নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিবেদন :: সংবাদের গত পর্বে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উক্ত বিবাধমান সম্পত্তির পূর্নাঙ্গ ঘটনা প্রমান সহ প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তী সংখ্যায় ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সার্বিক ঘটনা আজ প্রকাশিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী সংবাদ ও সংবাদের লিংক নিম্নে দেয়া হলো ::
রাজশাহীতে আদালতের আদেশ অমান্য করে নালিশ ও সংবাদ সম্মেলন
রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও সেতুমন্ত্রীকে নিয়ে যুবলীগ নেতা হুদার কুরূচিপূর্ন স্ট্যাটাস
সাফিনা বেগমের দলিল জাল প্রমানে বিভিন্ন তথ্য বিবরন:
দলিল নং-২১৪৩৬, তাং ২২/০৪/১৯৭৫ ইং দলিলের প্রকৃতি বিক্রয় কবলা যাহার গ্রহীতা মোসাঃ সাফিনা বেগম,জং-ইউনুস আলী, সাং-হেতেমখাঁ,থানা-বোয়ালিয়া,জেলা-রাজশাহী এবং দাতা (১) শেখ হারুন, (২) শেখ নাজির উভয় পিতা শেখ মোহাম্মদ।
তথ্য- ১) ভলিওম বই যাচাই : সাফিনা বেগমের দলিল সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বহিতে অন্তর্ভুক্ত আছে কি না যাচাই করলে সংশ্লিষ্ট বালাম বহি পাওয়া যায় নাই।
তথ্য-২) ছায়ালিপি যাচাই : ২১৪৩৬/১৯৭৫ নং দলিল যাচাই করে দেখা যায় উহাতে উল্লেখিত দলিল দাতা মোঃ শেখ হারুন ও শেখ নাজির এর টিপ নম্বর যথাক্রমে ২৬৮ ও ২৬৯। উক্ত টিপ নম্বরের সাথে CTI উল্লেখ নাই। দলিল রেজিষ্টেশন সংক্রান্ত বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী ২১৪৩৬ নং দলিলের দাতার টিপ নম্বর ২৬৮ বা ২৬৯ হওয়া সম্ভব নয় । কারন ছায়ালিপি দলিল নং ২১৫১০/৭৫ যাচাই করে দেখা যায় এই দলিলে CTI নং- ১৪০৭৫,১৪০৭৬,১৪০৭৭ কিন্তু একই দিনের সাফিনার দলিলে এই নাম্বার যথাক্রমে ২৬৮,২৬৯ যা কোন ভাবেই হওয়া সম্ভব না।
তথ্য- ৩) সাব রেজিষ্টার ভিন্নতা : গত ২২/০৪/১৯৭৫ ইং তারিখে সাব রেজিষ্টার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন জনাব এম চৌধুরী ,কিন্তু সাফিনার রেজিষ্ট্রি করা একই দিনের দলিলে সাব রেজিষ্টার ভিন্ন ।
তথ্য-৪) সাফিনা কর্তৃক আ: বারীর নামে মিথ্যা মামলা ও মামলা খারিজ :
সাফিনা বেগম গত ২৭/০৯/২০১১ ইং তারিখে জেলা রাজশাহীর মূখ্য মহানগর হাকীমের আদালতে মো: আ: বারীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে, মামলা নং - ২৬৬পি/২০১১ এবং এই মামলায় অভিযোগ করে বলেন যে, আ: বারী আমাকে ভূমি সহকারী কমিশনার অফিস কর্তৃক নোটিশ গোপন করে আমার নামের ভূয়া টিপসই ব্যবহার করে আমার নামের করা খারিজ, ২২৬৫/৯-১/৯৯-২০০০ নং খারিজ কেস বাতিল করে তার নামে নতুন করে খারিজ করে নেয়। সাফিনার করা উক্ত মামলা আমলে নিয়ে আদালত গত ১৭/০৯/২০১২ ইং তারিখে সংশিষ্ট ভুমি সহকারী কমিশনার বরাবর একটি নোটিশ প্রদান করেন এবং উক্ত মামলায় বর্নিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিক কে তা তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। এই আদেশ বলে সহকারী ভূমি কমিশনার,ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কমিশনার কে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করলে, ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কমিশনার গত ২৫ /০২/২০১৩ ইং তারিখে সহকারী ভূমি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে যার স্মারক নং - ১৮৮,২০৬। ইউনিয়ন উপ ভূমি সহকারী কমিশনার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন যাচাই করে গত ১১/০৩/২০১৩ ইং তারিখে সহকারী ভূমি কমিশনার সম্পূর্ণ আ: বারীর অনুকুলে আদালত বরাবর প্রতিবেদনটি দাখিল করে, যার স্মারক নং -০০.৪৩.৮১০০.২২.০১১.০০৫.১২-৪০৬। আ: বারীর উপর সাফিনা বেগমের আনিত অভিযোগ মিথ্যা হওয়ায় আদালত গত ১৯/১১/২০১৪ ইং তারিখে উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
