চীনা প্রযুক্তি যেভাবে ছাড়িয়ে যাচ্ছে আমেরিকাকে

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::- চীনা প্রযুক্তি মানেই স্বস্তা আর ঠুনকো – এমন ভাবার দিন শেষ। চীনা প্রযুক্তি এখন গোটা বিশ্বেই সমাদৃত। মুখের কথা নয়, এই কথাকে সমর্থন করছে পরিসংখ্যানও। ২০১৫ সালে চীন যে পরিমান বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের পেটেন্ট নিয়েছে সেটা বাকি বিশ্বের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ বেশি। আর এইসব সম্পদের জন্য চীন যে দাম পায় সেটা স্বয়ং আমেরিকার চেয়ে মাত্র এক শতাংশ কম। বাংলাদেশি বাজারে যে ওপ্পো, শাওমির ফোন পাওয়া যায়, সবই আসে চীন থেকে।

 

 

এর বড় একটা কারণ হল চীন বেশি জোর দিচ্ছে আর অ্যান্ড ডি-তে। আর অ্যান্ড ডি হল রিসার্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। ২০০০ এর পরবর্তী সময়ের দ্বিতীয় ভাগে চীন আর অ্যান্ড ডি নেয় কাজ শুরু করে। আর এক্ষেত্রে তাঁরা ২০১৬ সালে এসে ছাড়িয়ে যায় আমেরিকাকে।সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়, যেদিন চীনের প্রযুক্তিখাত ছাড়িয়ে যাবে আমেরিকাকে। চলতি বছরেই (২০১৮) সাঙহাইয়ের ইয়াঙজি নদীর তীর থেকৈ ৩০০ কিলোমিটার দূরের শহর নানজিঙয়ে তারা একটা রিসার্চ পার্ক গড়ে তুলেছে। বলা হচ্ছে, এটা চীনের আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তি জায়ান্টদের সহায়তা করবে। ২১৬ স্কয়ার কিলোমিটারের বিশাল এই জায়গায় ১২ টি হাই প্রোফাইল প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এক গাদা স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান কাজ করে।

 

 

চীনা সরকারের অন্দরমহলের খবর বলছে এই প্রযুক্তি পার্ক দিয়ে তাঁর আমেরিকার কিংবদন্তিতুল্য সিলিকন ভ্যালিকে টেক্কা দিতে চায়। বোঝাই যাচ্ছে চীনারা আক্ষরিক অর্থেই আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে চীনারা আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চীনা পণ্য ছড়িয়ে দিতে চায়। তাঁদের এই লক্ষ্যমাত্রার নাম ‘মেড ইন চানা ২০২৫’। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ৮৬৩ প্রোগ্রাম, ৯৭৩ প্রোগ্রাম ও ১৩ তম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনাসহ অনেকগুলো প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছে চীনা সরকার। শিক্ষাখাতে চীন সরকারের ব্যয় মোট বাজেটের ২০ শতাংশ। এটাও তাঁরা করেছে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করেই।

 

 

আমেরিকাকে ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে যাওয়ার আরেকটা বড় কারণ হল, চীনারা অনেক বেশি পরিশ্রমী।  চীনা টেক ফার্ম গুলোর কাজ শুরু হয় সকাল নয়টা থেকে। শেষ হয় রাত নয়টায়। কাজ করতে হয় সপ্তাহে ছয়দিন। সেলুলার প্রোগ্রাম সফটওয়্যার প্লাটফরম ‘বাটন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইক জ্যাকোনি তাই বলেন, ‘চীনের মানুষরা আমেরিকানদের চেয়ে কম সময়ে বেশি অর্থ সৃষ্টি করে।’

 

 

চীনাদের এই অনেক কাজের চাপ নেওয়াকে অনেকে হয়তো বাঁকা চোখে দেখবেন। সেটা মেনেই সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী মাইক মোরিজ বলেন, ‘চীনাদের এই মানসিকতা হয়তো পাশ্চাত্যের দুনিয়ার অস্বাস্থ্যকর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়তো। তবে, এখনকার বাস্তবতায় এটাই সত্যি যে, এসব করেই চীনা প্রযুক্তি আমাদের আমেরিকানদের সাম্রাজ্য দখল করতে চলেছে। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, তখন আমেরিকান প্রযুক্তিকে পুরনো মনে হতে শুরু হবে।’

 

 

চীনের বড় বড় শহর যেমন সাঙহাই, শেনজেন কিংবা বেইজিংয়ের বড় বড় মিটিং কিংবা কনফারেন্সগুলো হয় সন্ধ্যা ছয়টার পর। কারণ, চীনারা মনে করে, সকাল বেলায় নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। কখনো কখনো মিটিংগুলো ছুটির দিনেও হয়।

গুগল চায়নার সাবেক প্রেসিডেন্ট কাই ফু লি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই চীনারা আমেরিকানদের চেয়ে বেশি কর্মঠ। চীনারাই বরং আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গী দেখে অবাক হয়। একবার চীনের একটা দল গুগলের সদরদপ্তরে গেল, তখন সন্ধ্যা সাতটা। ওরা অবাক হয়ে দেখলো যে, পার্কিং লট একদম ফাঁকা।’

 

 

চীন যে গতিতে এগোচ্ছে সেটা ধরে রাখতে পারলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ইন্টারনেটের সংযোগ প্রতিমুহূর্তে আসবে ২০০ বিলিয়ন চীনা গ্যাজেট। আর এর পরিমানটা বিশ্বের মোট গ্যাজেটের পরিমানের ৯৫ ভাগ!


 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.