নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহীতে শিশু স্যালাইন বানিজ্যের নেপথ্যে অসাধু দোকানী ও রিপ্রেজেনটেটিভদের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। এর কারন হিসেবে ক্রেতারা বলছেন কখন স্যালাইনের চাহিদা বাড়বে এবং কখন চাহিদা কমবে এই তথ্য শুধু এই ২ শ্রেনীর মানুষের কাছে থাকে। বিধায় অসাধু রিপ্রেজেনটেটিভরা স্যালাইন কিনে স্টোর করে তা পরে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করেই দাম বাড়াচ্ছে।
নাটোর থেকে আসা আব্দুল কাদের তার ৩ বছর শিশুকে আয়াতকে ভর্তি করেছেন শিশু ওয়ার্ডে। তিনি জানান তার বাচ্চা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু বেবিসল জুনিয়র অপসো স্যালাইন কিনতে যেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ১৪৫ টাকার আইভি স্যালাইন কিনেছেন ৫৮০ টাকায়।
কাটাখালী পৌরসভার মাজেদ তার ২ বছরের বাচ্চা মালিহাকে ভর্তি করেছেন একই কারনে। তিনিও তার বাচ্চার জন্য লক্ষিপুর এলাকা ঘুরে ঘুরে পেডিসল ডিএস আইভি স্যালাইন কিনেছেন ৭৫০ টাকায়। অথচ লাখ লক্ষিপুরের এক ফার্মেসী জানায় পপুলার কোম্পানির পেডিসল ডিএস স্যালাইনের দাম ১৪৫ টাকা।
তবে অধিকাংশই শিশু স্যালাইন ক্রেতাদের দাবি শিশু স্যালাইন বানিজ্যের নেপথ্যে অসাধু দোকানী ও অসাধু রিপ্রেজেনটেটিভ ছাড়া আর কেউ জড়িত নয়।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন শতাধিক আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে। প্রায় সবাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ডায়রিয়া আক্রান্ত কিছু শিশুও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২৪নং ওয়ার্ডে দেখা যায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ও স্বজনদের ভিড়ে ওয়ার্ডের ভেতরে এবং বারান্দায় পা ফেলার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় শিশু রোগীদের সারি করে শুইয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি শয্যায় ৪ থেকে ৬টি করে শিশু রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান, কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু বেশি আসছে। তাদের বয়স শূন্য থেকে দুই বছর বা আড়াই বছর। অধিকাংশের চিকিৎসায় এপিএন স্যালাইন-৫০০ বেশি দরকার হচ্ছে। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালে বেলি সল্ট জুনিয়র, বেলি সল্ট এ এপিএন স্যাল্যাইন সরবরাহ নেই। ডিএনএস স্যালাইনও নেই। দোকান থেকে অস্বাভাবিক বেশি দামে এসব স্যালাইন অভিভাবক ও স্বজনদের কিনতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূতে থেকে জানা যায়, শিশুদের প্রাণ রক্ষাকারী স্যালাইন ঘিরে রাজশাহীতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অভিভাবকদের জিম্মি করে স্যালাইনের দাম প্রায় ১০ গুণ ২০ গুন বাড়িয়েছে কতিপয় ওষুধ ব্যবসায়ীরা। তবে স্যালাইন প্রস্তুতকারী কোম্পানি গুলো দাম বাড়ায়নি।
রামেক হাসপাতালের এক শিশু চিকিৎসক বলেন, আবহাওয়া বদলের এ সময়ে শিশু ডেঙ্গু, চিকুন গুনিয়া, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় কতিপয় ওষুধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে স্যালাইন সহ ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তারা ১০০ টাকার স্যালাইন হাজার টাকায় বিক্রি করছে। এটা আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু কিছু করার নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ফাইসাল কবির চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি গুলো এখন পর্যন্ত স্যালাইনের দাম বাড়ায়নি। কোন ওষুধ বা স্যালাইনের দাম বাড়ালে সেটা গায়ে লেখা থাকত। কিন্তু খুচরা বাজারে এত চড়া মূল্য কেন, তা আমার জানা নেই। যারা এভাবে মানুষকে জিম্মি করে কয়েক গুণ দামে স্যালাইন ক্রেতাদের কিনতে বাধ্য করছে, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com