আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে দাঙার সৃষ্টি হয়। এর জেরে রবিবার দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি তাদের দলের মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও তার সহকর্মী নাভিন কুমার জিন্দালকে তাদের মন্তব্যের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে।ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে। এর আগে বিজেপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ‘ ভারতের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে প্রতিটি ধর্মই প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সব ধর্মকেই সম্মান জানায়। বিজেপি যেকোনো ধর্মের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অবমাননার তীব্র নিন্দা করে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিজেপি সেসব মতাদর্শের বিরুদ্ধে যা কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপমান বা হীন দৃষ্টিভঙ্গি ছড়ায়। বিজেপি এ ধরনের ব্যক্তি বা মতাদর্শকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না।’
ভারতের আলোচিত জ্ঞানবাপী মসজিদ ইস্যুতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন টকশোতে মহানবী (সা.) প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। এ ঘটনায় কানপুরের মুসলিমদের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হয়।এর জেরে গত শুক্রবারে কানপুরের একপক্ষ স্থানীয় বাজার বন্ধ করার আহ্বান জানালে অপরপক্ষ পাল্টা অবস্থান নেয়। এর পরে সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ২০ জন পুলিশ সদস্য। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে, মামলা দায়ের করেছে ১ হাজার ৫০০ লোকের বিরুদ্ধে।
এদিকে কাতার ও কুয়েতে ভারতের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে চিঠি দিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে দোহায় তলব করে তীব্র নিন্দা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে ভারত সরকারকে অবিলম্বে নিন্দা ও ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়। তাছাড়া নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এদিকে কূটনৈতিকভাবে তা মীমাংসার চেষ্টা করছে ভারতীয় দূতাবাসগুলো। কাতার ও কুয়েতে ভারতীয় দূতাবাসগুলো রাষ্ট্রদূতদের সূত্রে জানায়, টুইটগুলো কোনোভাবেই ভারত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না। তাছাড়া এ মন্তব্যকে ‘প্রান্তিক উপাদানের’ মতামত বলে আখ্যায়িত করা হয়।
গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, যেকোনো সম্প্রদায় বা ধর্মের অবমাননা বা সম্মানহানি করে এমন সব মতাদর্শের তীব্র বিরোধিতা করে দলটি। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপির এমন বিবৃতিকে ‘নির্লজ্জ ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এক টুইট বার্তায় লিখেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার মন্তব্যের পর সৌদি, বাহরাইনসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ’
এদিকে সৌদিভিত্তিক মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ভারতে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি নিয়মতান্ত্রিক তীব্র ঘৃণা ও দুর্ব্যবহার অনুশীলনের প্রেক্ষাপটে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। ’
মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা জানান গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) এর মহাসচিব নায়েফ ফালাহ আল হাজরাহ। এক বিবৃতিতে তিনি সব নবী-রাসুল এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও চিহ্নাবলির অবমাননা ঘটে এমন কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করেন। ধর্ম ও বিশ্বাসের অবমূল্যায়নে প্ররোচিত করে এমন কার্যকলাপ বন্ধে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের মন্তব্যকে ‘প্রকৃত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করে। তাতে আরো বলা হয়, এ ধরনের আচরণ পুরো বিশ্বকে ধ্বংসাত্মক সংকট ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করে।
International News Source & Ref : CNN। BBC। AL-Jazira। AP। NY TIMES
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.