ভারতের মুম্বাই পুলিশের সিআইডির হেড কনস্টেবল ইব্রাহিম কাসকারের ছেলে দাউদ ইব্রাহিমের জন্ম ১৯৫৫ সালে দোংরি জেলার মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দাউদের অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়েন।মুম্বাই রেলস্টেশনে এক ব্যক্তি টাকা গোনার সময় তা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেন দাউদ।
এ খবর ইব্রাহিম কাসকারের কানে পৌঁছলে ছেলেকে ব্যাপক মারধর করেন তিনি। কারণ ব্যক্তিগতভাবে খুবই সৎ জীবন-যাপন করতেন ইব্রাহিম। বাবার কড়া শাসন, মারধর কোনো কিছুই দাউদ ইব্রাহিমকে অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে ফেরাতে পারেনি। ৮০ দশকের শুরুর দিকে ১৮/১৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের আরেক বিখ্যাত ডন করিম লালার হয়ে কাজ শুরু করেন দাউদ। তবে অনেকে বলে থাকেন করিম নয় বরং হাজী মাস্তানের দলে কাজ করতেন দাউদ।
মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক বেতাজ বাদশা ছিলেন হাজী মাস্তান মির্জা। সর্বপ্রথম হাজী মাস্তান ভারতে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের টিম তৈরী করেন বিগত শতাব্দীতে। অবশ্য ভারত ইতিমধ্যে হাজী মাস্তান মির্জাকে নিয়ে বলিউডে ডজন খানেক সিনেমা নির্মান করেছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বাস্তবিক চরিত্র ফুটে উঠেছে " Once Upon Time in Mumbai " নামক একটি হিন্দি সিনেমায়। সেখানে হাজী মাস্তানের চরিত্রে অভিনয় করেন ফিল্ম স্টার অজয় দেবগান। এছাড়াও বলিউড কিং শাহরুখ খান অভিনিত 'রইস' সিনেমাটিতেও হাজী মাস্তানের বাস্তবিক চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন। এই সিনেমায় হাজী মাস্তানের দেয়া একটি উক্তি যোগ করেন শাহরুখ খান - Koi dhanda chota nahi hota aur dhande se bada koi dharam nahi hota.দাউদ ইব্রাহিম আজীবন রহস্যই হয়ে থেকে গেলেন। আর এই রহস্য নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহলও অনেক। আর সেই কারণেই এই কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে নিয়ে বলিউডে একাধিক ছবি তৈরি করেছেন পরিচালকরা-কোম্পানি (২০০২), ডি (২০০৫), ব্ল্যাক ফ্রাইডে (২০০৭), শুটআউট অ্যাট লোখ-ওয়ালা (২০০৭), ডি ডে (২০১৩) প্রভৃতি।
[caption id="attachment_113676" align="alignleft" width="210"] গডফাদারদের গডফাদার আব্বাস মাস্তান[/caption]
সে যাই হোক পরবর্তীতে একসময় দাউদ হাজী মাস্তানের গ্রুপ থেকেই পৃথক হয়ে যান। এর আগে অবশ্য বড় ভাই শাবির ইব্রাহিমের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেছিলেন দাউদ।
ওই সময় দোরিং এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল বাসু দাদা। শাবির-দাউদ মিলে বাসু দাদা গ্রুপকে ঠেকাতে তখন ইয়ং কোম্পানি নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন, যা পরে ডি-কোম্পানি নামে পরিচিত পায়। এই ডি- কোম্পানি পরে দাউদ ইব্রাহিমের পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র গড়ে ওঠে।
হত্যা, গুম, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, হুন্ডি ব্যবসা সবই নিয়ন্ত্রণ করে এই ডি কোম্পানি। নানা সময়ে সংঘটিত অপরাধের জন্য ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় এবং মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিশ্বের শীর্ষ পলাতক অপরাধীদের ২০১১ এর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
২০০৮ সালেও তিনি ফোর্বসের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন। এ ছাড়া ভারতীয় পুলিশের পলাতক অপরাধীদের তালিকায়ও তার নাম শীর্ষে। দাউদ ইব্রাহিমের দলে প্রায় ৫ হাজার সদস্য রয়েছে, যারা মাদক চোরাচালান থেকে শুরু করে খুন, অপহরণের মতো কাজ করে থাকে।
