কে ছিলেন আরতুগ্রুল গাজী

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

আরতুগ্রুল (আরতগুল তুর্কীদের উচ্চারন ) গাজী ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতা। বলা হয়ে থাকে তিনিই অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠা করে যান। তাই তাকে এখনও মুসলিম বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। আরতুগ্রুল আনুমানিক (১১৯১-১১৯৮) খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে আহালাত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-সুলেইমান শাহ, মাতা-হায়মা হাতুন।

আরতুগ্রুল (আরতগুল) গাজীকে ঐতিহাসিকরা শনাক্ত করেন প্রথম উসমানের সময়ের মুদ্রায় তার নাম দেখে। এই তথ্য ছাড়া ইতিহাসে তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তার নামের শেষে গাজী উপাধিটি মুসলমান যোদ্ধাদের দেওয়া হয় যারা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে।

আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন কায়ি গোত্রের একজন বীর দলপতি। কায়ি একটি অঘুজ তুর্কী বংশোদ্ভূত যাযাবর জাতী। এদের গোত্রের প্রধানের নাম ছিল সুলাইমান শাহ। এই গোত্রের লোকেরা ছিল নিষ্ঠাবান মুসলমান। সুলাইমান শাহের নেতৃত্বগুণে তার গোত্র ছাড়াও সেখানে অবস্থানকারী লোকেরা তার নেতৃত্বের ছায়াতলে আসতে লাগল। চেঙ্গিস খানের দস্যুতার কারণে সবাই তখন নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছিল। সুলাইমান শাহ তার জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং যাতে তারা কোনভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। অন্যদিকে খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের পতনের ফলে সুলাইমান শাহ খুব অল্প সময়ের মাঝেই অসংখ্য যোদ্ধা ও প্রচুর পরিমাণ যুদ্ধ সামগ্রী সংগ্রহ করতে সক্ষন হন।

চেঙ্গিস খান ৬২১ হিজরিতে (১২২৪ খ্রীঃ) সেলজুক সামাজ্য আক্রমণের জন্য এক বিরাট বাহিনী প্রেরণ করেন। কালের পরিক্রমায় সেলজুক সাম্রাজ্য তখন নিভু নিভু করছে। তখন সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজধানী কনিয়াতে সিংহাসনে ছিল সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ সেলজুকী।

এই সময়ই সুলাইমান শাহের নিকট খবর পৌছল যে, মঙ্গোলরা আলাউদ্দিন কায়কোবাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তখন এই খবরে তিনি মর্মাহত হলেন। মুসলমান সুলতানের জন্য তার যথেষ্ট সহানুভূতি ছিল। তাই তিনি সুলতান কায়কোবাদকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নিজ গোত্রকে রওয়ানা হতে বলেন।

এই সময়ই ঘটে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। সেলজুক ও মঙ্গোলেরা যখন যুদ্ধ করছিল তখন সেখানে যেয়ে উপস্থিত হয় সুলাইমান শাহের ছেলে আরতুগ্রুল গাজী। আরতুগ্রুল জানেন না যে কোন পক্ষ কারা। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে দুর্বল পক্ষের হয়ে তিনি যুদ্ধ করবেন। মঙ্গোল বাহিনী ছিল দুরন্ত ও দুর্ধর্ষ। তারা সহজেই “সেলজুক” বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলে। সৌভাগ্যক্রমে তাই তার এই সিদ্ধান্তও তার পক্ষে আসে। তার সাথে ৪৪৪ জন যোদ্ধা নিয়ে সে সেলজুকদের পক্ষে সিংহের মত যুদ্ধে নেমে পড়ে। তাদের বীরত্বের কাছে (আল্লাহর ইচ্ছাতে ) শেষ পর্যন্ত মঙ্গোলেরা টিকতে পারেনা। হারতে বসা এক যুদ্ধে এমন অভাবনীয় সাফল্যে সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ উল্লসিত আনন্দিত হয়ে আরতুগ্রুল গাজীকে আলিঙ্গন করে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান এবং সকলে আল্লাহর প্রশংসা করেন । ঠিক এমন সময়েই সুলাইমান শাহ তার বাহিনী নিয়ে সেখানে আসেন।

সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাদের দুজনকেই এই পুরস্কার স্বরূপ পরিদেয় দান করেন। তিনি খুশি হয়ে কায়ি গোত্রের জন্য আঙ্গোরা(বর্তমান আংকারা) কারাকা দাগের জায়গা বরাদ্দ করেন এবং সুলাইমান খানকে তার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করেন।