তথ্য-৫) সাফিনার বিরুদ্ধে সিআইডি কতৃক প্রতিবেদন দাখিল :
গত ০২/০৭/১৩ ইং তারিখে রাজশাহী সি এম এম আদালতে আঃ বারী কতৃক সাফিনার বিরুদ্ধে করা মামলা নং ২০পি/১৩(রাজপাড়া) এর তদন্ত ভার ন্যস্ত হয় রাজশাহী সি আই ডি বরাবর এবং সেই সময় সি আই ডি অফিসার সাফিনার বিরুদ্ধে উক্ত তফশিল বর্নিত সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে কোর্টে গত ২৭/১০/১৩ ইং তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করে । এবং বর্তমানে এই মামলা দুইজন আসামি মারা যাওয়ার কারনে ৭৪৭/১৩ নং মামলাটি কোর্ট কতৃক স্থগিত হয়ে যায় ।
তথ্য-৬) সাফিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় চার্জ গঠনে সাফিনার করা রিভিশন খারিজঃ-
গত ০২/০৭/১৩ ইং তারিখে রাজশাহী সি এম এম আদালতে আঃ বারী কতৃক সাফিনার বিরুদ্ধে করা মামলা নং ২০পি/১৩(রাজপাড়া) এর তদন্ত ভার ন্যস্ত হয় রাজশাহী সি আই ডি বরাবর এবং সেই সময় সি আই ডি অফিসার সাফিনার বিরুদ্ধে উক্ত তফশিল বর্নিত সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে কোর্টে গত ২৭/১০/১৩ ইং তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করে । উক্ত মামলায় গত ১৪/০১/১৬ ইং তারিখে চার্জ গঠন হলে, গত ০৫/০৪/১৬ ইং তারিখে সাফিনা বেগম ফৌঃ রিভিশন নং-৩৪/১৬ দাখিল করলে আদালত গত ১৫/১০/১৭ ইং তারিখে উক্ত রিভিশন নামঞ্জর করে খারিজ করে দেয় এবং গত ০৫/০৪/১৬ ইং তারিখের আদেশ বলবত করে আদেশ প্রদান করে।
তথ্য-৭) সাফিনা বেগমের দলিলের ভিন্নতা :
সাফিনা বেগম গত ২৭/০৯/২০১১ ইং তারিখে জেলা রাজশাহীর মূখ্য মহানগর হাকীমের আদালতে মো: আ: বারীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে, মামলা নং - ২৬৬পি/২০১১। এই মামলায় তার যে দলিলের কপি দিয়ে মামলা করে এবং আঃ বারী কতৃক সাফিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় যে দলিলের কপি সংযুক্ত করে দুইটা দলিল নং ও তারিখ একই থাকলেও অন্যান্য তথ্যে রয়েছে আকাশ জমিন পার্থক্য। নিম্নে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলোঃ- তার মামলায় সংযুক্ত করা দলিলে, দলিল লেখকের নাম আছে মোঃ আফসার উদ্দিন সরকার,মোকাম সাগরপাড়া, সাইন নং - ৭৯ । ইমাদী আছে দুইজন ১)আব্দুর রহমান, লক্ষিপুর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী।২) গোলাম রসুল,শালবাগান,বোয়ালিয়া রাজশাহী। অপর দিকে আঃ বারী কতৃক সাফিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় সাফিনার সংযুক্ত করা দলিলে , দলিল লেখকের নাম মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, দুর্গাপুর, সাইন নং- ২৬২। ইমাদি আছে দুইজন ১) মোঃ নুর ইসলাম, লক্ষিপুর, ২) উমর, পবা নতুন পাড়া।
মন্তব্যঃ-
সাফিনা বেগমের দলিল নং- ২১৪৩৬/৭৫ ও যাবতীয় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সাফিনা বেগম জাল দলিল করে তফশিল বর্নিত সম্পত্তি আত্নসাত করার ব্যার্থ চেষ্টা করছে। এছাড়াও দলিল নং-২১৪৩৬, তাং ২২/০৪/১৯৭৫ ইং দলিলের প্রকৃতি বিক্রর কবলা যাহার গ্রহীতা মোসাঃ সাফিনা বেগম, জং-ইউনুস আলী, সাং-হেতেম খাঁ, থানা- বোয়ালিয়া, জেলা-রাজশাহী এবং দাতা (১) শেখ হারুন, (২) শেখ নাজির উভয় পিতা শেখ মোহাম্মদ, সাং- লক্ষীপুর, থানা- বোয়ালিয়া, জেলা-রাজশাহী। বর্নিত দলিলে দাতাদ্বয়ের পিতা একই কিন্তু বাস্তবে তাহারা সহোদর ভাই নয় । শেখ নাজিরের ভগ্নিপতি শেখ হারুন, যাহার পিতার নাম মৃত শেখ হানিফ। শেখ হারুন ইতিপূর্বে মৃত্যুবরন করিয়াছেন, শেখ নাজির চাকুরী হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া নিজ বাড়ীতে অবস্থান করিতেছেন। সাফিনা বেগমের দলিলে সাফিনা নিজে গ্রহীতা সেজে শেখ হারুন ও শেখ নাজিরকে দাতা সাজিয়ে মিথ্যা দলিল তৈরী করেছেন যার বালাম বহি নং নেই। ফলে উক্ত বইও সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে পাওয়া যায় নাই। উক্ত দলিলে দাতাদের টিপ নম্বরও ভূয়া। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাফিনা জালিয়াত চক্রের সদস্য।