ছোটা শাকিলকে দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত হিসেবে ধরা হয়। তাদের কর্মক্ষেত্র ভারত, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ১৯৯৩ সালে ১২ মার্চ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে এক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে ২৫৭ জন লোক নিহত হয়। এর জন্যও দাউদ ইব্রাহিমকে অভিযুক্ত করা হয়। ২১ মার্চ ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট এক নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে এই বোমা হামলায় দাউদ ইব্রাহিম সরাসরি জড়িত ও তিনি পাকিস্তানে আত্মগোপন করে আছেন। যদিও পাকিস্তান সরকার ভারতের এই দাবি বারবার অস্বীকার করে আসছে।
আরো জানা যায়, দাউদ ইব্রাহিমের চারটি পাসপোর্ট আছে। যার মধ্যে একটি ১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই করাচি থেকে ইস্যু করা হয়। এই পাসপোর্টে দাউদের তখনকার সাম্প্রতিক ছবি ছিল। পাসপোর্টের নম্বর ছিল প২৬৭১৮৫। বাকি তিনটি ইয়েমেন, আবুধাবি ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইস্যু করা হয়েছিল।
দাউদের পরিবার সম্পর্কে আগ্রহ সবারই। আর গোয়েন্দাদের খবর অনুযায়ী করাচিতে দাউদের সঙ্গে তার স্ত্রী মেহজাবিন থাকেন। একমাত্র ছেলে মইন নওয়াজও সেখানে থাকেন। এ ছাড়া দাউদের দুই মেয়ে রয়েছেন মাহরুখ ও মাহরীন। তৃতীয় কন্যা মারিয়া ১৯৯৮ সালে মারা যান। মাহরুখের স্বামী জুনেদ ও মাহরীনের স্বামীর নাম আইয়ুব। মইনের স্ত্রী সানিয়াও পাকিস্তানেই থাকেন।
[caption id="attachment_113678" align="alignleft" width="461"] Hasina_Parker[/caption]
আন্ডারওয়ার্ল্ডের বহু ছবিতে দাউদের চরিত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি দাউদের বোন হাসিনাকে নিয়েও নির্মিত হয়েছে বলিউড সিনেমা হাসিনা পার্কার । এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রদ্ধা কাপুর। পলাতক মাফিয়াদের বোন এবং একসময় মুম্বাইয়ের আন্ডার ওয়ার্ল্ড শাসন করা মাফিয়া রানী হিসেবে খ্যাতি পান হাসিনা পার্কার ' Hasina Parker'।
https://m.youtube.com/watch?v=tKqo-4qAeJA
ভারতের মুম্বাইয়ের নাগপাড়া এলাকায় যিনি সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘আপা’ সম্বোধনে এবং এই নাম মুখে নিতে গিয়ে সবাই প্রায় কেঁপে উঠতেন। চার দশকজুড়ে যুবতী থেকে চার সন্তানের মা এবং সেখান থেকে আবার একজন গডমাদার হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে নাগপাড়ার এই নারীর গল্প। মুম্বাইবাসী একবারের জন্যই পরিচিত হয়েছিল এই আপার সঙ্গে, এরপর সেখানে আর কোনো গডমাদারের জন্ম হয়নি। এখানে বসেই দাউদ ইব্রাহিমের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে গেছেন এই নারী।
বহু বছর ধরে অস্বীকার করে আসার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সরকার স্বীকার করেছে নিয়েছে দেশটির করাচি শহরে বসবাস করেছে ১৯৯৩ সালে ভারতের মুম্বাই হামলার প্রধান অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিম। সন্ত্রাসবাদে সহায়তার অভিযোগে ৮৮টি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে এই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের নাম। শনিবার পাকিস্তান সরকার এই তালিকা প্রকাশ করেছে। ভারতের সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে পাকিস্তান সরকারের প্রকাশিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় দাউদ ইব্রাহিমের ঠিকানা দেখানো হয়েছে করাচির ক্লিফটন অঞ্চলে সৌদি মসজিদের কাছে অবস্থিত হোয়াইট হাউস নামের একটি বাড়ি।
https://m.youtube.com/watch?v=tKqo-4qAeJA
দাউদের বোন হাসিনাকে নিয়েও নির্মিত হয়েছে বলিউড সিনেমা হাসিনা পার্কার
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com