এখানে আলাউদ্দিন সালজুকীর তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও দূরদর্শিতার কথা স্বীকার করতেই হবে যে, তিনি আরতুগ্রুলকে সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ এলাকাটি ঠিক করেন। কনিয়া সাম্রাজ্য প্রথমে বেশ বড় ছিল। কিন্তু রোমান আর মঙ্গোলদের চাপে পড়ে কনিয়ার একেবারে ভগ্নদশা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এবং আয়তন ক্রমশ হ্রাস পেতে পেতে তা একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের আকার ধারণ করেছিল যার অস্তিত্ব যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারত।

কারাকা দাগের অবস্থান ছিল একেবারে রোমান সীমান্তে। ১২৫১ সালে আরতুগ্রুল নাইসিয়ান শহর থেবাসিওন জয় করেন। এর নতুন নামকরণ করা হয় সাগুত এবং এটি তার সাময়িক রাজধানী হয়। তার এই কৃতিত্বপূর্ণ কাজের পুরস্কারস্বরুপ সুলতান আলাউদ্দিন সালজুকী আরতুগ্রুলকে আরও কিছু এলাকা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে ১২৯৯ সালে তার সন্তান প্রথম উসমান কর্তৃক এখানেই অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠে। আরতুগ্রুল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠায় রোমানদের দিক থেকে আক্রমণের আশংকা লোপ পায়। কিছুদিন পরে পিতা সুলায়মান শাহ ফুরাত অতিক্রম কালে পানিতে ডুবে মারা যান।

অটোমান ঐতিহ্য অনুযায়ী পিতার পর তার যোগ্য সন্তানকেই গোত্রের দলপতি করা হত। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ীই ১২৩০ সালে আরতুগ্রুল এর পিতা সুলাইমান শাহের পর তাকেই গোত্রের দলপতি করা হয়।

এদিকে আরতুগ্রুল নিজ এলাকা শাসন করে যাচ্ছিলেন এবং নিজের রাজ্যের পরিধি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছিলেন। এভাবে আরতুগ্রুলের একটি উল্লেখযোগ্য রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ওদিকে মঙ্গোলদের ক্রমাগত আক্রমণ সেলজুক সুলতানকে ব্যতিব্যস্ত রাখে এবং শেষ অবধি ৬৪১ হিজরিতে মঙ্গোলরা কনিয়াকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করে। এতে অবশ্য আরতুগ্রুল কিছু হল না। কারণ তিনি ছিলেন মঙ্গোলদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মঙ্গোলরা এশিয়া মাইনরের এই ছোট ছোট রাজ্যগুলোর ব্যাপারে কোনরূপ নাক না গলিয়ে তাদেরকে তাদের মত থাকতে দেয়। ৬৩৪ হিজরি (১২৩৬-৩৭ খ্রীঃ) আলাউদ্দিন কায়কোবাদ মারা গেলে তার পুত্র গিয়াসুদ্দীন কায়খসরু কনিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন।

আরতুগ্রুল গাজীর বিবাহ হয় সেলজুক সাম্রাজ্যের শাহজাদা নোমানের কন্যা হালিমা খাতুনের সাথে। ৬৫৭ হিজরিতে আরতুগ্রুলের একটি পুত্র সন্তান হয় তার নাম রাখা হয় উসমান খান। উনারই নামানুসারে তুর্কি বাদশাদের উসমানীয় সুলতান বা অটোমান সুলতান বলা হয়ে থাকে। ১২৮৭ সালে আরতুগ্রুল গাজী মারা যায়। তখন উসমান খানের বয়স ছিল ত্রিশ বছর। তখন সেলজুক সুলতান, আরতগ্রুলের পর উসমান খানকেই তার স্থলাভিষিক্ত করেন।

উসমানীয় তথা অটোমান সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসাবে তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও বীরত্ব-গাথা জীবনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। তাই তাকে এই সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়। সংগৃহিত

বর্তমানে আরতাগুল গাজী নামে একটা সিরিজ চলছে যা তুর্কীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে । তারা নতুন করে আবার উসমানিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক এমন স্কলারদের ধারণা । তাই তারা তুর্কী ও বিশ্বের মুসলিমদে এক হওয়ার বার্তা দেওয়ার জন্য পুর্বপুরুষদের বীরত্ব নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরছে । এই নাটকের প্রতি অসংখ্য মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে কিছু সঠিক ইতিহাসের বিকৃতি হয়েছে ।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.