শেখ নাজির ও শেখ হারুনের পিতা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার যুক্তি খন্ডন:-
এখন প্রশ্ন হচ্ছে শেখ নাজির ও শেখ হারুন আপন ভাই না হলে তাদের বাবার নাম আর,এস রেকর্ডে শুধু শেখ মোহাম্মদ হলো কিভাবে?? তারা দুই ভাই না হয়েও তাদের পিতার নাম শেখ মোহাম্মদ হলো কিভাবে তা বিস্তারিত বর্ননা করা হলো:-
উপরুক্ত তফশিল বর্নিত সম্পত্তির 'সি,এস' রেকর্ড মূলে এই সম্পত্তির মালিক ছিলেন মোহিনী মোহন রায় চৌধুরী। পরবর্তী 'এস,এ'(১৫২) রেকর্ড প্রকাশিত হলে সেখানে মালিক হয় মোহিনী মোহন রায় চৌধুরীর জোষ্ট পুত্র মনিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী। কিন্তু মনীন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী আরও একজন ভাই ছিলেন তার নাম মেদিনী মোহন রায় চৌধুরী। অর্থাৎ তৎকালীন 'এস,এ'(১৫২) রেকর্ড অনুযায়ী তফশিল বর্নিত সম্পত্তির মালিক ছিলেন মনীন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী ও মেদিনী মোহন রায় চৌধুরী। এই রেকর্ডিও মালিক গনের থেকে ১৯৬২ সালে তফশিল বর্নিত সম্পত্তি গত ২১/৩/১৯৬২ ইং তারিখে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির ক্রয় সূত্রে মালিক হয়, যার দলিল নং- ৫৩৮২।
পরবর্তী ১৯৭২ তাদের নামে 'আর/এস' - রেকর্ড (৩৩৩) প্রকাশিত হয়। আর/এস - রেকর্ডে বর্নিত সম্পত্তির মালিক হিসেবে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর নাম থাকলেও তাদের পিতার নাম দেয়া আছে শুধু শেখ মোহাম্মদ। কিন্তু ২১/৩/১৯৬২ ইং তারিখের তাদের ক্রয়কৃত দলিল নং - ৫৩৮২ যাচাই করে দেখা যায় সেখানে মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর পিতার নাম আছে মোহাম্মদ শেখ বশির।
দলিল ও রেকর্ড অনুযায়ী হারুন ও শেখ নাজিরের আপন ভাই হলেও আসলে হারুন তার আপন ভাই নয়। হারুন মূলত নাজিরের বোন জামাই এবং হারুনের পিতার নাম মৃত- শেখ হানিফ (শেখ মোহাম্মদ)। এবং শেখ নাজির এর পিতার নাম মৃত শেখ বশির আহমেদ (শেখ মোহাম্মদ)। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তৎকালীন সময়ে শেখ হারুন, শেখ নাজিরের বাসায় আশ্রিত বা পালিত হিসেবে থেকে বড় হয় এবং সেই সময় শেখ নাজিরের পিতা শেখ মোহাম্মদ বশির, শেখ হারুনকে নিজের আরেক সন্তান বলে পরিচয় দেয়ায়, শেখ হারুন ও শেখ নাজির আপন দুইভাই হিসেবেই পরিচিতি পায়। এছাড়াও আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শেখ হারুনের পিতার নামও ছিল শেখ হানিফ ওরফে শেখ মোহাম্মদ।
যেহেতু দুইজনের পিতার নামেই শেখ মোহাম্মদ ছিল এবং তারা দুজন আপন ভাইয়ের পরিচয়ে বড় হয়েছিল এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালে তাদের ক্রয় কৃত সম্পত্তিতে তাদেরকে দুইভাই করে পিতার নামের জায়গায় শেখ মোহাম্মদ বশির লিখা হয়। এবং এই দলিলের উপর নির্ভর করেই তৎকালীন সময়ে তাদেরকে দুইভাই করে, পিতার নাম শুধু শেখ মোহাম্মদ দিয়ে 'আর,এস' রেকর্ড (৩৩৩) প্রচারিত বা প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এখানেই প্রতিয়মান হয় যে 'আর/এস'(৩৩৩) - রেকর্ড অনুযায়ী মোঃ হারুন ও শেখ নাজির এর পিতার নাম শেখ মোহাম্মদ হলেও তাদের পিতার নাম ভিন্ন ভিন্ন। আরো উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে শেখ নাজির এর এনআইডি কার্ডে তার পিতার নাম আসে মৃত শেখ- বশির আহমেদ। যা শেখ নাজির এর ক্রয় করা দলিলে স্পষ্ট লিখা আছে তার পিতার নাম মোহাম্মদ শেখ বশির।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com