Complaint-and-press-conference
রাজশাহীতে আদালতের আদেশ অমান্য করে নালিশ ও সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহীতে আদালতের আদেশ অমান্য করে নালিশ ও সংবাদ সম্মেলন

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

ষ্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: 

খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল র্গি এল দেশে,

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে?

১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত ১০ বছর ধরে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিয়মিতভাবে লুটতরাজ চালাত বর্গিরা।  কথা নেই, বার্তা নেই, রাতের আঁধারে একদল লোক ঘোড়া টগ বগিয়ে হানা দিয়ে  তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকল, লোকজনকে মেরে-ধরে সবকিছু কেড়ে নিতে এবং লুটপাট চালিয়ে সব কিছু দখল করে নিত।

 

তবে বিংশ শতাব্দীতে ঘোড়া তলোয়ার না থাকলেও স্টাইল বদলে দিনের আলোতেই বর্গীদের অনুসারীরা পিস্তল,রিভিলভার নিয়ে সাধারন মানুষের দোকান লুটতরাজ করছে। যেমনটি ঘটেছে রাজশাহী ম্যাচ ফ্যাক্টরির মোড়ের আহম্মদনগর এলাকায়। রাতের আধারে দোকানপাট ভাঙচুর করে গুঁটিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদা।  শুধু তাই নয় গুঁড়িয়ে দিয়েই দখল করে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টিকে হালাল করার চেস্টা করেছেন।

 

বিধায়  গত ১৭/০১/২০২৩ ইং তারিখে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন –  ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি রাজশাহী মহানগরীর বিসিক মোড় এলাকায় লাকি বেগম নামে একজন নারীর কাছ থেকে সোয়া ৫ কাঠা জমি কেনেন এবং পরবর্তীতে ৪ জুলাই জমিটি নিজের নামে খারিজ করে নেন। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জমিটিতে সীমানা প্রাচীর এবং বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এরপরেই মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা  আব্দুল বারী তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগ করেন। 

 

Complaint-rajshahi
🔻জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল বারীকে জামাতের লোক তকমা দিয়ে ঘায়েল করার অপচেস্টা।

কিন্তু ছবি এবং ভিডিও পর্যালোচনা করলে স্পস্টই দেখা যায়, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদা তার বাহিনী নিয়ে ভাঙ্গচুর চালান ও পরে দখল করেন। যা দিনের আলোর মত প্রতীয়মান। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন দাঁড়ায়, আব্দুল বারী তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কখন বাধা দিতে গেলেন ?  কারন উক্ত জমি আব্দুল বারী কিনেছেন ২০০৬ সালে।

 

সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হোদার যা অভিযোগ ছিল তার নিম্নরূপে বর্নিত

১| আব্দুল বারী ভূমিদস্যু ও জালিয়াতি চক্রের সদস্য।

২| আরএস রেকর্ডীও প্রজাদ্বয় |হারুন ও নাজিরের পিতা নাম ভিন্ন।

৩| জমির প্রকৃত মালিক সাফিনা বেগম।

 

🔻 হারুন ও শেখ নাজির এর পিতার নাম ভিন্ন হয় যে কারনে  

তফসীলভুক্ত সম্পত্তি থানা পবা, হাল বোয়ালিয়া, মৌজা পবা, জেএল নং- ৮১, মধ্যে, আরএস খতিয়ান নং-৩৩৩, আরএস দাগ নং- ১৫১১ রকম ভিটা পরিমান ০.৮৮১ একর।  গত ২১/৩/১৯৬২ ইং তারিখে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির বর্নিত সম্পত্তি ক্রয় সূত্রে মালিক হয়, যার দলিল নং- ৫৩৮২। এবং পরবর্তী ১৯৭২ তাদের নামে আর/এস রেকর্ড (৩৩৩) প্রকাশিত হয়। আর/এস রেকর্ডে  বর্নিত সম্পত্তির মালিক হিসেবে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর নাম থাকলেও তাদের পিতার নাম দেয়া আছে শুধু শেখ মোহাম্মদ। কিন্তু ২১/৩/১৯৬২ ইং তারিখের তাদের ক্রয়কৃত দলিল নং – ৫৩৮২ যাচাই করে দেখা যায় সেখানে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর পিতার নাম আছে মোহাম্মদ শেখ বশির। কিন্তু দলিল ও রেকর্ড অনুযায়ী হারুন ও শেখ নাজিরের আপন ভাই হলেও আসলে হারুন তার আপন ভাই নয়। হারুন মূলত নাজিরের বোন জামাই এবং হারুনের পিতার নাম মৃত- শেখ হানিফ (শেখ মোহাম্মদ)। এবং শেখ নাজির এর পিতার নাম মৃত শেখ বশির আহমেদ (শেখ মোহাম্মদ)। অর্থাৎ এখানেই প্রতিয়মান হয় যে আর/এস রেকর্ড অনুযায়ী মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর পিতার নাম শেখ মোহাম্মদ হলেও তাদের পিতার নাম ভিন্ন ভিন্ন। 

