা হয় তবে প্রদীপ দাসের মত পুলিশের সৃস্টি হতে বেশী সময় লাগবেনা। তবে জানা প্রয়োজন দূর্নীতির বরপূত্র রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকের উকিল বাবা কে?
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান - কোন নির্দিষ্ট দূর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের দ্বায় পুলিশ বাহিনীর উপর বর্তায় না। কেননা যে সকল পুলিশ সদস্য দূর্নীতিতে জড়াবেন সেই দ্বায়ভার তাকেই নিতে হবে। কেননা কতিপয় অসৎ পুলিশ অফিসারের কারনে সমগ্র পুলিশ বদনাম হোক সেটি আমাদের কাম্য নয়।
তিনি আরোও জানান ‘আইজিপি’স কমপ্লেন সেল’ নামে একটি অভিযোগ কেন্দ্র গঠন করা হয়েছে, যা ২৪ ঘণ্টা চালু আছে। আপনারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ০১৭৬৯৬৯৩৫৩৫-৩৬ এই দুটি নম্বর ডায়াল করেও অভিযোগ জানাতে পারবেন। এছাড়া complain@police.gov. এই ইমেইলে কম্পলেইন লেটার পাঠিয়ে দিতে পারেন।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com