Akhi-murder-by-tony-in-rajshahi
রাজশাহী মহানগরীতে গৃহবধূ আঁখির মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

রাজশাহী মহানগরীতে গৃহবধূ আঁখির মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

রমজান আলীউত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::  আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। কেবল সময় আর কালের চক্রে নতুন নতুন ধরন ও মাত্রা যোগ হচ্ছে মাত্র। বউ পিটানো আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের নতুন কোনো ঘটনা নয়। সমাজের উচ্চস্তর থেকে সর্বনিম্নস্তর পর্যন্ত এই নির্যাতন ঘটে থাকে নিরন্তর। সংসারের এই মারধর ও পিটুনি অনেক সময় হত্যাকান্ডে গড়ায়। তদ্রুপ রাজশাহী কাঠাঁলবাড়িয়া এলাকার মাহজুবা খাতুন আখিঁর সাথে প্রায় ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয় একই এলাকার ডিস লাইন কর্মচারী আতিকুল ইসলাম টনির। 

 

বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে মাহজুবা খাতুন আখিঁকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করত স্বামী আতিকুল ইসলাম টনি।তবে যৌতুকের জন্য স্বামী আতিকুল ইসলাম টনিসহ টনির বাবা বাদশা ড্রাইভার ও টনির মা পলি খাতুন। কিন্তু গত ১৫/০৫/২০২৩ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১১.৪৫ মিনিটের দিকে স্বামী আতিকুল ইসলাম টনি আখিঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এসময় আখিঁর কান্নার শব্দে এলাকাবাসীর অনেকেই খোঁজ নিতে যান আতিকুল ইসলাম টনির বাসায়। এসময় এলাকাবাসীর মধ্যে ৩/৪ নারী ও বৃদ্ধ টনির বাসায় গেলে টনি তাদের জানায়- চাচা কিছু হয়নি আমাদের বাসায়, আখিঁকে একটু শাষন করছিলাম এই আর কি। এসময় এলাকাবাসী টনির কথা শুনে সকলেই নিজ বাড়ি বাড়ি চলে যান।

 

কিন্তু রাত আনুমানিক ২.২০ মিনিটের দিকে একই এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাধে টনির বাবা ও মা আখিঁর বাবা আরসাদ আলীকে জানায় – আপনার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তাই টনি আপনার মেয়ে আখিঁকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছে। আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি আপনি আখিঁর মাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চলে আসেন। 

 

এরই ২০/৩০ মিনিটের মধ্যে আখিঁর বাবা ও মা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যেয়ে দেখেন তার মেয়ে আখিঁর লাশ ষ্ট্রেচারে পড়ে আছে। উক্ত সময় কর্তব্যরত মেডিক্যালের স্টাফ, নার্স ও ইন্টার্নি ডাক্তাররা জানান – এই মহিলাকে কে বা কাহারা মৃত অবস্থায় রেখে গেছেন তা আমরা জানিনা। এসময় আঁখির বাবা ও মা তাদের জামাই টনিকে  ও টনির বাবা মাকে খুঁজতে গেলে তাদের না পেয়ে বুঝতে পারেন তারা কেউই হাসপাতালে নেই এবং  এও বুঝতে পারেন তারা হয়তো পালিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে পুলিশ আসলে আখিঁর লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়। তবে আখিঁর মৃত্যু  ঠিক কি কারনে হয়েছে এবং কেনইবা আখিঁর স্বামী টনিসহ টনির বাবা মা পালিয়ে গেছে তা এখনও জানা যায়নি। সেই সাথে টনির বাসাতেও পুলিশ গিয়ে দেখে টনিদের বাড়ি তালা বন্ধ। 

 

অন্যদিকে রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করতে যান মৃত আখিঁর বাবা আরসাদ আলী। যাহার মামলা নং ১৩ এবং তারিখ ১৫/০৫/২০২৩ ইং। ধারা ৩০৪/৩০৬ পেনাল কোড ১৮৬০ দণ্ডবিধি। (The Penal code,1860) 

 

কিন্তু এজাহার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে – এজাহারে কিভাবে মৃত আখিঁর বাবা আরসাদ আলী তার মেয়ের মৃত্যুকে কিভাবে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসার আগে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করতে পারেন। অন্যদিকে সুশীল সমাজের প্রশ্ন  এজাহার ও সুরতহাল রিপোর্ট ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছে। কেননা সুরতহাল রিপোর্টে মৃত আখিঁর শরীরের বিভিন্ন জখম দেখা গেছে এছাড়াও আত্মহত্যার এভিডেন্স সম্পর্কে সুরতহাল রিপোর্টেও আত্মহত্যার কারন বলা হয়নি।

 

তবে আসামীদের পলায়ন প্রাথমিকভাবে প্রমান করে তারা অপরাধী। কেননা এলাকাবাসীর মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন – আখিঁকে তার স্বামী টনি ও শ্বাসুড়ী প্রায়ই নির্যাতন চালাতো।

 

অন্যদিকে গৃহবধূ আঁখি হত্যার ঘটনায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তসের।

 

উক্ত বিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেন – রাজশাহী মহানগরী শিক্ষা নগরী। আর এই নগরীতে নারী নির্যাতন এখন হত্যায় পরিণত হয়েছে।আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।সেই সাথে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।


 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.