 

আরো উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে শেখ নাজির এর এনআইডি কার্ডে তার পিতার নাম আসে মৃত শেখ- বশির আহমেদ। যা শেখ নাজির এর ক্রয় করা দলিলে স্পষ্ট লিখা আছে তার পিতার নাম মোহাম্মদ শেখ বশির।

 

🔻 রাজশাহী সিআইডি ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিস কর্তৃক সাফিনা বেগম ও তার সহোযোগীরা যেভাবে ভূমিদস্যু ও জালিয়াতি চক্র হিসেবে প্রমানিত

 

তফসীলভুক্ত সম্পত্তি থানা পবা, হাল বোয়ালিয়া, মৌজা পবা, জেএল নং- ৮১, মধ্যে, আরএস খতিয়ান নং-৩৩৩, আরএস দাগ নং- ১৫১১ রকম ভিটা পরিমান ০.৮৮১ একর। একই সম্পত্তির মালিক দাবিদার সাফিনা বেগমের ২২/০৪/১৯৭৫ ইং বিক্রয় কবলা ২১৪৩৬ নং দলিল সম্পর্কে যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে খারিজের বিষয়ে দেখা যায় যে, ২২৬৫- ৯/১/৯৯-২০০০ নং খারিজ কেশ মূলে সাফিনা বেগমের নামে খারিজ ছিল। 

 

কিন্তু পরবর্তীতে ৩০/১০/২০০৭ ইং তারিখে তর্কিত বিবিধ ২৯/ (XIII)/০৭-০৮ নং নামজারি কেস অনুযায়ী সাফিনা বেগমের খারিজ বাতিল হয়ে যায়। এছাড়াও সাফিনা বেগমের দলিল সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে অন্তর্ভুক্ত আছে কি না যাচাই করলে সংশ্লিষ্ট বালাম বহি পাওয়া যায় নাই। 

 

Complaint-and-press-conference-in-Rajshahi-defying-rotated
রাজশাহী ম্যাচ ফ্যাক্টরির মোড়ে ভূমি দখলের সাতকাহন

তবে ২১৪৩৬/১৯৭৫ নং দলিলের ছায়ালিপি যাচাই করে দেখা যায় উহাতে উল্লেখিত দলিল দাতা মোঃ শেখ হারুন ও শেখ নাজির এর টিপ নম্বর যথাক্রমে ২৬৮ ও ২৬৯। উক্ত টিপ নম্বরের সাথে CTI উল্লেখ নাই। দলিল রেজিষ্টেশন সংক্রান্ত বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী ২১৪৩৬ নং দলিলের দাতার টিপ নম্বর ২৬৮ বা ২৬৯ হওয়া সম্ভব নয় ।

 

সাফিনা বেগমের দলিল নং- ২১৪৩৬/৭৫ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, দলিল নং-২১৪৩৬, তাং ২২/০৪/১৯৭৫ ইং দলিলের প্রকৃতি বিক্রর কবলা যাহার গ্রহীতা মোসাঃ সাফিনা বেগম, জং-ইউনুস আলী, সাং-হেতেম খাঁ, থানা- বোয়ালিয়া, জেলা-রাজশাহী এবং দাতা (১) শেখ হারুন, (২) শেখ নাজির উভয় পিতা শেখ মোহাম্মদ, সাং- . লক্ষীপুর, থানা- বোয়ালিয়া, জেলা-রাজশাহী। বর্নিত দলিলে দাতাদ্বয়ের পিতা একই কিন্তু বাস্তবে তাহারা সহোদর ভাই নয় । শেখ নাজিরের ভগ্নিপতি শেখ হারুন, যাহার পিতার নাম মৃত শেখ হানিফ। শেখ হারুন ইতিপূর্বে মৃত্যুবরন করিয়াছেন, শেখ নাজির চাকুরী হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া নিজ বাড়ীতে অবস্থান করিতেছেন।

 

সাফিনা বেগমের দলিলে সাফিনা নিজে গ্রহীতা সেজে শেখ হারুন ও শেখ নাজিরকে দাতা সাজিয়ে মিথ্যা দলিল সৃষ্টি করেছেন যার বালাম বহি নং নেই। ফলে উক্ত বইও সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে পাওয়া যায় নাই। উক্ত দলিলে দাতাদের টিপ নম্বরও ভূয়া। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাফিনা জালিয়াত চক্রের সদস্য। 

 

আরো উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে, সাফিনা বেগম গত ২০১২ সালে আব্দুল বারির নামে একটি সিভিল মামলা দায়ের করেছিলেন এবং উক্ত মামলায় তার তৈরি দলিল সংযুক্ত করে। দলিল নং-২১৪৩৬, তাং ২২/০৪/১৯৭৫ ইং। এবং গত ২০১৩ সালে সাফিনা বেগমের বিরুদ্ধে আব্দুল বারির করা মামলায় সাফিনা বেগমের সহোযোগিরা ২০২২ সালে তাদের প্রমাণ স্বরূপ সাফিনা বেগমের নামের ২২/০৪/১৯৭৫ ইং তারিখের দলিল নং ২১৪৩৬ সংযুক্ত করে যা পূর্বের সাফিনা বেগমের করা মামলায় সংযুক্ত করা দলিলের ন্যায় তারিখ ও দলিল নং একই হলেও দুই মামলায় সংযুক্ত করা দুই দলিলে রয়েছে এক বিশাল পার্থক্য যার সামান্য কিছু ভুল নিম্নে  তুলে ধরা হলো :- 

১| ২টি দলিলে হাতের লিখা ২রকম।

২| ২টি দলিলে দাতাগনের  স্বাক্ষর ২ রকম।

৩| ২টি দলিলে সনাক্তকারী ভিন্ন ভিন্ন ২জন।

৪| ২টি দলিলে স্বাক্ষী ভিন্ন ভিন্ন। 

৫| ২টি দলিলে টিপসই ভিন্ন ভিন্ন।

 

অন্যদিকে রাজশাহী সিআইডি ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানা পুরো বিষয়টির তদন্তে নামে।  যাহার অভিযোগ নং ২৬৯ তারিখ: ০২/০৭/২০১৩।  তদন্তকারী অফিসার ছিলেন এস আই রাজিবুল ইসলাম, রাজপাড়া থানা,রাজশাহী ওএসআই আজিজুর রহমান, সিআইডি মতিহার ইউনিট,রাজশাহী। রাজশাহী সিআইডির স্মারক নং : সিএ/রাজঃ/সিআইডি/৩৩০-১৩/২৭২৫ এবং প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ২৪/১০/২০১৩।

 

🔻 আব্দুল বারি যেভাবে উল্লেখিত সম্পত্তির প্রকৃত মালিক 

তফসীলভুক্ত উপরেল্লিখিত সম্পত্তির পরিমান ০.৮৮১ একর।  সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে খারিজের বিষয়ে  অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আব্দুল বারি  কর্তৃক খাজনা খারিজ বাংলা ১৪২২ সাল পর্যন্ত পরিশোধ রয়েছে। আব্দুল বারির দলিল যাচাই সংক্রান্তে পর্যালোচনা কালে দেখা যায় যে, সদর সাব-রেজিষ্টার অফিসে, ০৯/১১/২০০৬ ইং ১২৫৪৪ নং দলিল খানা ২৮৭/২০০৬ নং বালাম বহিতে ২৪৬-২৫১ পাতায় অন্তর্ভূক্ত আছে। যার দাতার নাম ১) মোঃ নাজির আহমেদ, পিতা মৃত শেখ বশির(শেখ মোহাম্মদ) , ২) শেখ হারুন, পিতা মৃত শেখ হানিফ(শেখ মোহাম্মদ) , সাং-লক্ষিপুর, থানা-রাজপাড়া, রাজশাহী মহানগর। গ্রহীতার নাম ১) মোঃ আঃ বারী, পিতা তামসুদ্দিন, ২) সেলিনা বারী, কং, আঃ বারী, সাং-শিরইল, থানা- বোয়ালিয়া, রাজশাহী মহানগর। 

 

উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত উক্ত বিবাধমান সম্পত্তির পূর্নাঙ্গ ঘটনা প্রমান সহ প্রকাশিত হলো। পরবর্তী সংখ্যায় অর্থাৎ আগামী  ২৩/০১/২০২৩ তারিখে ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সার্বিক ঘটনা প্রকাশিত হবে।

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.